০৭:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেসব কাজ দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধক

অনলাইন ডেস্ক

দোয়া বহু সমস্যার সমাধান। যেকোনো প্রয়োজনে আসমানি সাহায্য লাভের মাধ্যম। কিন্তু জিনিস এমন আছে, যেগুলো দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক। তাই দোয়ার যথাযথ সুফল পেতে অবশ্যই এ বিষয়গুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:

হারাম ভক্ষণ: মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা বর্ণনা করে বলেন, দীর্ঘ ভ্রমণের এলোমেলো চুল ধুলামলিন চেহারার ব্যক্তির দুই হাত আকাশের দিকে তুলে বলছে, হে আমার রব, হে আমার রব, অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম। তার হারাম খাবার দিয়ে পুরো দেহ গড়ে উঠেছে। তাহলে তার এত দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

তাই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই হালাল ভক্ষণ করতে হবে। হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে।

ইখলাস হীনতা: মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের সহিত দোয়া করতে হয়। পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, দোয়াও একটি ইবাদত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭৯)

আর ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাইতো পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সহিত ইবাদত করতে আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের শুধু এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর জন্য দ্বিনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ০৫)

অতএব, আল্লাহর অন্য ইবাদতের মতো দোয়াও ইখলাসের সহিত করতে হবে। অন্যথায় সে দোয়া বিফলে যেতে পারে।

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো: অনেক সময় মানুষ দোয়ার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে। দোয়া করার পর দ্রুত ফল না পেলে হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি এরকমও বলতে শুরু করে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন না। এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। ফলে তার দোয়া বিফলে যাওয়াই স্বাভাবিক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়ো না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়াতো কবুল হলো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪০)

অতএব, দোয়ার করার ক্ষেত্রে কখনো তার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা যাবে না এবং ফলাফল পেতে দেরি হলে আল্লাহর ব্যাপারে অসংলগ্ন কথা বলা যাবে না।

গুনাহ ও রক্তের বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া: গুনাহ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়ো করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২৯)

অমনোযোগ: দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখ যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)

গুনাহে অবিচল: দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, গুনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গুনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহও তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১১)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিক ভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:২৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
১৭৯ জন দেখেছেন

যেসব কাজ দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধক

আপডেট : ০৪:২৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

দোয়া বহু সমস্যার সমাধান। যেকোনো প্রয়োজনে আসমানি সাহায্য লাভের মাধ্যম। কিন্তু জিনিস এমন আছে, যেগুলো দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক। তাই দোয়ার যথাযথ সুফল পেতে অবশ্যই এ বিষয়গুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:

হারাম ভক্ষণ: মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা বর্ণনা করে বলেন, দীর্ঘ ভ্রমণের এলোমেলো চুল ধুলামলিন চেহারার ব্যক্তির দুই হাত আকাশের দিকে তুলে বলছে, হে আমার রব, হে আমার রব, অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম। তার হারাম খাবার দিয়ে পুরো দেহ গড়ে উঠেছে। তাহলে তার এত দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

তাই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই হালাল ভক্ষণ করতে হবে। হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে।

ইখলাস হীনতা: মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের সহিত দোয়া করতে হয়। পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, দোয়াও একটি ইবাদত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭৯)

আর ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাইতো পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সহিত ইবাদত করতে আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের শুধু এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর জন্য দ্বিনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ০৫)

অতএব, আল্লাহর অন্য ইবাদতের মতো দোয়াও ইখলাসের সহিত করতে হবে। অন্যথায় সে দোয়া বিফলে যেতে পারে।

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো: অনেক সময় মানুষ দোয়ার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে। দোয়া করার পর দ্রুত ফল না পেলে হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি এরকমও বলতে শুরু করে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন না। এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। ফলে তার দোয়া বিফলে যাওয়াই স্বাভাবিক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়ো না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়াতো কবুল হলো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪০)

অতএব, দোয়ার করার ক্ষেত্রে কখনো তার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা যাবে না এবং ফলাফল পেতে দেরি হলে আল্লাহর ব্যাপারে অসংলগ্ন কথা বলা যাবে না।

গুনাহ ও রক্তের বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া: গুনাহ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়ো করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২৯)

অমনোযোগ: দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখ যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)

গুনাহে অবিচল: দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, গুনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গুনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহও তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১১)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিক ভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।