০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের সূর্যের উপেক্ষা সেই শীতার্ত ছেলেটি

উত্তরের দুয়ারে শীতের পদধ্বনি

মো: খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে শীতের অনুভূতি এই জেলায় বেশ আগেই অনুভূত হয়। এরই মধ্যে কুয়াশায় ছেয়ে যেতে শুরু করেছে দিনাজপুরের চারিপাশ। সকালের কুয়াশায় দিগন্ত ঘেরা দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলা। যেন উঁকি মারছে শীতকাল। আর বস্ত্রহীন সুকান্তের কবিতায় সেই ছেলেটি অপেক্ষায় সকালের সূর্যের। সকালের রোদ্দুরের অপেক্ষায় প্রাণান্ত আকুতি সেই ছেলেটির।প্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই বিখ্যাত কবিতা,

“এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।

হে সূর্য!

তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে

উত্তাপ আর আলো দিও।”

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকার কলেজ পড়ুয়া সুমি ও রিমা। খুব সকালে বেরিয়েছে কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে। ঘন কুয়াশায় মাঝে মাঝে হাত ছড়িয়ে দিয়ে নিচ্ছে কুয়াশার স্পর্শ।

“শীতের দিনে চারিদিকে কুয়াশার আচ্ছাদন সত্যিই অপূর্ব লাগে। আমরা সকালবেলা কোচিংয়ে যাওয়ার সময় এটিকে উপভোগ করি। শীত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে আমাদের পৃথিবীকে। সেইসাথে শীতকালের নানা রকম পিঠা সাথে পিঠাপুলির আয়োজন ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আগমন এক অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতেও এই ঋতুর ভূমিকা যথেষ্ট। সেই সাথে আছে এই ঋতুর অর্থনৈতিক ও নৈসর্গিক। এই রীতি অনেকের কাছে একটি প্রতীক্ষিত ঋতু।

দিনাজপুর আদর্শ কলেজের জিওগ্রাফি বিভাগের লেকচারার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জেলার গড় উচ্চতা ১১২ ফুট থেকে ১২০ ফুট। ভৌগলিকভাবে এই জেলা ২৫.১০ এবং ২৬.০৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.০৫ ও ৮৫.২৮ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। যে কারণে এই জেলায় বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে শীতের অনুভূতি অনেক আগেই অনুভূত হয়। শীতকালে উভয় গোলার্ধে সূর্যের নিম্ন উচ্চতার কারণে সূর্যের আলো একটি তির্যককোনে পৃথিবীতে আঘাত করে যে কারণে শীতকালে সূর্যের আলোর তীব্রতা কমে যায়। জায়গায় শীতের অনুভূতি।

দিনাজপুর আবহাওয় পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমানে দিনাজপুরে দিনের বেলা বইছে পূবালী হাওয়া এবং রাতের বেলা বইছে পশ্চিমা হাওয়া। এই দুই হাওয়ার মিলিত মিশ্রনে তৈরি হচ্ছে সকালের কুয়াশা। এছাড়া বর্তমানে সমুদ্রে একটি মৃদু নিম্নচাপ বিদ্যমান। এটিও কুয়াশার সৃষ্টি করছে। এর ফলে দেশের কোথাও কোথাও মৃদু বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরেই পূর্ণ অবয়বয়ে পৃথিবীতে দেখা মিলবে পরিপূর্ণ শীতের।

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো ফরেস্টি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এর অধ্যাপক ডক্টর মো: শফিকুল বারী বলেন,কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে পৃথিবীর অক্ষ আবহাওয়ার গঠনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। পৃথিবী তার কক্ষপথের সমতলে ২৩.৪৪ক্ক কোণে হেলে পড়ে, যার ফলে পৃথিবী তার কক্ষপথের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন অক্ষাংশ সরাসরি সূর্যের মুখোমুখি হয়। এই ভিন্নতায় ঋতু নিয়ে আসে বাংলার দূয়ারে। যখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে, তখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের মুখোমুখি হয় এবং এইভাবে উত্তর গোলার্ধের তুলনায় উষ্ণ তাপমাত্রা অনুভূত হয়।

বিপরীতভাবে, দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল ঘটে যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি হেলে থাকে। পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্রীষ্মের সূর্যের তুলনায় শীতকালীন সূর্যের আকাশে সর্বোচ্চ উচ্চতা কম থাকে।শীতকালে উভয় গোলার্ধে, সূর্যের নিম্ন উচ্চতার কারণে সূর্যের আলো একটি তির্যক কোণে পৃথিবীতে আঘাত করে। এইভাবে সৌর বিকিরণের একটি কম পরিমাণ ভূপৃষ্ঠের প্রতি একক পৃথিবীতে আঘাত করে। এভাবেই কার্তিকের কীর্তিতে পৃথিবীতে আগমন ঘটে শীতের।

দিনাজপুর সচেতন নগরী কমিটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক জলিল আহমেদ বলেন, শীতের অর্থনৈতিক দিক এবং কাব্যিক দিক দুটি মহামূল্যবান। এ সময়ে শীতের শাকসবজিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বাজার। অন্যদিকে শীতের কারু ময় উপস্থিতি, প্রকৃতিতে শীতের শৈল্পিক দৃশ্যমানতা একজন কবি ও সাহিত্যিককে সাহিত্যের বিভিন্ন সাহিত্য ও কবিতা চর্চায় অনেক অনসঙ্গ প্রদান করে। শীত এবং শীতকাল নিয়ে অনেক কবিতা, উপন্যাস, ছোট গল্প লিখেছেন কবিরা। যুগে যুগে এই শীতকে নিয়ে সতেজ হয়েছে পৃথিবী। প্রকৃতিতে শীতের অবদান অনস্বীকার্য।

মূলত মেরু এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে শীতকাল বছরের শীতলতম ঋতু। এটি শরতের পরে এবং বসন্তের আগে আসে পৃথিবীর অক্ষের ঘূর্ণন ঋতু সৃষ্টি করে আসে শীতকাল। বিভিন্ন সংস্কৃতি শীতের শুরু হিসেবে বিভিন্ন তারিখকে সংজ্ঞায়িত করে এবং কিছু আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এক একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:৫৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৪৭ জন দেখেছেন

শীতের সূর্যের উপেক্ষা সেই শীতার্ত ছেলেটি

উত্তরের দুয়ারে শীতের পদধ্বনি

আপডেট : ০৪:৫৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে শীতের অনুভূতি এই জেলায় বেশ আগেই অনুভূত হয়। এরই মধ্যে কুয়াশায় ছেয়ে যেতে শুরু করেছে দিনাজপুরের চারিপাশ। সকালের কুয়াশায় দিগন্ত ঘেরা দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলা। যেন উঁকি মারছে শীতকাল। আর বস্ত্রহীন সুকান্তের কবিতায় সেই ছেলেটি অপেক্ষায় সকালের সূর্যের। সকালের রোদ্দুরের অপেক্ষায় প্রাণান্ত আকুতি সেই ছেলেটির।প্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই বিখ্যাত কবিতা,

“এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।

হে সূর্য!

তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে

উত্তাপ আর আলো দিও।”

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকার কলেজ পড়ুয়া সুমি ও রিমা। খুব সকালে বেরিয়েছে কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে। ঘন কুয়াশায় মাঝে মাঝে হাত ছড়িয়ে দিয়ে নিচ্ছে কুয়াশার স্পর্শ।

“শীতের দিনে চারিদিকে কুয়াশার আচ্ছাদন সত্যিই অপূর্ব লাগে। আমরা সকালবেলা কোচিংয়ে যাওয়ার সময় এটিকে উপভোগ করি। শীত যেন নতুন করে জাগিয়ে তোলে আমাদের পৃথিবীকে। সেইসাথে শীতকালের নানা রকম পিঠা সাথে পিঠাপুলির আয়োজন ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আগমন এক অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতেও এই ঋতুর ভূমিকা যথেষ্ট। সেই সাথে আছে এই ঋতুর অর্থনৈতিক ও নৈসর্গিক। এই রীতি অনেকের কাছে একটি প্রতীক্ষিত ঋতু।

দিনাজপুর আদর্শ কলেজের জিওগ্রাফি বিভাগের লেকচারার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জেলার গড় উচ্চতা ১১২ ফুট থেকে ১২০ ফুট। ভৌগলিকভাবে এই জেলা ২৫.১০ এবং ২৬.০৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.০৫ ও ৮৫.২৮ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। যে কারণে এই জেলায় বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে শীতের অনুভূতি অনেক আগেই অনুভূত হয়। শীতকালে উভয় গোলার্ধে সূর্যের নিম্ন উচ্চতার কারণে সূর্যের আলো একটি তির্যককোনে পৃথিবীতে আঘাত করে যে কারণে শীতকালে সূর্যের আলোর তীব্রতা কমে যায়। জায়গায় শীতের অনুভূতি।

দিনাজপুর আবহাওয় পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমানে দিনাজপুরে দিনের বেলা বইছে পূবালী হাওয়া এবং রাতের বেলা বইছে পশ্চিমা হাওয়া। এই দুই হাওয়ার মিলিত মিশ্রনে তৈরি হচ্ছে সকালের কুয়াশা। এছাড়া বর্তমানে সমুদ্রে একটি মৃদু নিম্নচাপ বিদ্যমান। এটিও কুয়াশার সৃষ্টি করছে। এর ফলে দেশের কোথাও কোথাও মৃদু বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরেই পূর্ণ অবয়বয়ে পৃথিবীতে দেখা মিলবে পরিপূর্ণ শীতের।

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো ফরেস্টি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এর অধ্যাপক ডক্টর মো: শফিকুল বারী বলেন,কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে পৃথিবীর অক্ষ আবহাওয়ার গঠনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। পৃথিবী তার কক্ষপথের সমতলে ২৩.৪৪ক্ক কোণে হেলে পড়ে, যার ফলে পৃথিবী তার কক্ষপথের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন অক্ষাংশ সরাসরি সূর্যের মুখোমুখি হয়। এই ভিন্নতায় ঋতু নিয়ে আসে বাংলার দূয়ারে। যখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে, তখন দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের মুখোমুখি হয় এবং এইভাবে উত্তর গোলার্ধের তুলনায় উষ্ণ তাপমাত্রা অনুভূত হয়।

বিপরীতভাবে, দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল ঘটে যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি হেলে থাকে। পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্রীষ্মের সূর্যের তুলনায় শীতকালীন সূর্যের আকাশে সর্বোচ্চ উচ্চতা কম থাকে।শীতকালে উভয় গোলার্ধে, সূর্যের নিম্ন উচ্চতার কারণে সূর্যের আলো একটি তির্যক কোণে পৃথিবীতে আঘাত করে। এইভাবে সৌর বিকিরণের একটি কম পরিমাণ ভূপৃষ্ঠের প্রতি একক পৃথিবীতে আঘাত করে। এভাবেই কার্তিকের কীর্তিতে পৃথিবীতে আগমন ঘটে শীতের।

দিনাজপুর সচেতন নগরী কমিটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক জলিল আহমেদ বলেন, শীতের অর্থনৈতিক দিক এবং কাব্যিক দিক দুটি মহামূল্যবান। এ সময়ে শীতের শাকসবজিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বাজার। অন্যদিকে শীতের কারু ময় উপস্থিতি, প্রকৃতিতে শীতের শৈল্পিক দৃশ্যমানতা একজন কবি ও সাহিত্যিককে সাহিত্যের বিভিন্ন সাহিত্য ও কবিতা চর্চায় অনেক অনসঙ্গ প্রদান করে। শীত এবং শীতকাল নিয়ে অনেক কবিতা, উপন্যাস, ছোট গল্প লিখেছেন কবিরা। যুগে যুগে এই শীতকে নিয়ে সতেজ হয়েছে পৃথিবী। প্রকৃতিতে শীতের অবদান অনস্বীকার্য।

মূলত মেরু এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে শীতকাল বছরের শীতলতম ঋতু। এটি শরতের পরে এবং বসন্তের আগে আসে পৃথিবীর অক্ষের ঘূর্ণন ঋতু সৃষ্টি করে আসে শীতকাল। বিভিন্ন সংস্কৃতি শীতের শুরু হিসেবে বিভিন্ন তারিখকে সংজ্ঞায়িত করে এবং কিছু আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এক একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে।

বাখ//এস