১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাহিদা মতো বই সরবরাহ না করায় পাঠক শূণ্য হচ্ছে গণগ্রন্থাগার

মো. নজরুল ইসলাম, হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম বৃহত্তর একটি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে দেশের সকল পাবলিক লাইব্রেরীতে অনুদানের বই সরবরাহ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত বছর গুলোতে গ্রন্থাগার ও পাঠকের চাহিদার কথা চিন্তা না করে একতরফা ভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার তেলবাজ দোষরদের লেখা বই সরবরাহ করা হয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধসহ প্রায় সকল ধর্মের বই সরবরাহ করা হলেও ৯০ভাগ মুসলমানের দেশে কোন ইসলামী বই সরবরাহ করা হয়নি। দেশের প্রায় সকল গ্রন্থাগার থেকে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও বিগত বছর গুলোতে পাঠকের কথা চিন্তা না করেই শেখ হাসিনা ও তার দোষরদের খুশি করতে তাদের লেখা বই সরবরাহ করা হয়েছে। বিগত ১৭ বছরে একই ধাচের বই গ্রন্থাগারে সর্বরাহ করায় প্রতিটি গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসছে। তারা অনতিবিলম্বে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে এসব বই সরবরাহ বন্ধ করার দাবি জানান।

সকলের প্রত্যাশা ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পাবলিক লাইব্রেরিগুলো প্রাণ ফিরে পাবে। ইসলামী বইসহ ভাল লেখকের, ভাল মানের বই সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বই সংগ্রহ করতে আসা পাবলিক লাইব্রেরীর প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ইসলামী বই ছাড়া প্রায় সকল ধর্মের বইসহ শেখ হাসিনা ও তার দোষরদের লেখা বই বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা জানান, এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করা হয়না। ভাল লেখকের কোন বই নেই, অন্য ধর্মের বই থাকলেও ইসলামী বই নেই। এতে আমরা হতাশ। প্রতি বছর একই ধরনের বই সরবরাহ করার ফলে গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসছে। এখনো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ঘারে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা ভর করে আছে বলে তাদের অভিযোগ।

কিশোরগঞ্জ থেকে বই নিতে আসা একজন জানান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে বই দেখে পছন্দ অনুযায়ী নেওয়ার কথা থাকলেও, বই না দেখেই তালিকা দেখে কোড নাম্বার অনুযায়ী বই নিতে হয়। এতে আমরা পছন্দের বই নিতে পারছিনা। নরসিংদীর এক প্রতিনিধি জানান, এখানে আমরা যারা বই নিতে আসি সবাই এখানকার কর্মচারীদের একটি গ্রæপের হাতে জিম্মি। তাদের দুই/তিনশত টাকা না দিয়ে বই বাছাই কিংবা ভাউচার কিছুই করা যায়না।

সরেজমিনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ঘুরে এ অভিযোগের সত্যতা মেলে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বিক্রয় বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বই বাছাই ও ভাউচারের পর প্রকাশ্যেই হচ্ছে টাকার লেনদেন। রয়েছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের গুনগান গাওয়া বিপুল বইয়ের সমাহার। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের কিছু বই পাওয়া গেলেও ইসলামী বইয়ের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন মাসেও সরকার পতনের কোন হাওয়া লাগেনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে। এ বিষয়ে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের বিক্রয় বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কমিটির মাধ্যমে বই নির্বাচন করে কেনা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিচালক হিসেবে আমি এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পর কিছু বই বাতিলও করেছি। আগামী বছর থেকে গ্রন্থাগার ও পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী ভাল মানের বই সরবরাহ করা হবে। বই বাছাই ও ভাউচার করতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৭:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
৬৬ জন দেখেছেন

চাহিদা মতো বই সরবরাহ না করায় পাঠক শূণ্য হচ্ছে গণগ্রন্থাগার

আপডেট : ০৭:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম বৃহত্তর একটি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে দেশের সকল পাবলিক লাইব্রেরীতে অনুদানের বই সরবরাহ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত বছর গুলোতে গ্রন্থাগার ও পাঠকের চাহিদার কথা চিন্তা না করে একতরফা ভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার তেলবাজ দোষরদের লেখা বই সরবরাহ করা হয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধসহ প্রায় সকল ধর্মের বই সরবরাহ করা হলেও ৯০ভাগ মুসলমানের দেশে কোন ইসলামী বই সরবরাহ করা হয়নি। দেশের প্রায় সকল গ্রন্থাগার থেকে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও বিগত বছর গুলোতে পাঠকের কথা চিন্তা না করেই শেখ হাসিনা ও তার দোষরদের খুশি করতে তাদের লেখা বই সরবরাহ করা হয়েছে। বিগত ১৭ বছরে একই ধাচের বই গ্রন্থাগারে সর্বরাহ করায় প্রতিটি গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসছে। তারা অনতিবিলম্বে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে এসব বই সরবরাহ বন্ধ করার দাবি জানান।

সকলের প্রত্যাশা ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পাবলিক লাইব্রেরিগুলো প্রাণ ফিরে পাবে। ইসলামী বইসহ ভাল লেখকের, ভাল মানের বই সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বই সংগ্রহ করতে আসা পাবলিক লাইব্রেরীর প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ইসলামী বই ছাড়া প্রায় সকল ধর্মের বইসহ শেখ হাসিনা ও তার দোষরদের লেখা বই বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা জানান, এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করা হয়না। ভাল লেখকের কোন বই নেই, অন্য ধর্মের বই থাকলেও ইসলামী বই নেই। এতে আমরা হতাশ। প্রতি বছর একই ধরনের বই সরবরাহ করার ফলে গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসছে। এখনো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ঘারে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা ভর করে আছে বলে তাদের অভিযোগ।

কিশোরগঞ্জ থেকে বই নিতে আসা একজন জানান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে বই দেখে পছন্দ অনুযায়ী নেওয়ার কথা থাকলেও, বই না দেখেই তালিকা দেখে কোড নাম্বার অনুযায়ী বই নিতে হয়। এতে আমরা পছন্দের বই নিতে পারছিনা। নরসিংদীর এক প্রতিনিধি জানান, এখানে আমরা যারা বই নিতে আসি সবাই এখানকার কর্মচারীদের একটি গ্রæপের হাতে জিম্মি। তাদের দুই/তিনশত টাকা না দিয়ে বই বাছাই কিংবা ভাউচার কিছুই করা যায়না।

সরেজমিনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ঘুরে এ অভিযোগের সত্যতা মেলে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বিক্রয় বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বই বাছাই ও ভাউচারের পর প্রকাশ্যেই হচ্ছে টাকার লেনদেন। রয়েছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের গুনগান গাওয়া বিপুল বইয়ের সমাহার। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের কিছু বই পাওয়া গেলেও ইসলামী বইয়ের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন মাসেও সরকার পতনের কোন হাওয়া লাগেনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে। এ বিষয়ে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের বিক্রয় বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কমিটির মাধ্যমে বই নির্বাচন করে কেনা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিচালক হিসেবে আমি এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পর কিছু বই বাতিলও করেছি। আগামী বছর থেকে গ্রন্থাগার ও পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী ভাল মানের বই সরবরাহ করা হবে। বই বাছাই ও ভাউচার করতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাখ//আর