০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনা সেচ প্রকল্পের ডি-২ নিস্কাশন খালে সোঁতিজালের বাঁধে ১৬ বিলে জলাবদ্ধতা

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের ডি-২ (কাগেশ্বরী নদী) নিস্কাশন খালের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সোঁতিজালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বাঁধ দেয়ার কারণে পানি প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রকল্প কমান্ড এরিয়ার ১৬টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আসন্ন রবি মৌসুমে বিলগুলোর প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমিতে রবি ফসল মুলকাটা পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, পাবনা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার বেড়া কৈটোলা পাম্পিং ষ্টেশন হতে মুক্তাধর বিল (কাগেশ্বরী নদী) পর্যন্ত পানি নিস্কাশনের জন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ডি-২ নিস্কাশন খাল রয়েছে। এ খাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় ১৬টি বিলের পানি কৈটোলা সুইস গেট দিয়ে যমুনা নদীতে নিস্কাশিত হয়।

বিলগুলো থেকে প্রচুর পরিমান রুই, কাতল, লওলা, মৃগেল, বোয়াল, গজার, সোল, আইড়, চিতল, ফলি, শিং, মাগুড়, টাকি, টেংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ কাগেশ্বরী নদীতে নেমে আসে। এই মাছ শিকারের জন্য কাগেশ্বরী নিস্কাশন ক্যানেলের সাঁথিয়া উপজেলার বড়গ্রাম গ্রামের বকুল খাঁ ও রেজাউল খাঁ বাঁশ গেড়ে চাটাই, পলিথিন বিছিয়ে ঘন সোঁতিজালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে। এতে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তাধর বিল, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাইদহ বিল, বড়গ্রাম বিল, খোলসাখালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, আফড়া বিল, গাঙভাঙ্গার বিল, টেংড়াগাড়ী বিলসহ প্রায় ১৬টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিলগুলোর পানি নিস্কাশন না হওয়ায় প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির পাঁকা ও আধাপাঁকা আমন ধান কৃষকরা কাটতে পারছে না।।
তালপট্রি গ্রামের কৃষক ছালাম সরদার জানান, সোঁতিজালের বাঁধের কারণে বিল থেকে পানি নামতে অনেক দেরি হচ্ছে। ফলে বীজতলা তৈরি, মুলকাটাপেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ পিছিয়ে পড়ছে। আর বীজতলা তৈরি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ পেছানোয় বোরো ধানের আবাদও পিছিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ডি-২ নিস্কাশন খাল দিয়ে পানি নিস্কাশিত হওয়ায় বিলগুলোতে হাজার হাজার বিঘা চর জেগে ওঠে। স্থানীয় কৃষকরা জেগে ওঠা চরে বোরোধান, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষা, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে থাকেন। বাঁধ দেয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধ সমস্যা নিরশন না হওয়ায় আসন্ন রবি মওসুমে প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমিতে ফসল আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে আমন ধান পাকতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেতের ধান পেঁকে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকেরা পুরোদমে আমন ধান কাটা শুরু করবেন। জমিতে পানি থাকার কারণে পাঁকা ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

সরেজমিন সামুকজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাগেশ্বরী নদীতে বকুল খাঁ ও রেজাউল খাঁ বাঁশ ও সোঁতিজালের বেড়া দিয়ে পানির গতি কমিয়ে মাছ শিকার করছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, বীজ যথাসময়ে বপণ করতে না পারলে তারা ব্যাপক ক্ষতির সন্মূখীন হবেন কাগেশ্বরী নদী (ডি-২ নিস্কাশন খাল) দিয়ে সাঁথিয়ার বড়গ্রাম, গোপীনাথপুর ও ঘুঘুদাহ মৌজার বড় ও ছোট বিল, মুক্তোর বিল, সোনাই বিকল, খোলসাখালি বিল, কাটিয়াদাহ বিল, গাঙভাঙ্গা বিলসহ ১৬টি বিলের পানি নিস্কাশিত হয়। এই কাগেশ্বরী নদীতে সুতিজালের বাঁধ দেয়ায় পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।

কালাইচড়া গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী, বড়গ্রামের সাইদ আলীসহ কয়েকজন জানান, শামুকজানি ঝাপড়া বিলে আমাগরে প্রত্যেককের ১০-১৫ বিঘা জমিত আমন ধান আছে। ধান কাইটা কালাই, পিঁজের দানা, শরিষার আবাদ করবো। যদি সোঁতিজালের কারণে বিলির পানি আটকে থাকে তাহলি আমাগরে পিঁজির দানা চারা, মুরিকাটা পিঁজ লাগানো ক্ষতি অয়া যাবিনি।

বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি খবর পাওয়ার পর পরই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে পানি নিস্কাশনে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কৃষকের ক্ষতি হবে এমনটা আমরা কখনোই মেনে নেব না। সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন সোঁতিজালের বাঁধ অপসারনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই সব সোঁতিজালের বাঁধ অপসারণের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:২৪:২৭ অপরাহ্ন, রোববার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
৭১ জন দেখেছেন

পাবনা সেচ প্রকল্পের ডি-২ নিস্কাশন খালে সোঁতিজালের বাঁধে ১৬ বিলে জলাবদ্ধতা

আপডেট : ০১:২৪:২৭ অপরাহ্ন, রোববার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের ডি-২ (কাগেশ্বরী নদী) নিস্কাশন খালের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সোঁতিজালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বাঁধ দেয়ার কারণে পানি প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রকল্প কমান্ড এরিয়ার ১৬টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আসন্ন রবি মৌসুমে বিলগুলোর প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমিতে রবি ফসল মুলকাটা পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, পাবনা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার বেড়া কৈটোলা পাম্পিং ষ্টেশন হতে মুক্তাধর বিল (কাগেশ্বরী নদী) পর্যন্ত পানি নিস্কাশনের জন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘের ডি-২ নিস্কাশন খাল রয়েছে। এ খাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় ১৬টি বিলের পানি কৈটোলা সুইস গেট দিয়ে যমুনা নদীতে নিস্কাশিত হয়।

বিলগুলো থেকে প্রচুর পরিমান রুই, কাতল, লওলা, মৃগেল, বোয়াল, গজার, সোল, আইড়, চিতল, ফলি, শিং, মাগুড়, টাকি, টেংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ কাগেশ্বরী নদীতে নেমে আসে। এই মাছ শিকারের জন্য কাগেশ্বরী নিস্কাশন ক্যানেলের সাঁথিয়া উপজেলার বড়গ্রাম গ্রামের বকুল খাঁ ও রেজাউল খাঁ বাঁশ গেড়ে চাটাই, পলিথিন বিছিয়ে ঘন সোঁতিজালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরছে। এতে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তাধর বিল, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাইদহ বিল, বড়গ্রাম বিল, খোলসাখালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, আফড়া বিল, গাঙভাঙ্গার বিল, টেংড়াগাড়ী বিলসহ প্রায় ১৬টি বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিলগুলোর পানি নিস্কাশন না হওয়ায় প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির পাঁকা ও আধাপাঁকা আমন ধান কৃষকরা কাটতে পারছে না।।
তালপট্রি গ্রামের কৃষক ছালাম সরদার জানান, সোঁতিজালের বাঁধের কারণে বিল থেকে পানি নামতে অনেক দেরি হচ্ছে। ফলে বীজতলা তৈরি, মুলকাটাপেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ পিছিয়ে পড়ছে। আর বীজতলা তৈরি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষাসহ শাক-সবজি আবাদ পেছানোয় বোরো ধানের আবাদও পিছিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ডি-২ নিস্কাশন খাল দিয়ে পানি নিস্কাশিত হওয়ায় বিলগুলোতে হাজার হাজার বিঘা চর জেগে ওঠে। স্থানীয় কৃষকরা জেগে ওঠা চরে বোরোধান, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সরিষা, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে থাকেন। বাঁধ দেয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধ সমস্যা নিরশন না হওয়ায় আসন্ন রবি মওসুমে প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমিতে ফসল আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে আমন ধান পাকতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেতের ধান পেঁকে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকেরা পুরোদমে আমন ধান কাটা শুরু করবেন। জমিতে পানি থাকার কারণে পাঁকা ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

সরেজমিন সামুকজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাগেশ্বরী নদীতে বকুল খাঁ ও রেজাউল খাঁ বাঁশ ও সোঁতিজালের বেড়া দিয়ে পানির গতি কমিয়ে মাছ শিকার করছে। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, বীজ যথাসময়ে বপণ করতে না পারলে তারা ব্যাপক ক্ষতির সন্মূখীন হবেন কাগেশ্বরী নদী (ডি-২ নিস্কাশন খাল) দিয়ে সাঁথিয়ার বড়গ্রাম, গোপীনাথপুর ও ঘুঘুদাহ মৌজার বড় ও ছোট বিল, মুক্তোর বিল, সোনাই বিকল, খোলসাখালি বিল, কাটিয়াদাহ বিল, গাঙভাঙ্গা বিলসহ ১৬টি বিলের পানি নিস্কাশিত হয়। এই কাগেশ্বরী নদীতে সুতিজালের বাঁধ দেয়ায় পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।

কালাইচড়া গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী, বড়গ্রামের সাইদ আলীসহ কয়েকজন জানান, শামুকজানি ঝাপড়া বিলে আমাগরে প্রত্যেককের ১০-১৫ বিঘা জমিত আমন ধান আছে। ধান কাইটা কালাই, পিঁজের দানা, শরিষার আবাদ করবো। যদি সোঁতিজালের কারণে বিলির পানি আটকে থাকে তাহলি আমাগরে পিঁজির দানা চারা, মুরিকাটা পিঁজ লাগানো ক্ষতি অয়া যাবিনি।

বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি খবর পাওয়ার পর পরই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে পানি নিস্কাশনে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কৃষকের ক্ষতি হবে এমনটা আমরা কখনোই মেনে নেব না। সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন সোঁতিজালের বাঁধ অপসারনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই সব সোঁতিজালের বাঁধ অপসারণের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বাখ//আর