১২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিনাজপুরে শীতকালীন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক কৃষাণীরা

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

বীজের দাম বেশি, শ্রমিকের মূল্য বেশি, সারের দাম বেশি এমন নানান প্রতিকূলতা নিয়ে দিনাজপুরে ১৩ টি উপজেলায় ব্যস্ত সময় পার করছে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করা কৃষক কৃষাণীরা। তবে দুরাশা যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। বেড়েছে বীজের দাম শ্রমিকে। দাম বেড়েছে সারের । তাই বাড়ছে উৎপাদন খরচ। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের তুলনায় উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। সেই সাথে বিভিন্ন প্রকার রোগের উপদ্রবে চিন্তিত তারা। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে শীতকালীন শাক সবজি চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাহুতপাড়া গ্রামের ইয়াসিন আলীর পুত্র কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, কেবলী লাগানো শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর এই এলাকা।এসব শাকসবজি পরিচর্যা ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছি আমরা। কেউ সবজি খেতের আগাছা পরিষ্কার করছে। কেউবা পানি দিচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এভাবেই চলছে শীতকালীন শাক সবজির পরিচর্যা। তবে কৃষি খাত নিয়ে আগ্রহ কমছে আমাদের। কারণ কৃষিতে উল্লেখযোগ্য লাভের মুখ দেখতে পাই না। একরকম নিরুপায় হয়েই কৃষি কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই।

জেলার খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া এলাকার মোকছেদুলের পুত্র কৃষক শামসুল আলম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি আলুর বীজ কিনা নিয়ে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বীজ কিনতে হচ্ছে যা গেল বছর কিনেছিলাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। বেড়েছে শ্রমিকের মূল্য। দিন হাজরা দিতে হয় ৭০০ টাকা পর্যন্ত। সবদিক বিবেচনা করলে কৃষি ক্ষেত্রে ক্রমেই উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে যে কারণে আমরা কৃষকরা অনেক সময় লোকশানের মুখোমুখি পড়ছি।

বিরল উপজেলা কৃষি অফিসের ১০ নং রানিপুকুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় একশ হেক্টরেরও অধিক জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছে চাষিরা। বর্তমানে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বাজারে বীজের দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা মুশকিলে আছেন কৃষকরা। বর্তমানে কৃষকরা আলু, সিম ,বেগুন লাউশাক, কচু শাক, লাল শাক, লাউ সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন চাষীরা। শিম চাষে কোথাও কোথাও ভাইরাসজনিত মজাইক রোগে আক্রান্ত শিম খেত। আমরা মেনকোজে জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিছু কিছু সমস্যা সমাধানে আমরা কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, চাষিরা বর্তমানে শীতকালীন আলু, লাল শাক, পুই শাক, লাউ সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত। এ সময়ে শীতকালীন কিছু রোগ বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই উপজেলা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, জেলা এবার প্রায় ১৫০০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ মেট্রিক টনেরও বেশি। বর্তমানে শাকসবজির রোপন অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।বীজের বাজার নিয়ন্ত্রনে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষাধিক মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির উৎপাদন হয়ে থাকে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১১:০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
৭৭ জন দেখেছেন

নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিনাজপুরে শীতকালীন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক কৃষাণীরা

আপডেট : ১১:০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

বীজের দাম বেশি, শ্রমিকের মূল্য বেশি, সারের দাম বেশি এমন নানান প্রতিকূলতা নিয়ে দিনাজপুরে ১৩ টি উপজেলায় ব্যস্ত সময় পার করছে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করা কৃষক কৃষাণীরা। তবে দুরাশা যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। বেড়েছে বীজের দাম শ্রমিকে। দাম বেড়েছে সারের । তাই বাড়ছে উৎপাদন খরচ। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের তুলনায় উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। সেই সাথে বিভিন্ন প্রকার রোগের উপদ্রবে চিন্তিত তারা। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে শীতকালীন শাক সবজি চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাহুতপাড়া গ্রামের ইয়াসিন আলীর পুত্র কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, কেবলী লাগানো শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর এই এলাকা।এসব শাকসবজি পরিচর্যা ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছি আমরা। কেউ সবজি খেতের আগাছা পরিষ্কার করছে। কেউবা পানি দিচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এভাবেই চলছে শীতকালীন শাক সবজির পরিচর্যা। তবে কৃষি খাত নিয়ে আগ্রহ কমছে আমাদের। কারণ কৃষিতে উল্লেখযোগ্য লাভের মুখ দেখতে পাই না। একরকম নিরুপায় হয়েই কৃষি কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই।

জেলার খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া এলাকার মোকছেদুলের পুত্র কৃষক শামসুল আলম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি আলুর বীজ কিনা নিয়ে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বীজ কিনতে হচ্ছে যা গেল বছর কিনেছিলাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। বেড়েছে শ্রমিকের মূল্য। দিন হাজরা দিতে হয় ৭০০ টাকা পর্যন্ত। সবদিক বিবেচনা করলে কৃষি ক্ষেত্রে ক্রমেই উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে যে কারণে আমরা কৃষকরা অনেক সময় লোকশানের মুখোমুখি পড়ছি।

বিরল উপজেলা কৃষি অফিসের ১০ নং রানিপুকুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় একশ হেক্টরেরও অধিক জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করছে চাষিরা। বর্তমানে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বাজারে বীজের দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা মুশকিলে আছেন কৃষকরা। বর্তমানে কৃষকরা আলু, সিম ,বেগুন লাউশাক, কচু শাক, লাল শাক, লাউ সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন চাষীরা। শিম চাষে কোথাও কোথাও ভাইরাসজনিত মজাইক রোগে আক্রান্ত শিম খেত। আমরা মেনকোজে জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিছু কিছু সমস্যা সমাধানে আমরা কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, চাষিরা বর্তমানে শীতকালীন আলু, লাল শাক, পুই শাক, লাউ সহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষে ব্যস্ত। এ সময়ে শীতকালীন কিছু রোগ বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই উপজেলা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, জেলা এবার প্রায় ১৫০০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ মেট্রিক টনেরও বেশি। বর্তমানে শাকসবজির রোপন অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।বীজের বাজার নিয়ন্ত্রনে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য যে দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষাধিক মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির উৎপাদন হয়ে থাকে।

বাখ//এস