সাবেক আইন মন্ত্রীর পিএস খন্দকার মাসুম দুর্নীতির পাহাড় গড়ে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক
দিনাজপুর প্রতিনিধি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর পিএস এম খন্দকার মাসুম ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় থেকে বগুড়া পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, জর্জ কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন দপ্তরে শতাধিক জনবল নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে প্রায় ৫শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এম. খন্দকার মাসুম সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’র পিএস থাকার পূর্বে তার পরিবারের অভাব অনটন লেগেই ছিল। তার পরিবারের অন্যান্য ভাইয়েরা বিভিন্ন বাসের চালকসহ বিভিন্ন জায়গায় নিম্ন মানের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন সেই বাস চালক ও নিম্ন আয়ের অন্যান্য ভাইয়েরা কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। মাসুমের স্ত্রী শামীমা আক্তার তার নামে হাউজিং স্টেটে প্লটসহ বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। অথচ শামীমা আক্তারের নিজস্ব কোন ব্যবসা-বাণিজ্য বা আয়ের উৎস নেই। খন্দকার মাসুম তার চার ভাই যথাক্রমে- এ. হামিদ মজনু, খন্দকার নান্নু, খন্দকার কোহিনুর ও খন্দকার বেলাল হোসেনদের বিভিন্ন নামে বে-নামে অগাত সম্পত্তির মালিক বানিয়েছেন। খন্দকার নান্নু ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে তাকে বহিষ্কৃত করা হয়। নান্নু ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, খন্দকার মাসুমের ভাই এ. হামিদ মজনু আইনমন্ত্রীর এপিএস এর ক্ষমতার অপব্যবহার করে মজনুর মেয়ে দিনাজপুর জজ কোর্টে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমের নিয়োগ প্রদান করেছে। এখন বর্তমানে দিনাজপুর জজ কোর্টে কর্মরত রয়েছে। মজনু তার আরেক মেয়েকে জাতীয় সংসদ ভবনে চাকুরি প্রদান করেছে।
খন্দকার নান্নুর নামে জায়গা-জমি ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রক্ষিত আছে। তার বড় ছেলে সোহেল ও ছোট ছেলে কামরুল হাসান টুটুল দিনাজপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মরত রয়েছে। উক্ত স্থানে সোহেল ও টুটুলের নিয়োগ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ৫-৭ বছর আগে প্রদান করা হয়। ভাতিজা সোহেল ও টুটুল মাসুমের প্রভাব বিস্তারে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও নান্নুর বড় ছেলে সোহেলের নামে ১টি এবং কামরুল হাসান টুটুলের ৪টি মীম পরিবহন নামে মিনিবাস দিনাজপুর বাস মালিক সমিতির অধীনে চলাচল করছে।
খন্দকার নাসির কোহিনুরের ১টি মীম পরিবহন মিনিবাস বাস মালিক সমিতি অধীনে চলাচল করে। বিপুল পরিমাণ জমি, শহরে বাড়ী ও ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। এছাড়াও অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রীর পিএস মাসুম তার ভাতিজা খন্দকার তুহিনকে স্মারক নং ২৪০০ (৪)- এর মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ঢাকা জেলার ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সহকারী পদে বদলি করেন। আর ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী পদে বদলি করা হয় আরোও এক ভাতিজা মোঃ রাসেল মিয়া-কে। খন্দকার নাসির কোহিনুরের দিনাজপুর শহরের নিমনগর বালুবাড়ীর সাবেক দুদক অফিস এবং তার পেছনের দোতালা বাড়িসহ ৪টি বাড়ি কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছেন।
খন্দকার বেলাল হোসেন ভাই এপিএসের ক্ষমতা দেখিয়ে দিনাজপুর বাস মালিক সমিতিতে যুগ্ম সম্পাদক পদটি পেয়েছে। বাস মালিক সমিতিতে বেলাল আওয়ামী লীগের আমলে আধিপত্য বিস্তার করে তার পরিবারের ১৪টি মীম পরিবহন নামে মিনিবাস ও বাস চলাচল করছে। তার নামে দিনাজপুর হাউজিংয়ে প্লট, শেখপুরা এলাকায় ৫ কোটি টাকার মূল্যের জমি ও বিআরটিএ সিএনএস এর পার্টনার শীপ ব্যবসা রয়েছে।
আরো জানা যায়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মাসুমসহ তার ভাইদের নামে বে-নামে ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। বীরগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকয় নামে বে-নামে বিপুল পরিমান জমি ক্রয় করেছে।
উল্লেখ্য, খন্দকার মাসুম সাবেক আইনমন্ত্রীর পূর্বে আওয়ামী লীগ মনোনিত দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মানু হুইপ থাকাকালীন সময়ে তার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দিনাজপুরের সচেতন মহল খন্দকার মাসুম ও তার ভাইদের পরিবাররের সদস্যগণ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ায় দিনাজপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্ত দাবি করছে।
বাখ//আর