০২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোধূলি বেলা, কবি খুঁজে পেয়েছে কবিতার উপাদান : কৃষিজ মাঠ পাচ্ছে উপাদেয় উপাদান

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

একটা গোধূলি বিকেল বিছিয়ে দেবো

শব্দ ঢালবো কালি কলম পায়ে

তুমি হেটে এসো ছাপ রেখে হৃদি বরাবর

কবিতা হয়ে আমার বারান্দায়”কবির এমন অভিপ্রায়ী ভাবনা যেন বিরল হয়ে দেখা দিয়েছে এই বাংলা তথা বাংলাদেশে।মূলত TWILING বা গোধূলি হল ভোর এবং সূর্যোদয়ের মধ্যে বা সূর্যাস্ত এবং সন্ধ্যার মধ্যে সময়কাল। সকালের গোধূলি: জ্যোতির্বিদ্যা, নটিক্যাল এবং ভোরের নাগরিক পর্যায়। সূর্যের আপাত ডিস্ক স্কেল দেখানো হয়. সন্ধ্যার গোধূলি: সন্ধ্যার সময় নাগরিক, নটিক্যাল এবং জ্যোতির্বিদ্যার পর্যায়। গোধূলি বেলা সূর্যাস্তের শেষে এবং রাত্র বা সন্ধ্যা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আকাশে যে একটা হলদে বা রক্তিম অভা থাকে, তাকে গোধূলি বলে।বাংলা বা বাংলাদেশে এই সময়টি আজ অনেকটা অধরা।হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হাল। তাই সময়ের আয়নায় গোধূলী বেলা যেন অনেকটাই বিরল হয়ে দেখা দিচ্ছে চিরন্তণ বাংলাদেশের পথ প্রান্তরে।

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার ইসরাত জাহান ইভা বলেন, বাংলা এবং বাঙালির জীবনে গোধূলি বেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সারাদিনের কাজ শেষে কৃষক কৃষাণীরা এই সময়ে মাঠের কাজ সেরে রওয়ানা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। কৃষক কৃষাণীরা মাঠের গরু ছাগল নিয়ে ফিরে ঘরে। মাঠের সরুপথে কৃষক কৃষাণীর বাড়ি ফেরার সাথে গরুর পায়ের দীপ্ত চলায় ধুলি উড়ে। এই মুহূর্তটিকেই সাধারণত আমরা গোধূলিবেলা হিসেবে আখ্যায়িত করি যা আমাদের কৃষ্টি কালচারের অংশ। এমন দৃশ্যাবলী এখন অনেকটাই বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার জনপদে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, মৃত্তিকা কণার মধ্যে পলির আকার ধুলি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতির পরিমাপ অনুসারে পলি কণার ব্যাস ০.০০২-০.০৫ মি.মি, কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতিতে পলির পরিমান বেশি এবং ধুলির পরিমান কম হবে। মাটির উর্ববরতা পলি কণার প্রভাব ধুলি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। পলি কণা পলি মাটির কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ কাজে অংশ গ্রহন করে। অন্যান্য রাসায়নিক গুণাবলীতেও পলির ভমিকা ধুলি ও কর্দম কণার তুলনায় মধ্যম। বিশ্বের যে কোন মাটিতে বিভিন্ন পরিমানে সকল আকারের কণাই উপস্থিত থাকে। এর যে কোন এক প্রকার কণার ঘাটতি থাকলে উক্ত স্থানে উত্তম কৃষি জমি উৎপাদিত হয়না। অবশ্য বালি কণার পরিমানের উপর মাটির ভৌত গুণাবলী ও উর্বরতা অনেকাংশে নির্ভর করে।এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারবো কৃষি ক্ষেত্রে ধূলিকণার ভূমিকা কতটা অনস্বীকার্য।

দিনাজপুর আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বেবী নাজনীন বলেন,মাটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু। ক্ষয়ীভুত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানি মিশ্রিত হয়ে দিনে দিনে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়। কোন মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণ করলে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় আকারে নিম্নরুপ দ্রব্য পাওয়া যায়- খনিজ দ্রব্য, নুড়ি বা প্রস্তর,বালি কণা, পলি কণা,কর্দম কণা।এদের প্রকার ভিত্তিক পরিমান মৃত্তিকা ভেদে ভিন্ন।যেমন জৈব পদার্থ, বিয়োজনশীল জৈব পদার্থ প্রয়োগকৃত জৈব সার, ফসলের অবশিষ্টাংশ, অবিয়োজিত উদ্ভিদাংশ স্থূল শিকড় ও শাখ-প্রশাখা, অন্যান্য উদ্ভিদাংশ,হিউমাস-জৈব পদার্থ বিয়োজিত হওয়ার পর সৃষ্ট কালচে পদার্থ, অণুজীব ও প্রাণী, ব্যকটেরিয়া, শ্যাওলা, ছত্রাক এক্টিনোমাইসেটিস, কোঁচো ও পোকা-মাকড়, পানিসেচ ও বৃষ্টির পানি এবং নদী উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি ও বায়ু। মৃত্তিকা কণার ফাঁকে অবস্থানরত বায়ুমন্ডলীয় বায়ু। এছাড়া মাটিতে কঠিন পদার্থেও মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফেরাস অক্সাইড, সিলিকণ ডাই-অক্সাইড।

দিনাজপুর জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি জলিল আহমেদ বলেন, কবি এবং কবিতার জগতে গোধূলি বেলা অনেক কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গোধূলি বেলা নিয়ে অনেক বিখ্যাত কবি ও উপন্যাসিক অনেক কবিতা ও উপন্যাস লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল দৃশ্যাবলী এই গোধূলি বেলা। সারাদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরছে কৃষক কৃষাণী সাথে গরু ও ছাগলের দল। গ্রামের মেঠো পথে উড়ছে ধুলি ও বালুকণা। এমন দৃশ্য ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে আমাদের এই বাংলায়।তাই এর অভিঘাত পড়ছে কবি ও কবিতায়।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৯:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
৬৯ জন দেখেছেন

গোধূলি বেলা, কবি খুঁজে পেয়েছে কবিতার উপাদান : কৃষিজ মাঠ পাচ্ছে উপাদেয় উপাদান

আপডেট : ০৯:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

একটা গোধূলি বিকেল বিছিয়ে দেবো

শব্দ ঢালবো কালি কলম পায়ে

তুমি হেটে এসো ছাপ রেখে হৃদি বরাবর

কবিতা হয়ে আমার বারান্দায়”কবির এমন অভিপ্রায়ী ভাবনা যেন বিরল হয়ে দেখা দিয়েছে এই বাংলা তথা বাংলাদেশে।মূলত TWILING বা গোধূলি হল ভোর এবং সূর্যোদয়ের মধ্যে বা সূর্যাস্ত এবং সন্ধ্যার মধ্যে সময়কাল। সকালের গোধূলি: জ্যোতির্বিদ্যা, নটিক্যাল এবং ভোরের নাগরিক পর্যায়। সূর্যের আপাত ডিস্ক স্কেল দেখানো হয়. সন্ধ্যার গোধূলি: সন্ধ্যার সময় নাগরিক, নটিক্যাল এবং জ্যোতির্বিদ্যার পর্যায়। গোধূলি বেলা সূর্যাস্তের শেষে এবং রাত্র বা সন্ধ্যা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আকাশে যে একটা হলদে বা রক্তিম অভা থাকে, তাকে গোধূলি বলে।বাংলা বা বাংলাদেশে এই সময়টি আজ অনেকটা অধরা।হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হাল। তাই সময়ের আয়নায় গোধূলী বেলা যেন অনেকটাই বিরল হয়ে দেখা দিচ্ছে চিরন্তণ বাংলাদেশের পথ প্রান্তরে।

দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার ইসরাত জাহান ইভা বলেন, বাংলা এবং বাঙালির জীবনে গোধূলি বেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সারাদিনের কাজ শেষে কৃষক কৃষাণীরা এই সময়ে মাঠের কাজ সেরে রওয়ানা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। কৃষক কৃষাণীরা মাঠের গরু ছাগল নিয়ে ফিরে ঘরে। মাঠের সরুপথে কৃষক কৃষাণীর বাড়ি ফেরার সাথে গরুর পায়ের দীপ্ত চলায় ধুলি উড়ে। এই মুহূর্তটিকেই সাধারণত আমরা গোধূলিবেলা হিসেবে আখ্যায়িত করি যা আমাদের কৃষ্টি কালচারের অংশ। এমন দৃশ্যাবলী এখন অনেকটাই বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলার জনপদে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, মৃত্তিকা কণার মধ্যে পলির আকার ধুলি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতির পরিমাপ অনুসারে পলি কণার ব্যাস ০.০০২-০.০৫ মি.মি, কিন্তু আন্তর্জাতিক পদ্ধতির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র পদ্ধতিতে পলির পরিমান বেশি এবং ধুলির পরিমান কম হবে। মাটির উর্ববরতা পলি কণার প্রভাব ধুলি কণা ও কর্দম কণার মাঝামাঝি। পলি কণা পলি মাটির কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ কাজে অংশ গ্রহন করে। অন্যান্য রাসায়নিক গুণাবলীতেও পলির ভমিকা ধুলি ও কর্দম কণার তুলনায় মধ্যম। বিশ্বের যে কোন মাটিতে বিভিন্ন পরিমানে সকল আকারের কণাই উপস্থিত থাকে। এর যে কোন এক প্রকার কণার ঘাটতি থাকলে উক্ত স্থানে উত্তম কৃষি জমি উৎপাদিত হয়না। অবশ্য বালি কণার পরিমানের উপর মাটির ভৌত গুণাবলী ও উর্বরতা অনেকাংশে নির্ভর করে।এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারবো কৃষি ক্ষেত্রে ধূলিকণার ভূমিকা কতটা অনস্বীকার্য।

দিনাজপুর আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বেবী নাজনীন বলেন,মাটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু। ক্ষয়ীভুত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানি মিশ্রিত হয়ে দিনে দিনে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়। কোন মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণ করলে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় আকারে নিম্নরুপ দ্রব্য পাওয়া যায়- খনিজ দ্রব্য, নুড়ি বা প্রস্তর,বালি কণা, পলি কণা,কর্দম কণা।এদের প্রকার ভিত্তিক পরিমান মৃত্তিকা ভেদে ভিন্ন।যেমন জৈব পদার্থ, বিয়োজনশীল জৈব পদার্থ প্রয়োগকৃত জৈব সার, ফসলের অবশিষ্টাংশ, অবিয়োজিত উদ্ভিদাংশ স্থূল শিকড় ও শাখ-প্রশাখা, অন্যান্য উদ্ভিদাংশ,হিউমাস-জৈব পদার্থ বিয়োজিত হওয়ার পর সৃষ্ট কালচে পদার্থ, অণুজীব ও প্রাণী, ব্যকটেরিয়া, শ্যাওলা, ছত্রাক এক্টিনোমাইসেটিস, কোঁচো ও পোকা-মাকড়, পানিসেচ ও বৃষ্টির পানি এবং নদী উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি ও বায়ু। মৃত্তিকা কণার ফাঁকে অবস্থানরত বায়ুমন্ডলীয় বায়ু। এছাড়া মাটিতে কঠিন পদার্থেও মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফেরাস অক্সাইড, সিলিকণ ডাই-অক্সাইড।

দিনাজপুর জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি জলিল আহমেদ বলেন, কবি এবং কবিতার জগতে গোধূলি বেলা অনেক কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গোধূলি বেলা নিয়ে অনেক বিখ্যাত কবি ও উপন্যাসিক অনেক কবিতা ও উপন্যাস লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল দৃশ্যাবলী এই গোধূলি বেলা। সারাদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরছে কৃষক কৃষাণী সাথে গরু ও ছাগলের দল। গ্রামের মেঠো পথে উড়ছে ধুলি ও বালুকণা। এমন দৃশ্য ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে আমাদের এই বাংলায়।তাই এর অভিঘাত পড়ছে কবি ও কবিতায়।

বাখ//আর