০১:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি, একই নিরীক্ষককে দিয়ে ১২ বছর ধরে প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস টানা ১২ বছর বিএসইসির আইন লঙ্ঘন করে একই নিরীক্ষককে দিয়ে করিয়েছে আর্থিক প্রতিবেদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ার কারসাজি করতে এমন কাজ করেছে কোম্পানিটি। এজন্য শুধু তলব নয়, নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ তাদের।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে একটি কোম্পানিকে বছরে চারবার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। যা কোম্পানি ভেদে জুলাই থেকে জুন অর্থবছর বা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর হিসাব বছরের হয়ে থাকে। প্রথম ৩ প্রান্তিকে কোম্পানি অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর সবশেষ চতুর্থ বা বার্ষিক প্রতিবেদন একটি নিরীক্ষা ফার্ম দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন অডিটর দিয়ে একটানা সর্বোচ্চ তিনবার নিরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

আর যদি কোনো কোম্পানি ৩ বছর পরও একই অডিটরকে নিয়োগ দেয়, সেখানে কারসাজির সুযোগ তৈরি হয়। এতে অডিটরের মাধ্যমে সম্পদ, ব্যবসা ও মুনাফা অতিরিক্ত বেশি বা কম দেখিয়ে কোম্পানি শেয়ারের দামে কারসাজি করে থাকে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারী। যে কারণে মাঝে মধ্যেই কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

এই কাজ গত ১২ বছর ধরে করছে বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানি দুটি ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত একই অডিটর দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করিয়েছে। এই সময়ে তাদের শেয়ারের দরও অনেক বেশি বাড়তে ও কমতে দেখা যায়।

কোম্পানিটি বলছে, অডিটর নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসির প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রিট করে তারা। আদালত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলেও অডিটর নিয়োগ দিয়েছে তারা।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সচিব মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘ব্যাখ্যা এখনো জমা দেয়া হয়নি। একটা সময় আছে। আমরা সময়ের মধ্যে জমা দিয়ে দিবো।’

বেক্সিমকোর কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ করে আসছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যান্য খাতের সাথে পুঁজিবাজার সংস্কার শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে বেক্সিমকোর শেয়ারে কারসাজির দায়ে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। আর এবার কারসাজি করে শেয়ারের দাম কমানো ও বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বোর্ডের মাধ্যমে অডিপ অ্যাপ্রুভাল হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো পর পর ৩ বছর করতে পারে। এরপর আবার বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এই বিষয়টা বিচারাধীন। এখনো একটা কোম্পানি রয়েছে।’

এদিকে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানির সাথে জড়িত নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।

অর্থনীতিবিদ ড. শহিদুল জাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন অডিট ফার্ম ইতিপূর্বে কোম্পানিগুলোর সাথে যোগসাজশ করে ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টে ফুলে ফাপিয়ে দেখানোর জন্য শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।’

বিগত ১২ বছরে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর বিশেষ নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এতে কোম্পানিগুলো ব্যবসা ও সম্পদ কতটা বেশি দেখিয়েছে এবং বতর্মানে সেগুলোর আসল চিত্র উঠে আসবে বলে জানান তারা।

Tag :

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৯:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
৫৬ জন দেখেছেন

বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি, একই নিরীক্ষককে দিয়ে ১২ বছর ধরে প্রতিবেদন

আপডেট : ০৯:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস টানা ১২ বছর বিএসইসির আইন লঙ্ঘন করে একই নিরীক্ষককে দিয়ে করিয়েছে আর্থিক প্রতিবেদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ার কারসাজি করতে এমন কাজ করেছে কোম্পানিটি। এজন্য শুধু তলব নয়, নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ তাদের।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে একটি কোম্পানিকে বছরে চারবার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। যা কোম্পানি ভেদে জুলাই থেকে জুন অর্থবছর বা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর হিসাব বছরের হয়ে থাকে। প্রথম ৩ প্রান্তিকে কোম্পানি অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর সবশেষ চতুর্থ বা বার্ষিক প্রতিবেদন একটি নিরীক্ষা ফার্ম দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন অডিটর দিয়ে একটানা সর্বোচ্চ তিনবার নিরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

আর যদি কোনো কোম্পানি ৩ বছর পরও একই অডিটরকে নিয়োগ দেয়, সেখানে কারসাজির সুযোগ তৈরি হয়। এতে অডিটরের মাধ্যমে সম্পদ, ব্যবসা ও মুনাফা অতিরিক্ত বেশি বা কম দেখিয়ে কোম্পানি শেয়ারের দামে কারসাজি করে থাকে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারী। যে কারণে মাঝে মধ্যেই কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে বিএসইসিকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

এই কাজ গত ১২ বছর ধরে করছে বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানি দুটি ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত একই অডিটর দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করিয়েছে। এই সময়ে তাদের শেয়ারের দরও অনেক বেশি বাড়তে ও কমতে দেখা যায়।

কোম্পানিটি বলছে, অডিটর নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসির প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রিট করে তারা। আদালত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলেও অডিটর নিয়োগ দিয়েছে তারা।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সচিব মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘ব্যাখ্যা এখনো জমা দেয়া হয়নি। একটা সময় আছে। আমরা সময়ের মধ্যে জমা দিয়ে দিবো।’

বেক্সিমকোর কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ করে আসছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যান্য খাতের সাথে পুঁজিবাজার সংস্কার শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে বেক্সিমকোর শেয়ারে কারসাজির দায়ে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। আর এবার কারসাজি করে শেয়ারের দাম কমানো ও বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বোর্ডের মাধ্যমে অডিপ অ্যাপ্রুভাল হয়ে থাকে। কোম্পানিগুলো পর পর ৩ বছর করতে পারে। এরপর আবার বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এই বিষয়টা বিচারাধীন। এখনো একটা কোম্পানি রয়েছে।’

এদিকে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানির সাথে জড়িত নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।

অর্থনীতিবিদ ড. শহিদুল জাহিদ বলেন, ‘বিভিন্ন অডিট ফার্ম ইতিপূর্বে কোম্পানিগুলোর সাথে যোগসাজশ করে ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টে ফুলে ফাপিয়ে দেখানোর জন্য শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।’

বিগত ১২ বছরে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর বিশেষ নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এতে কোম্পানিগুলো ব্যবসা ও সম্পদ কতটা বেশি দেখিয়েছে এবং বতর্মানে সেগুলোর আসল চিত্র উঠে আসবে বলে জানান তারা।