পটুয়াখালীতে ২১ হিন্দু পরিবারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
পটুয়াখালীতে ২১ হিন্দু পরিবারের দলিলমূলে রেকর্ডীয় জমিতে নির্মাণ কাজে বেল্লাল খানগং সন্ত্রাসীদের বাঁধা ও খুন জখমের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা। বুধবার বেলা ১১ টায় পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন পালনকালে সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতুল চন্দ্র দাস, সাধারন সম্পাদক উত্তম কুমার দাস, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট সঞ্জয় কুমার খাসকেল, সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার খাসকেল, ভিকটিম আরতী রানী, শিল্পর রানী প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
উল্লেখ্য, শহরের ২১ টি হিন্দিু পরিবার ২০১২ সালে পটুয়াখালী পৌর শহরের টাউন কালিকাপুর এলাকার পটুয়াখালীর ৩৮ মৌজার, খতিয়ান -৯৩১, ২৬৭০ ও ২৬৬৯ নং দাগের প্রায় দেড় একর নিচু জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বালি ও মাটি দিয়ে ভরাট বাসা বাড়ি নির্মান করার উপযোগি কর তোলেন। ২১ হিন্দু পরিবার গত ২০ অক্টোবর সোমবার ওই জমিতে ঘর উত্তোলন করতে গেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী
ভূমিদস্যু বেল্লাল খানগং ৪০/৫০ জন নারী- পুরুষ লাঠি সোটা নিয়ে বাঁধা দেয়। তারা নিজেদেরকে বিএনপির কর্মী দাবি করে হিন্দু পরিবারের সদস্যদের খুন-জখমসহ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা পুলিশ সুপারেকে অবহিত করেন এবং পটুয়াখালী সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীদের একজন পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি স্বপন ব্যানার্জী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ২১ হিন্দু পরিবার শহরের টাউন কালিাপুর এলাকার এস.এ ৯৩১ নং
খতিয়ানের ২৬৭০ দাগে ১ একর ২১ শতাংশ ও ২৬৬৯ দাগে ২৯ শতাংশসহ মোট দেড় একর জমি কবলা দলিলমূলে ক্রয় করেন। ক্রেতারা ওই জমিতে বালু দিয়ে ভরাট করে বাড়ি নির্মানের উপযোগী করেন। সোমবার সকালে ওই জমিতে আমরা জমির মালিকরা ঘর নির্মান করতে গেলে ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু বেল্লাল খানগং একদল সন্ত্রাসী নিয়ে তাদের বসত ঘর নির্মান কাজে বাঁধা দেয়। এসময় সন্ত্রাসীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাছ ও খুন জখমের ভয় দেখিয়ে জীবন বাঁচাতে জমি ছেড়ে দেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
স্বপন ব্যানার্জী আরও বলেন, এর আগেও এসব ভূমিদস্যুরা তাদের বাধাঁ দিয়েছে। ওই জমিতে ঘর তোলার পরিকল্পনা করতে ১৯ অক্টোবর আমরা সেখানে গেলে তারা আমাদের নানাভাবে হুমকি-ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে। পরে আমরা ভুক্তভোগী হিন্দু পরিবারের সদস্যরা পটুয়াখালী থানায় একটি লিখিত
অভিযোগ দায়ের করি। এছাড়াও আমরা ২১ পরিবারের সদস্যরা ২০ অক্টোবর দুপুরে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং এর প্রতিকার দাবি করেছি। জমির আরেক মালিক খোকন দে বলেন, আমরা জমির মালিক কিন্তু আমরা জমির কাছে গেলেই এসব ভূমিদস্যুরা অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। আমরা এর প্রতিকার দাবি করছি।
অপর মালিক কলেজ শিক্ষক স্বপন খাসকেল জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে ওই জমির কাছে গেলে সন্ত্রাসী বেল্লালসহ কয়েক সন্ত্রাসী আমাকে নগন্য ভাষায় গালিগালাছ করে এবং দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে বলে, ভারতে না গেলে খুন জখম করার হুমকি দেয়। এ কথা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি এবং বিচার দাবি করেছি।
এদিকে বেল্লাল খান নিজেকে একজন বিএনপি কর্মী বলে পরিচয় দেন। তিনি জানান, ঐ দাগে অনেক আগে ৩৬ শতাংশ জমি কিনেছি, একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক হয়েছে, সালিশরা ৩৩ শতাংশ জমি পাবো বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। পটুয়াখালী পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন জানান, বেল্লাল, নাসির, জামালগং বিএনপির কেউ নয়। বিএনপির কোন পদ-পদবীতে তাদের নাম নেই।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সদর থানার ওসি (তদন্ত) রতনুজ্জামান জানান, উভয়পক্ষকে শান্তিপুর্ণ অবস্থানে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুই পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে বসে বিষয়টি ফয়সালা করার কথা বলা হয়েছে। জমির অপর মালিক আরতী রানী ২১ তারিখ রাতে বেল্লাল খানের বিরুদ্ধে জমিতে কাজ করতে বাঁধা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সদর থানায় একটি জিডি করেছেন। জিডি নং-৪৪৩। টাকাদিয়ে জমি কিনে ঘর তুলতে না পারায় নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছেন ২১ হিন্দু পরিবার।
বাখ//আর