১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় দানা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, সুন্দরবন থেকে নৌকা নিয়ে লোকালয়ে ফিরছে জেলেরা

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাব খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছে। সুন্দরবন থেকে নৌকা নিয়ে ফিরে আসছেন জেলেরা।

আজ সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন ৪ নম্বর কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে শতাধিক জেলে জাল-দড়ি গুটিয়ে এরই মধ্যে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন। নৌকাগুলো পার্শ্ববর্তী শাকবাড়িয়া নদীর চরে বেঁধে রাখা আছে। উপজেলার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনসংলগ্ন সুতিয়া বাজারের পাশে নদীতীরেও অর্ধশতাধিক মাছ ধরার নৌকা ভিড়ে থাকতে দেখা যায়।

সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা জেলেরা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালের পানি বেড়ে গেছে। স্রোত অনেক বেশি হওয়ায় জাল ফেললে পানির তোড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। বনের পাশের সাগরও উত্তাল হয়ে উঠেছে। এ জন্য আগাম আবহাওয়ার খবর পেয়ে দ্রæত উপকূলে ফিরে এসেছেন তাঁরা। নৌকায় মাছ ধরার জাল গোছানোর ফাঁকে বনজীবী জেলে আসাফুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক আবহাওয়া বার্তা না পেয়ে এর আগে অনেক জেলে সুন্দরবন ও সাগরে প্রাণ দিয়েছেন। এ জন্য আমরা আগেভাগে সংবাদ পেয়ে মাছ শিকার বন্ধ রেখে উপকূলে ফিরে এসেছি। ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত কেটে গেলে আবারও সুন্দরবনে মাছ শিকারে যাব।’

সুন্দরবন জেলে-বাওয়ালি ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব শুরু হওয়ায় গতকাল বুধবার থেকেই জেলে-বাওয়ালিরা নিরাপদে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন। বর্তমানে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ, কোবাদক, বানিয়াখালী, নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া পাঁচ শতাধিক নৌকা ফিরে এসেছে। এখনো গহিন সুন্দরবনে অনেক নৌকা আছে। সেসব নৌকার জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

কয়রার মহেশ্বরীপুর এলাকার জেলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এবার আমি সুন্দরবন থেকে আগেভাগে ফিরে এসেছি। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় সুন্দরবন অভ্যন্তরে মাছ ধরতে গিয়ে আটকে পড়েছিলাম। সে সময় মনে হচ্ছিল আর বেঁচে ফেরা হবে না। বনের মধ্যে উঁচু গাছগুলো মট মট শব্দে ভেঙে পড়ছিল। চোখের সামনে দিয়ে পানিতে হরিন ভেসে যেতে দেখেছি।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে আজ মধ্যরাতের জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে। পাশাপাশি নদীতে ঢেউও বেড়েছে। জেলেরা সুন্দরবন থেকে ফিরে আসছেন। বন বিভাগও তাঁদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছে।’

বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় হলে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সুন্দরবনের কয়েকটি ক্যাম্পের বনরক্ষীরা ঝুঁকিতে পড়েন। সে কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্যাম্পে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারসহ শুকনা খাবার মজুতের জন্য প্রতিটি টহল ফাঁড়ি ও অফিসকে বলা হয়েছে।’

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুল বান্না বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া “দানা” এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর শক্তিও ক্রমে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দানার যে গতি প্রকৃতি, সে অনুযায়ী এটি আজ রাতে বা আগামীকাল শুক্রবার ভোরে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। উপকূলীয় এলাকা এখনো ৩ নম্বর সংকেতের আওতায় আছে।’

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:২৪:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
৭৫ জন দেখেছেন

ঘূর্ণিঝড় দানা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, সুন্দরবন থেকে নৌকা নিয়ে লোকালয়ে ফিরছে জেলেরা

আপডেট : ০২:২৪:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাব খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছে। সুন্দরবন থেকে নৌকা নিয়ে ফিরে আসছেন জেলেরা।

আজ সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন ৪ নম্বর কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে শতাধিক জেলে জাল-দড়ি গুটিয়ে এরই মধ্যে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন। নৌকাগুলো পার্শ্ববর্তী শাকবাড়িয়া নদীর চরে বেঁধে রাখা আছে। উপজেলার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনসংলগ্ন সুতিয়া বাজারের পাশে নদীতীরেও অর্ধশতাধিক মাছ ধরার নৌকা ভিড়ে থাকতে দেখা যায়।

সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা জেলেরা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালের পানি বেড়ে গেছে। স্রোত অনেক বেশি হওয়ায় জাল ফেললে পানির তোড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। বনের পাশের সাগরও উত্তাল হয়ে উঠেছে। এ জন্য আগাম আবহাওয়ার খবর পেয়ে দ্রæত উপকূলে ফিরে এসেছেন তাঁরা। নৌকায় মাছ ধরার জাল গোছানোর ফাঁকে বনজীবী জেলে আসাফুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক আবহাওয়া বার্তা না পেয়ে এর আগে অনেক জেলে সুন্দরবন ও সাগরে প্রাণ দিয়েছেন। এ জন্য আমরা আগেভাগে সংবাদ পেয়ে মাছ শিকার বন্ধ রেখে উপকূলে ফিরে এসেছি। ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত কেটে গেলে আবারও সুন্দরবনে মাছ শিকারে যাব।’

সুন্দরবন জেলে-বাওয়ালি ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব শুরু হওয়ায় গতকাল বুধবার থেকেই জেলে-বাওয়ালিরা নিরাপদে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন। বর্তমানে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ, কোবাদক, বানিয়াখালী, নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া পাঁচ শতাধিক নৌকা ফিরে এসেছে। এখনো গহিন সুন্দরবনে অনেক নৌকা আছে। সেসব নৌকার জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

কয়রার মহেশ্বরীপুর এলাকার জেলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এবার আমি সুন্দরবন থেকে আগেভাগে ফিরে এসেছি। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় সুন্দরবন অভ্যন্তরে মাছ ধরতে গিয়ে আটকে পড়েছিলাম। সে সময় মনে হচ্ছিল আর বেঁচে ফেরা হবে না। বনের মধ্যে উঁচু গাছগুলো মট মট শব্দে ভেঙে পড়ছিল। চোখের সামনে দিয়ে পানিতে হরিন ভেসে যেতে দেখেছি।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে আজ মধ্যরাতের জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে। পাশাপাশি নদীতে ঢেউও বেড়েছে। জেলেরা সুন্দরবন থেকে ফিরে আসছেন। বন বিভাগও তাঁদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছে।’

বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় হলে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সুন্দরবনের কয়েকটি ক্যাম্পের বনরক্ষীরা ঝুঁকিতে পড়েন। সে কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্যাম্পে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারসহ শুকনা খাবার মজুতের জন্য প্রতিটি টহল ফাঁড়ি ও অফিসকে বলা হয়েছে।’

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুল বান্না বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া “দানা” এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর শক্তিও ক্রমে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দানার যে গতি প্রকৃতি, সে অনুযায়ী এটি আজ রাতে বা আগামীকাল শুক্রবার ভোরে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। উপকূলীয় এলাকা এখনো ৩ নম্বর সংকেতের আওতায় আছে।’

বাখ//এস