০৩:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরের তুলাই নদীর দুই ধারে ভাঙ্গন: ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রীর মহা প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুরের তুলাই নদীর খনন কাজ শুরু হয় গেল ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রাম শুরু হয় খনন কাজ। ৫৬ মাইল দীর্ঘ নদীটির কাজ শেষ হয় বিরল উপজেলার বৈরাগী পাড়ার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। ১২ কোটি ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নকারী হিসেবে দায়িত্ব পায় বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এরই মধ্যে নদীর দুই ধারে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এই ভাঙ্গনের কারণে নদীর দুই ধারের জমি থেকে পানি ও মাটি গিয়ে পড়ছে নদীতে ফলে খননকৃত নদী আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙ্গন রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয়রা। দুই ধারে ফেলছে বালুর বস্তা ফলে কিছুটা মিলছে সফলতা।

বিরল উপজেলার পাঁচ নং বিরল ইউনিয়নের পূর্ব শাহপাড়া গ্রামের ভাবীর মোড় স্থান থেকে বটতলা এলাকায় ভাঙ্গন রক্ষায় উপজেলা বিএনপি নেতা মোবাশ্বেরুল ইসলামের নেতৃত্বে কাজ করছে একদল স্বেচ্ছাসেবক।

“নদীর দুই ধারে নদী রক্ষা বাঁধে অনেক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা সকলে মিলে সেখানে বালুর বস্তা ফেলে নদীর বাধ রক্ষায় কাজ করছি। আমরা ১৫ থেকে ২৫ জন পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করছি। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ সংস্কার করেছি। আমাদের এই কাজ অব্যাহত থাকবে”জানালেন ওই এলাকার মৃত মফিজুদ্দিনের পুত্র ফয়জার রহমান।

একই ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সন্তোষ রায় বলেন, এই নদী খননের ফলে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। গেল কয়েক বছর ধরে আমাদের কোন ফসল বন্যার কারণে নষ্ট হয়নি। নদীর দুই ধারে বাঁধ থাকায় বন্যা প্লাবিত হয়ে ফসলী জমিতে প্রভাব ফেলেনি। এছাড়া নদীতে বর্তমানে সব সময় পানি থাকায় আমরা নদী থেকে মাছ পাচ্ছি যা আগে পেতাম না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নদীর দুই ধারে অসংখ্য ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে এতে চিন্তিত আমরা।

সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম বলেন, নদীর দুই ধারে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের যে কারণে অতি সহজেই এখন তা ভেঙে যাচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও প্রত্যাশিত কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এই ভাঙ্গন অথবা ফাটলগুলো সংস্কার করা না গেলে নদী আবার ভরাট হয়ে যাবে। নদী খননের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে এলাকাবাসী।

বিরল উপজেলা বিএনপি নেতা মোবাশ্বেরুল ইসলাম বলেন, নদীর দুই ধারে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ভঙ্গুর। অসংখ্য জায়গায় ফাটল অথবা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করে আমি স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক স্থানীয়দের নিয়ে বাধ রক্ষায় কাজ করছি। বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা ভাঙ্গন অথবা ফাটল সংস্কার করেছি। সবাই অতি আগ্রহী হয়ে এ কাজে অংশ নিয়েছে। তবে এই প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না এলে নদী আবার ভরাট হয়ে যাবে। নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নদীর দুই ধারের ভাঙ্গন ও ফাটল গুলো সংস্কারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বহ্নিশিখা আশা বলেন, তুলাই নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন ও ফাটলের বিষয়ে আমি অতি দ্রুত বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাঙ্গন ও ফাটল এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভাঙ্গন ও ফাটল সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।

দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সোহাগচন্দ্র সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্রকল্পের আওতায় যে সমস্ত নদী খনন করা হয়েছে সে নদীগুলোর দুই ধারে যে ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে তা আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে কথা বলে প্রয়োজনে ব্লক বসানোর উদ্যোগ নিব।

তবে এ বিষয়ে বাস্তবায়ন কারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটি এর কোন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর মহাপ্রকল্পের আওতায় দিনাজপুরের পূর্ণভবা, আত্রাই ,তুলাই খনন করার ফলে উপকৃত হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। গেল কয়েক বছর ধরে বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেয়েছে জমির ফসল। এছাড়া নদীতে পানির প্রবাহ সব সময় থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ এখন নদীতে পাচ্ছে জেলেরা।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৬:৫৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
২৯ জন দেখেছেন

দিনাজপুরের তুলাই নদীর দুই ধারে ভাঙ্গন: ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা

আপডেট : ০৬:৫৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর মহা প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুরের তুলাই নদীর খনন কাজ শুরু হয় গেল ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। বোচাগঞ্জ উপজেলার ইশানিয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রাম শুরু হয় খনন কাজ। ৫৬ মাইল দীর্ঘ নদীটির কাজ শেষ হয় বিরল উপজেলার বৈরাগী পাড়ার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। ১২ কোটি ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নকারী হিসেবে দায়িত্ব পায় বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এরই মধ্যে নদীর দুই ধারে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এই ভাঙ্গনের কারণে নদীর দুই ধারের জমি থেকে পানি ও মাটি গিয়ে পড়ছে নদীতে ফলে খননকৃত নদী আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙ্গন রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয়রা। দুই ধারে ফেলছে বালুর বস্তা ফলে কিছুটা মিলছে সফলতা।

বিরল উপজেলার পাঁচ নং বিরল ইউনিয়নের পূর্ব শাহপাড়া গ্রামের ভাবীর মোড় স্থান থেকে বটতলা এলাকায় ভাঙ্গন রক্ষায় উপজেলা বিএনপি নেতা মোবাশ্বেরুল ইসলামের নেতৃত্বে কাজ করছে একদল স্বেচ্ছাসেবক।

“নদীর দুই ধারে নদী রক্ষা বাঁধে অনেক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা সকলে মিলে সেখানে বালুর বস্তা ফেলে নদীর বাধ রক্ষায় কাজ করছি। আমরা ১৫ থেকে ২৫ জন পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করছি। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ সংস্কার করেছি। আমাদের এই কাজ অব্যাহত থাকবে”জানালেন ওই এলাকার মৃত মফিজুদ্দিনের পুত্র ফয়জার রহমান।

একই ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সন্তোষ রায় বলেন, এই নদী খননের ফলে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। গেল কয়েক বছর ধরে আমাদের কোন ফসল বন্যার কারণে নষ্ট হয়নি। নদীর দুই ধারে বাঁধ থাকায় বন্যা প্লাবিত হয়ে ফসলী জমিতে প্রভাব ফেলেনি। এছাড়া নদীতে বর্তমানে সব সময় পানি থাকায় আমরা নদী থেকে মাছ পাচ্ছি যা আগে পেতাম না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নদীর দুই ধারে অসংখ্য ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে এতে চিন্তিত আমরা।

সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম বলেন, নদীর দুই ধারে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের যে কারণে অতি সহজেই এখন তা ভেঙে যাচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও প্রত্যাশিত কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এই ভাঙ্গন অথবা ফাটলগুলো সংস্কার করা না গেলে নদী আবার ভরাট হয়ে যাবে। নদী খননের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে এলাকাবাসী।

বিরল উপজেলা বিএনপি নেতা মোবাশ্বেরুল ইসলাম বলেন, নদীর দুই ধারে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ভঙ্গুর। অসংখ্য জায়গায় ফাটল অথবা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করে আমি স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক স্থানীয়দের নিয়ে বাধ রক্ষায় কাজ করছি। বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা ভাঙ্গন অথবা ফাটল সংস্কার করেছি। সবাই অতি আগ্রহী হয়ে এ কাজে অংশ নিয়েছে। তবে এই প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না এলে নদী আবার ভরাট হয়ে যাবে। নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নদীর দুই ধারের ভাঙ্গন ও ফাটল গুলো সংস্কারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বহ্নিশিখা আশা বলেন, তুলাই নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন ও ফাটলের বিষয়ে আমি অতি দ্রুত বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাঙ্গন ও ফাটল এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভাঙ্গন ও ফাটল সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।

দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সোহাগচন্দ্র সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্রকল্পের আওতায় যে সমস্ত নদী খনন করা হয়েছে সে নদীগুলোর দুই ধারে যে ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে তা আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র সাথে কথা বলে প্রয়োজনে ব্লক বসানোর উদ্যোগ নিব।

তবে এ বিষয়ে বাস্তবায়ন কারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটি এর কোন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর মহাপ্রকল্পের আওতায় দিনাজপুরের পূর্ণভবা, আত্রাই ,তুলাই খনন করার ফলে উপকৃত হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। গেল কয়েক বছর ধরে বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পেয়েছে জমির ফসল। এছাড়া নদীতে পানির প্রবাহ সব সময় থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ এখন নদীতে পাচ্ছে জেলেরা।

বাখ//এস