০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণ শোধের চাপে মা- বাবা হারানো তিন শিশু

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংক ‘ঋণের বোঝা’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তিন এতিম শিশুর। একদিকে বাবা-মা হারা শোক, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপে দিশেহারা ওই তিন অবুঝ শিশু। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের বদরুল ইসলাম বরকত দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘুচাতে ২০১৯ সালে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কুয়েতে যান। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে হাসি ফোঁটাতে ও ধার-দেনার টাকা পরিশোধ করতে প্রবাসে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। ছয় মাসের মাথায় বাড়িতে রেখে যাওয়া সন্তানসম্ভবা স্ত্রী লুপা বেগম প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে মারা যান। সদ্য ভূমিষ্ঠ আব্দুর রহমানের চেহারাটাও ভালো করে দেখে যেতে পারেননি মা লুপা বেগম। রকিও পায়নি গর্ভধারিণী মায়ের আদর-স্নেহ।

স্ত্রীর মৃত্যুতে দেশে ফিরে আসেন বরকত। বুকে আগলে রাখেন মা-হারা শিশু আব্দুর রহমানকে। মা-হারা দুই কন্যা শিশু মিম ও জিম বাবাকে কাছে পেয়ে মায়ের শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠে। কিন্তু বিধিবাম, ধার-দেনার টাকার চিন্তা আর স্ত্রী হারানোর শোকে ছয় মাস পরে স্ট্রোক করে মারা যান বরকতও।

এমন মৃত্যু মানতে পারেন না স্বজনরা। অবুঝ তিন শিশু মিম, জিম ও রকি বাবা-মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে। বর্তমান তারা অনাদর-অবহেলায় বৃদ্ধ দাদি জুলেখার সংসারে খেয়ে, না খেয়ে বড় হচ্ছে। এদিকে ব্যাংক ঋণের টাকা মওকুফের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে দ্রুত প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের গোপালগঞ্জ শাখায় আবেদন করেন।

প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ও নমিনী যদি ২২ মাসের মধ্যে মারা যান। তাহলে ওই গ্রাহকের ঋণ মওকুফ করা হয়। কিন্তু আবেদনের সাড়ে তিন বছর পর মুকসুদপুর প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন ওই তিন শিশুকে। বরকতের স্বজনদের দাবি, ঋণ মওকুফের জন্য সব ধরনের কাগজপত্র যথা সময়ে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও বিষয়টি অবগত আছেন; কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র তারা পায়নি। এ ঘটনায় বাবা-মা হারা এতিম তিন ভাইবোনের মাথায় যেন বজ্রপাত নেমে আসে। হতবাক হয়ে যান আত্মীয়স্বজনরাও।

প্রতিবেশী ফিরোজ মিয়া বলেন, কাগজপত্র সব জমা দেওয়া হয়েছিল। আমিসহ আরও অনেকেই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ওদের নেই। বদরুলের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এসব বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলে, এতিম বাচ্চাগুলো কোথায় যাবে।

সাংবাদিক সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম বলেন, বরকত মারা যাওয়ার পর ওরা আমার কাছে আসে। আমি ওদের সঙ্গে গোপালগঞ্জ প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক থেকে বলা হয়- প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে। যেহেতু প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ব্যাংক বরকতের বৃদ্ধা মা ও এতিম বাচ্চাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক মুকসুদপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. সেলিম বলেন, বিষয়টি অনেক আগের। তবে আবেদনের কপি আমি ফাইলের কোথাও পাইনি। পেলে অবশ্যই মওকুফ করা যেত। এটা তাদের অধিকার।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৫:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৭২ জন দেখেছেন

ঋণ শোধের চাপে মা- বাবা হারানো তিন শিশু

আপডেট : ০৫:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংক ‘ঋণের বোঝা’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তিন এতিম শিশুর। একদিকে বাবা-মা হারা শোক, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপে দিশেহারা ওই তিন অবুঝ শিশু। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের বদরুল ইসলাম বরকত দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘুচাতে ২০১৯ সালে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কুয়েতে যান। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে হাসি ফোঁটাতে ও ধার-দেনার টাকা পরিশোধ করতে প্রবাসে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। ছয় মাসের মাথায় বাড়িতে রেখে যাওয়া সন্তানসম্ভবা স্ত্রী লুপা বেগম প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে মারা যান। সদ্য ভূমিষ্ঠ আব্দুর রহমানের চেহারাটাও ভালো করে দেখে যেতে পারেননি মা লুপা বেগম। রকিও পায়নি গর্ভধারিণী মায়ের আদর-স্নেহ।

স্ত্রীর মৃত্যুতে দেশে ফিরে আসেন বরকত। বুকে আগলে রাখেন মা-হারা শিশু আব্দুর রহমানকে। মা-হারা দুই কন্যা শিশু মিম ও জিম বাবাকে কাছে পেয়ে মায়ের শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠে। কিন্তু বিধিবাম, ধার-দেনার টাকার চিন্তা আর স্ত্রী হারানোর শোকে ছয় মাস পরে স্ট্রোক করে মারা যান বরকতও।

এমন মৃত্যু মানতে পারেন না স্বজনরা। অবুঝ তিন শিশু মিম, জিম ও রকি বাবা-মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে। বর্তমান তারা অনাদর-অবহেলায় বৃদ্ধ দাদি জুলেখার সংসারে খেয়ে, না খেয়ে বড় হচ্ছে। এদিকে ব্যাংক ঋণের টাকা মওকুফের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে দ্রুত প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের গোপালগঞ্জ শাখায় আবেদন করেন।

প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ও নমিনী যদি ২২ মাসের মধ্যে মারা যান। তাহলে ওই গ্রাহকের ঋণ মওকুফ করা হয়। কিন্তু আবেদনের সাড়ে তিন বছর পর মুকসুদপুর প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন ওই তিন শিশুকে। বরকতের স্বজনদের দাবি, ঋণ মওকুফের জন্য সব ধরনের কাগজপত্র যথা সময়ে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও বিষয়টি অবগত আছেন; কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র তারা পায়নি। এ ঘটনায় বাবা-মা হারা এতিম তিন ভাইবোনের মাথায় যেন বজ্রপাত নেমে আসে। হতবাক হয়ে যান আত্মীয়স্বজনরাও।

প্রতিবেশী ফিরোজ মিয়া বলেন, কাগজপত্র সব জমা দেওয়া হয়েছিল। আমিসহ আরও অনেকেই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ওদের নেই। বদরুলের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এসব বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলে, এতিম বাচ্চাগুলো কোথায় যাবে।

সাংবাদিক সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম বলেন, বরকত মারা যাওয়ার পর ওরা আমার কাছে আসে। আমি ওদের সঙ্গে গোপালগঞ্জ প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক থেকে বলা হয়- প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে। যেহেতু প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ব্যাংক বরকতের বৃদ্ধা মা ও এতিম বাচ্চাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক মুকসুদপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. সেলিম বলেন, বিষয়টি অনেক আগের। তবে আবেদনের কপি আমি ফাইলের কোথাও পাইনি। পেলে অবশ্যই মওকুফ করা যেত। এটা তাদের অধিকার।

বাখ//এস