বাউফলে স্নাতকত্তোর পাশের আগেই কলেজ শিক্ষক
স্নাতকত্তোর (এমএ) পাশ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন কলেজ শিক্ষকের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ১৯৯৮ সালের ১৫ মে। কিন্তু স্নাতকত্তোর পাশ করার আগেই স্নাতকত্তোরের ভুয়া সনদ দেখিয়ে কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষকতার চাকুরি নিয়েছেন এক ব্যক্তি। তিন বছর ধরে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও বেতন পাচ্ছেন ওই শিক্ষক। একই সময়ে দুই কলেজে শিক্ষকতার প্রমাণ রয়েছে। এমন অভিযোগ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সদরের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম মু. মন্জুর মোর্শেদ।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মু.মন্জুর মোর্শেদ ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সীটে স্নাতকত্তোরে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অথচ তিনি তখন স্নাতকত্তোর পরীক্ষাই দেননি। তিনি ১৯৯৮ সালের আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত স্নাতকত্তোর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ফলাফল প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে ৬ মে। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের বেসরকানী শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী স্নাতকত্তোর পাশের আগে কলেজে শিক্ষকতা পদে নিয়োগ নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। মন্জুর মোর্শেদ স্নাতকত্তোরের ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নিয়েছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে শিক্ষকতাকালীন মু.মন্জুর মোর্শেদ নুরাইনপুর কলেজে একই পদে ও একই বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০০১ সালের ২ মে চাকুরিতে যোগদান করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে ২০০১ সালের ১ জুন তিনি প্রথম এমপিওভূক্ত হন। তার ইনডেক্স নম্বর-৮৩১১৭১। ২০০৩ সালের ১৬ই জুলাই পর্যন্ত সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
একই ব্যক্তি কোনো প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ ছাড়াই নুরাইনপুর কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে এসে ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই নিয়োগ দেখিয়ে ২০০৪ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় এমপিওভুক্ত হন মঞ্জুর মোর্শেদ। যার ইনডেক্স নম্বর-৩০০৯৪৬৩। সরকারি বিধি মোতাবেক কোনো কলেজে পরপর দুই বছর বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষার্থী না থাকলে ওই বিষয়ের শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ থাকার নির্দেশ রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরপর তিন বছর পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক কোনো শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষকতা না করেও মঞ্জুর মোর্শেদ বেতন ভাতা ভোগ করে আসছেন।
নুরাইনপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন,‘মঞ্জুর মোর্শেদ ২০০১ সালের ২ মে তার কলেজে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর- ৮৩১১৭১। ২০০৩ সালের ১৬ ই জুলাই পর্যন্ত তাঁর প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মু.মন্জুর মোর্শেদ বলেন, যখন কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় তখন তো শিক্ষক সংকট ছিল। এমপিও ভূক্তও হয়নি। সেই শুরু থেকে কলেজে শিক্ষকতা করছি। আমি ৯৮ তে যোগদান করলেও আমার বেতন-ভাতা হয় ২০০৪ সালে। আমার নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা আমাকে কি মার্ক দিয়েছে সেটা তারা বলতে পারবে। আমার বলার কথা না।
এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মু. অহিদুজ্জামান (সুপন) বলেন, তিনি সম্প্রতি অধ্যক্ষের অবসরজনিত কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাকে কলেজের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি,পাঠদান সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরও বলেন, নিয়োগ সংক্রন্ত ব্যাপরে মঞ্জুর মোর্শেদের ত্রুটি আছে বলে শুনেছি। কাগজপত্র বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাখ//আর