দিনাজপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস ক্রেতা
দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ আবাসিক এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম রেজা। প্রতিনিয়ত বাজার করে থাকেন দিনাজপুরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সবচেয়ে বড় মার্কেট বাহাদুর বাজারে। প্রতিদিনের মতো আজও এসেছেন বাজার করতে। কিন্তু কাঁচা বাজার সহ প্রতিটি দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ তিন।
“গত দুইদিন আগে একটি লাউ কিনেছি ৩০ টাকায়, আজকে ঠিক ঐ রকমের একটি লাউ কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। আলু এর আগে কিনেছিলাম ৪৫ টাকা কেজি দরে গেল তিন দিন আগে, আজকে সেই আলু কিনতে হলো প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। এর আগে রসুন কিনেছি প্রতি কেজি ২০০ টাকায়, আজ এক কেজি রসুন কিনলাম ২৪০ টাকায়, পটল দুইদিন আগে কিনেছি প্রতি কেজি ৩০ টাকা, আজকে সেই পটল কিনতে হলো ৬০ টাকা কেজি। পেঁপে এর আগে প্রতি কেজি কিনেছি ২০ টাকা, আজকে এক কেজি পেঁপে কিনলাম ৩৫ টাকায়। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী ভাবে মনিটরিং করা হয় না। মাঝে মাঝে বাজার তদারকিতে আসেন প্রশাসনের লোকেরা। যখন তারা বাজারে আসেন তখন ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেখান। আবার বাজার থেকে চলে গেলেই দাম বেড়ে যায়। আজব এক দেশে বাস করছি আমরা।”এভাবেই বাজারের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিযে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ী সেলিম রেজা।
দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার রেলবাজার। শহরের শুইয়ারি এলাকা থেকে বাজার করতে এসেছেন কলেজ ছাত্রী সুমি আক্তার। একটু কম কমের আশায় ঘুরছেন এই দোকান থেকে ওই দোকানে। কিন্তু সব দোকানেই সবজির দাম একই।
“আমি দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়ি। ৬ জন ছাত্রী আমরা একটি মেসে থাকি। প্রতিমাসে বাড়ি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু এখন সেই টাকা দিয়ে মাস চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। দুইদিন আগে প্রতি কেজি আদা কিনেছি ১২০ টাকায় আজ সেই আদা কিনতে হলো ১৬০ টাকা কেজি, কার্ডিনাল আলু এর আগে কিনেছিলাম প্রতি কেজি ৪৫ টাকা আজকে সেই আলু কিনতে হলো ৫৫ টাকায়। তিন দিন আগে পিয়াজ কিনেছিলাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা আজকে সেই পেয়াজ কিনতে হল ১৩০ টাকা। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষেরা ভীষণ বিপাকে রয়েছে।”অভিমত ছাত্রী সুমি আক্তারের।
দিনাজপুর শহরের পুরাতন বাহাদুর বাজার এলাকার বাসুদেবের পুত্র সবজি বিক্রেতা রঞ্জন বলেন, শাকসবজি সহ বিভিন্ন সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেচা বিক্রি অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে একজন খদ্দের আধা কেজি পেয়াজ কিন্তু সে এখন এক পোয়া পেয়া কিনছে। যারা আগে এক কেজি আলু নিত তারা এখন আধা কেজি আলু নিচ্ছে। বাজারের ঊর্ধ্বমুখী দামের ফলে আমাদের বিক্রিও অনেক কমে গেছে। আগে প্রতিদিন যেখানে বিক্রি করতাম ৩৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত এখন সেখানে সারা দিনে বিক্রি করি ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। বেচা বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাজারের উর্ধ্বমুখী লাগাম টানতে এরই মধ্যে সরকার প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক ও জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কে সদস্য সচিব, দুইজন ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে দশ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। দিনাজপুর শহরসহ ১৩ টি উপজেলায় চলছে টাক্স ফোর্স এর তদারকি।
দিনাজপুর জেলা বাজার মনিটরিং টাস্ক ফোর্স এর সদস্য সচিব জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, দিনাজপুর শহরে এ পর্যন্ত আমরা সাতটি অভিযান পরিচালনা করেছি। এই অভিযানে সাতজন ব্যবসায়ীকে আর্থিক দন্ড সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া জেনারেল জেলার ১৩ টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ব্যবসায়ীদের অর্থদণ্ড ও অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার দরের পরিস্থিতি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরে আগাম জাতের শাকসবজি আবাদ হয় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে, শীতকালীন শাকসবজি চাষ হয়ে থাকে প্রায় ৫০০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৮৫০ হেক্টরে শিম, ১৯০ হেক্টরে বরবটি, ১০১০ হেক্টরে মুলা, ২৩৯২ হেক্টরে বেগুন, ২৩২ হেক্টরে গাজর, ২৪৫২ হেক্টরে টমেটো, ৮৬ হেক্টরে ঢ্যাঁড়স, ৩৭৮ হেক্টরে করলা, ৯৭৪ হেক্টরে লাউ, ৩১০ হেক্টরে শসা, ৫০০ হেক্টরে লাল শাক, ৩৮৮ হেক্টরে পালং শাক, ৩৮৮ হেক্টরে পুঁই শাক, ১৩০ হেক্টরে।
বাখ//এস