১০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগাম আলুর বীজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে দিনাজপুরের কৃষক, ৩৫ টাকার বীজ কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুর জেলা ১৩ টি উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে কেউ লাগিয়েছে কেউবা লাগাচ্ছে আগাম জাতের আলু। যারা একটু আগে লাগিয়েছে নতুন গজে ওঠা আলু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে সেসব অনেক কৃষক কৃষাণী। তবে মরার উপর খরার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে আলুর বীজের দাম। গেল বারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে বীজ। কৃষি বিভাগ বলছে আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি।

দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের পুত্র আব্দুল লতিফ বলেন, গেল বারে আলুর ভালো দাম পেয়েছি। তাই এইবার তিন বিঘা জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেছি। সামনে আরো আলু লাগাবো। কিন্তু হিমশিম খাচ্ছি আলুর বীজ কিনতে গিয়ে। গেল বার যে আলুর বীজ কিনেছি ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে এবার তা কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য ফসল উৎপাদনে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অনেক সময় লোকসান গুনতে হচ্ছে।

“গতবার হামরা আলুর বীচন (বীজ) এক কেজি কিনিছনো ৩৫-৪০ টাকায়। এইবার প্রথম বেলা কিনিনো ৭০-৭৫ টাকা। এখন বিক্রি হছে ৮০ টাকা। দরমা (শ্রমিকের বেতন) বাড়ি গেইছে। সকাল আটটায় আসিবে বিকেল চারটায় কাজ করি চলে যাবে। ৭০০ টাকা ওমাক গুনি দিবা হবে। চাইরানা পাইসাও কম নিবে নায়। মহিলা গিলা গতবারে নেছলো ২০০ টাকা করি এখন নেছে ৩০০ টাকা । সার বাড়িছে বস্তায় ২০০ টাকা। এখন আবার পোকা ধরেছে। বীষ দিলেও কাজ হয় না।” এভাবেই এবার আগাম আলু চাষ নিয়ে মন্তব্য করলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম।

একই এলাকার মোঃ ফারুক হোসেনের ছেলে শাহজালাল বলেন, এবার বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে আগাম আলুর বীজ। তাও চাহিদার তুলনায় বাজারে বীজের অভাব। আমাদের পরিবারের চারজনসহ প্রতিদিন আরও তিনজন শ্রমিক আমাদের সাথ মাঠে কাজ করে। আমাদের পারিশ্রমিক ধরলে কৃষিকাজ থেকে লাভবান হওয়া বেশ কঠিন। নিরুপায় হয়েই কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। তবে বাজারে এখন আলু সহ সবজির দাম বেশ ভালো। এরকম বাজার থাকলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হব। এই মৌসুমে আমি আলু, মূলা, পুঁইশাক, লাল শাক সহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করে চাষিরা। বর্তমানে কিছু আলু এরই মধ্যে বড় হয়েছে এখনো আলু লাগানো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আলু সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষের বিষয়গুলো সরে জমিনে দেখছেন। কোন সমস্যা দেখামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা আশা করছি এ বছর আমাদের আলুর আবাদ এর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, এবছর জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম আলু চাষ হচ্ছে প্রায় বারো হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকরা বর্তমানে আলু গাছের পরিচর্যাসহ আলুর রোপন অব্যাহত রেখেছেন। চলমান অস্থিরতার সুযোগে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আলু বীজের দাম অতিরিক্ত রাখছেন। এগুলো আমরা এড্রেস করার চেষ্টা করছি। আলু বীজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় দেশী-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির আলুর আবাদ হয়ে থাকে। প্রতিবছর এই জেলায় প্রায় নয় লক্ষাধিক মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়ে থাকে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৫:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
৯৭ জন দেখেছেন

আগাম আলুর বীজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে দিনাজপুরের কৃষক, ৩৫ টাকার বীজ কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে

আপডেট : ০৫:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

দিনাজপুর জেলা ১৩ টি উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে কেউ লাগিয়েছে কেউবা লাগাচ্ছে আগাম জাতের আলু। যারা একটু আগে লাগিয়েছে নতুন গজে ওঠা আলু গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে সেসব অনেক কৃষক কৃষাণী। তবে মরার উপর খরার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে আলুর বীজের দাম। গেল বারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে বীজ। কৃষি বিভাগ বলছে আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি।

দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের পুত্র আব্দুল লতিফ বলেন, গেল বারে আলুর ভালো দাম পেয়েছি। তাই এইবার তিন বিঘা জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেছি। সামনে আরো আলু লাগাবো। কিন্তু হিমশিম খাচ্ছি আলুর বীজ কিনতে গিয়ে। গেল বার যে আলুর বীজ কিনেছি ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে এবার তা কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য ফসল উৎপাদনে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অনেক সময় লোকসান গুনতে হচ্ছে।

“গতবার হামরা আলুর বীচন (বীজ) এক কেজি কিনিছনো ৩৫-৪০ টাকায়। এইবার প্রথম বেলা কিনিনো ৭০-৭৫ টাকা। এখন বিক্রি হছে ৮০ টাকা। দরমা (শ্রমিকের বেতন) বাড়ি গেইছে। সকাল আটটায় আসিবে বিকেল চারটায় কাজ করি চলে যাবে। ৭০০ টাকা ওমাক গুনি দিবা হবে। চাইরানা পাইসাও কম নিবে নায়। মহিলা গিলা গতবারে নেছলো ২০০ টাকা করি এখন নেছে ৩০০ টাকা । সার বাড়িছে বস্তায় ২০০ টাকা। এখন আবার পোকা ধরেছে। বীষ দিলেও কাজ হয় না।” এভাবেই এবার আগাম আলু চাষ নিয়ে মন্তব্য করলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম।

একই এলাকার মোঃ ফারুক হোসেনের ছেলে শাহজালাল বলেন, এবার বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে আগাম আলুর বীজ। তাও চাহিদার তুলনায় বাজারে বীজের অভাব। আমাদের পরিবারের চারজনসহ প্রতিদিন আরও তিনজন শ্রমিক আমাদের সাথ মাঠে কাজ করে। আমাদের পারিশ্রমিক ধরলে কৃষিকাজ থেকে লাভবান হওয়া বেশ কঠিন। নিরুপায় হয়েই কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। তবে বাজারে এখন আলু সহ সবজির দাম বেশ ভালো। এরকম বাজার থাকলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হব। এই মৌসুমে আমি আলু, মূলা, পুঁইশাক, লাল শাক সহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করে চাষিরা। বর্তমানে কিছু আলু এরই মধ্যে বড় হয়েছে এখনো আলু লাগানো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আলু সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষের বিষয়গুলো সরে জমিনে দেখছেন। কোন সমস্যা দেখামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা আশা করছি এ বছর আমাদের আলুর আবাদ এর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, এবছর জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম আলু চাষ হচ্ছে প্রায় বারো হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকরা বর্তমানে আলু গাছের পরিচর্যাসহ আলুর রোপন অব্যাহত রেখেছেন। চলমান অস্থিরতার সুযোগে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আলু বীজের দাম অতিরিক্ত রাখছেন। এগুলো আমরা এড্রেস করার চেষ্টা করছি। আলু বীজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় দেশী-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির আলুর আবাদ হয়ে থাকে। প্রতিবছর এই জেলায় প্রায় নয় লক্ষাধিক মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়ে থাকে।

বাখ//এস