০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাড়াশে জলাবদ্ধতায় তিন হাজার বিঘা ফসলী জমি

আশরাফুল ইসলাম রনি, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ পুকুর খননে প্রায় ছয় বছর যাবত জলাবদ্ধতায় তিন থেকে চার ফসলী জমি গুলো বছরে সাত আট মাস পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে ওই ফসলী মাঠে রোপা আমন ধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, উপজেলার মাধবপুর, বোয়ালিয়া, সরাপপুর, ঝুরঝুরী, ভিকমপুর, জাহাঙ্গীরগাঁতী, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া, শ্রী কৃষ্ণপুর, সান্তানসহ দশ-বারোটি গ্রামের আশে পাশের এ জমি গুলোর মাটি ছিল খুব উর্ব্বর। যেখানে ভাদ্র মাসে এ এলাকার জমিতে পানি থাকে না। সেখানে মধ্য কার্তিক মাসেও শত শত বিঘা জমিতে পানি আটকে আছে। আগাছায় ভরে আছে ফসলী মাঠ। কোন ফসলের আবাদ চোখে পড়ে না। শুধু মাত্র বোরো মৌসুমে একটি ফসলের আবাদ হয়। তাও পানি নামতে দেরি হওয়ায় নাবী আবাদের হওয়ায় ফলনও ভাল হয় না। আর বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্ট ভয়াবহ জলাবদ্ধতার নিরসন না হলে কৃষক পরিবার গুলোতে ভাত জুটবে না।

উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক মো. মুনসুর আলী বলেন, এক দশক পূর্বেও এ সকল জমিতে সরিষার আবাদ তুলে আলুর আবাদ করতাম। আবার আলু তুলে ধানের চাষ। এ ভাবে পর্য্যায়ক্রমে কমপক্ষে তিনটি আবাদ হতো। কিন্তু সর্বনাশা পুকুর খননের কারনে এখন ফসলী জমি গুলো খন্ড খন্ড বিলে রুপ নিয়েছে। যেখানে পানি নামার পথ নেই। তাই একটির বেশি আবাদও হচ্ছে না। আর এ ভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলেরর কৃষকদের আর্থিক মেরুদন্ড বলতে কিছু থাকবে না।

কৃষকেরা জানান, এ সকল জমিতে সরিষা, গম, আলু, ধান, পাটসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ঘরে তুলতেন এ এলাকার শত শত কৃষক। এতে করে তাঁদের সংসারে অনন্ত ডাল ভাতের অভাব ছিল না। অথচ অতি উর্ব্বর এ সকল ফসলী জমিতে ধানের চেয়ে মাছ চাষে অধিক লাভ হয় এ ধরনের লোভে প্রায় আট দশ বছর পূর্বে কিছু কৃষক অবৈধ ভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এ অঞ্চলে পুকুর খনন শুরু করেন। আর এরইমধ্যে এ পাঁচ-ছয়টি গ্রাম এলাকায় তিন ফসলী জমিতে খনন করা পুকুরের সংখ্যা প্রায় চার শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এতে আবাদি জমি কমার সাথে সাথে খাদ্য শস্যের উৎপাদনও কমছে।

তাড়াশ সদর ইউপি সদস্য মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার কমপক্ষে পানি প্রবাহের জন্য সরকারি অর্থায়নে করা ১০ থেকে ১২ টি ব্রীজ কালর্ভাটের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ফসলী জমির পানি বের হতে না পেরে স্থায়ী ভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার মাশুল দিচ্ছেন এ অঞ্চলের নিরিহ খেঁটে খাওয়া কৃষকেরা।

তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র অবৈধ পুকুর খননের কারণে আমাদের পূর্ব তাড়াশের ৫টি গ্রাম এক বুক পানির নিচে হাজার-হাজার বিঘা উর্বর আবাদি জমি বন্যার পানিতেই তলিয়ে আছে। এসব জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে আগামী রবি শস্য ও বোরো চাস-আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। তাড়াশ উপজেলা কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকায় জলাব্ধতা নিরসনে মানববন্ধন, কৃষক সমাবেশ সবই হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসি খাল খননের উদ্দ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু কেউ খাল খননের জমি দিতে চায় না। তারপরও আমি এ অঞ্চলের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন পুকুর খনন বন্ধ না করলে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব না হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, পুকুর খনন তাড়াশ উপজেলায় একটি বড় সমস্যা। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ বছরে আমি দায়িত্বে নেওয়ার পর পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে এক বছর করে জেল দিয়েছি। আর পুকুর খননের ফলে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে তা সরেজমিনে গিয়ে দেখে নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৭:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
৭৫ জন দেখেছেন

তাড়াশে জলাবদ্ধতায় তিন হাজার বিঘা ফসলী জমি

আপডেট : ০৭:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ পুকুর খননে প্রায় ছয় বছর যাবত জলাবদ্ধতায় তিন থেকে চার ফসলী জমি গুলো বছরে সাত আট মাস পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে ওই ফসলী মাঠে রোপা আমন ধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, উপজেলার মাধবপুর, বোয়ালিয়া, সরাপপুর, ঝুরঝুরী, ভিকমপুর, জাহাঙ্গীরগাঁতী, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া, শ্রী কৃষ্ণপুর, সান্তানসহ দশ-বারোটি গ্রামের আশে পাশের এ জমি গুলোর মাটি ছিল খুব উর্ব্বর। যেখানে ভাদ্র মাসে এ এলাকার জমিতে পানি থাকে না। সেখানে মধ্য কার্তিক মাসেও শত শত বিঘা জমিতে পানি আটকে আছে। আগাছায় ভরে আছে ফসলী মাঠ। কোন ফসলের আবাদ চোখে পড়ে না। শুধু মাত্র বোরো মৌসুমে একটি ফসলের আবাদ হয়। তাও পানি নামতে দেরি হওয়ায় নাবী আবাদের হওয়ায় ফলনও ভাল হয় না। আর বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্ট ভয়াবহ জলাবদ্ধতার নিরসন না হলে কৃষক পরিবার গুলোতে ভাত জুটবে না।

উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক মো. মুনসুর আলী বলেন, এক দশক পূর্বেও এ সকল জমিতে সরিষার আবাদ তুলে আলুর আবাদ করতাম। আবার আলু তুলে ধানের চাষ। এ ভাবে পর্য্যায়ক্রমে কমপক্ষে তিনটি আবাদ হতো। কিন্তু সর্বনাশা পুকুর খননের কারনে এখন ফসলী জমি গুলো খন্ড খন্ড বিলে রুপ নিয়েছে। যেখানে পানি নামার পথ নেই। তাই একটির বেশি আবাদও হচ্ছে না। আর এ ভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলেরর কৃষকদের আর্থিক মেরুদন্ড বলতে কিছু থাকবে না।

কৃষকেরা জানান, এ সকল জমিতে সরিষা, গম, আলু, ধান, পাটসহ বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ঘরে তুলতেন এ এলাকার শত শত কৃষক। এতে করে তাঁদের সংসারে অনন্ত ডাল ভাতের অভাব ছিল না। অথচ অতি উর্ব্বর এ সকল ফসলী জমিতে ধানের চেয়ে মাছ চাষে অধিক লাভ হয় এ ধরনের লোভে প্রায় আট দশ বছর পূর্বে কিছু কৃষক অবৈধ ভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এ অঞ্চলে পুকুর খনন শুরু করেন। আর এরইমধ্যে এ পাঁচ-ছয়টি গ্রাম এলাকায় তিন ফসলী জমিতে খনন করা পুকুরের সংখ্যা প্রায় চার শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এতে আবাদি জমি কমার সাথে সাথে খাদ্য শস্যের উৎপাদনও কমছে।

তাড়াশ সদর ইউপি সদস্য মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, যত্রতত্র পুকুর খননে এ এলাকার কমপক্ষে পানি প্রবাহের জন্য সরকারি অর্থায়নে করা ১০ থেকে ১২ টি ব্রীজ কালর্ভাটের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ফসলী জমির পানি বের হতে না পেরে স্থায়ী ভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। যার মাশুল দিচ্ছেন এ অঞ্চলের নিরিহ খেঁটে খাওয়া কৃষকেরা।

তাড়াশ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহ রেজা সেতার বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র অবৈধ পুকুর খননের কারণে আমাদের পূর্ব তাড়াশের ৫টি গ্রাম এক বুক পানির নিচে হাজার-হাজার বিঘা উর্বর আবাদি জমি বন্যার পানিতেই তলিয়ে আছে। এসব জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে আগামী রবি শস্য ও বোরো চাস-আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। তাড়াশ উপজেলা কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকায় জলাব্ধতা নিরসনে মানববন্ধন, কৃষক সমাবেশ সবই হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসি খাল খননের উদ্দ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু কেউ খাল খননের জমি দিতে চায় না। তারপরও আমি এ অঞ্চলের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমির ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন পুকুর খনন বন্ধ না করলে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব না হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, পুকুর খনন তাড়াশ উপজেলায় একটি বড় সমস্যা। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ বছরে আমি দায়িত্বে নেওয়ার পর পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে এক বছর করে জেল দিয়েছি। আর পুকুর খননের ফলে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে তা সরেজমিনে গিয়ে দেখে নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাখ//এস