০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য নিয়ে অসন্তুষ্ট ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ৬৫ শতাংশ তথ্য ব্যবহারকারী সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। বিসিএস-এর করা এক জরিপেই উঠে আসে এই তথ্য। তাদের তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে।

বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকার মাত্র ২৬ লাখ। এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে দেশের অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, দেশে বেকার কয়েক কোটি। পরিসংখ্যানবিদরা বেকারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে বললেও অর্থনীতির ভালো অবস্থান দেখাতে সেটাই ধরে রেখেছে বিবিএস।

বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকার ২৬ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। আইএলওর ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটি।

তখন সংস্থাটি আভাস দেয়, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ছয় কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্বের হিসাবের এই পদ্ধতিতে গলদ আছে। এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, বিবিএস বেকারত্বের যে হিসাব দেয়, তা সঠিক নয়।

তাদের সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসেবে সামনে আনা জরুরি।

গত দেড় বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। তবে বিবিএস এর পরিসংখ্যানে তা ১০ শতাংশে আটকে রাখা হয়েছে। গত জুলাই মাসেও সরকারের নির্দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে চেয়েছিল বিবিএস। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় সঠিক মূল্যস্ফীতির তথ্য দিয়েছে বিবিএস।

যেখানে ১৩ বছর ধরে আটকে রাখা মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১.৬৬ শতাংশ হয়, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯.৯২ শতাংশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিবিএসের জরিপে মূল্যস্ফীতি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। নিম্ন আয়ের মানুষকে যেহেতু খাদ্য কিনতে তার আয়ের বেশির ভাগ ব্যয় করতে হয়, তাই খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপও তাদের ওপর বেশি।

বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ দেখানো হয়। তবে বিআইডিএসের মাধ্যমে আবার মূল্যায়ন করে দেখা যায়, সেই সংখ্যা হবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা মহামারির মধ্যে দেশে দারিদ্র্য অনেক বেড়ে যায়। বিষয়টি গবেষণা সংস্থা সানেমসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যে উঠে আসে। অথচ বিবিএসের ২০২২ সালের করা জরিপে দেখানো হয়, আগের চেয়ে দারিদ্র্য আরো কমে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাতে দুর্দশা দূর করতে পরিসংখ্যানগুলোকে ঠিক করতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধির সংজ্ঞাগুলো দূষিত, এক্সপোর্ট দূষিত এবং জিডিপির সংজ্ঞাগুলো দূষিত।’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করেছিল বিবিএস।

সংস্থাটির ‘পরিসংখ্যাননীতি’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটি পরিসংখ্যান নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কাজ করছি, যা শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাবে।’

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১২:১৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
১০৭ জন দেখেছেন

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য নিয়ে অসন্তুষ্ট ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারী

আপডেট : ১২:১৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ৬৫ শতাংশ তথ্য ব্যবহারকারী সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। বিসিএস-এর করা এক জরিপেই উঠে আসে এই তথ্য। তাদের তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে।

বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বেকার মাত্র ২৬ লাখ। এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে দেশের অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, দেশে বেকার কয়েক কোটি। পরিসংখ্যানবিদরা বেকারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে বললেও অর্থনীতির ভালো অবস্থান দেখাতে সেটাই ধরে রেখেছে বিবিএস।

বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকার ২৬ লাখ ৭০ হাজার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। আইএলওর ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটি।

তখন সংস্থাটি আভাস দেয়, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ছয় কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্বের হিসাবের এই পদ্ধতিতে গলদ আছে। এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, বিবিএস বেকারত্বের যে হিসাব দেয়, তা সঠিক নয়।

তাদের সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসেবে সামনে আনা জরুরি।

গত দেড় বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। তবে বিবিএস এর পরিসংখ্যানে তা ১০ শতাংশে আটকে রাখা হয়েছে। গত জুলাই মাসেও সরকারের নির্দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে চেয়েছিল বিবিএস। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় সঠিক মূল্যস্ফীতির তথ্য দিয়েছে বিবিএস।

যেখানে ১৩ বছর ধরে আটকে রাখা মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১.৬৬ শতাংশ হয়, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৯.৯২ শতাংশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিবিএসের জরিপে মূল্যস্ফীতি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। নিম্ন আয়ের মানুষকে যেহেতু খাদ্য কিনতে তার আয়ের বেশির ভাগ ব্যয় করতে হয়, তাই খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপও তাদের ওপর বেশি।

বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ দেখানো হয়। তবে বিআইডিএসের মাধ্যমে আবার মূল্যায়ন করে দেখা যায়, সেই সংখ্যা হবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা মহামারির মধ্যে দেশে দারিদ্র্য অনেক বেড়ে যায়। বিষয়টি গবেষণা সংস্থা সানেমসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যে উঠে আসে। অথচ বিবিএসের ২০২২ সালের করা জরিপে দেখানো হয়, আগের চেয়ে দারিদ্র্য আরো কমে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাতে দুর্দশা দূর করতে পরিসংখ্যানগুলোকে ঠিক করতে হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধির সংজ্ঞাগুলো দূষিত, এক্সপোর্ট দূষিত এবং জিডিপির সংজ্ঞাগুলো দূষিত।’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করেছিল বিবিএস।

সংস্থাটির ‘পরিসংখ্যাননীতি’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটি পরিসংখ্যান নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কাজ করছি, যা শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাবে।’