১০:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দামও কমতে শুরু করেছে

রাজশাহী অঞ্চলে শীতের আগাম সবজিতে চাষির মুখে হাসির ঝলক

মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
সকাল-সন্ধ্যার কুয়াশায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ সবজির সমারোহ। সবজির বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে যেন হাসির ঝলক। শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন তারা। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ৩৪ রকমের শাকসবজি। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩০ রকমের শাকসবজি চাষ হয় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা। শীতের আগাম এসব সবজির মধ্যে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, টমেটো, মূলা, পটল, করলা, ঝিঙ্গা ও বরবটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পালংশাক, পুইশাক, লালশাক এবং ধনিয়াপাতাও রয়েছে এ তালিকায়।
সূত্র জানায়, জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বেগুন। মোট ৯০৮ হেক্টর জমিতে এ সবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। আর ফুলকপি ৩৮৭ হেক্টর, বাঁধাকপি ৩২৩ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর ও টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া লালশাক ৫৩৮ হেক্টর ও পুইশাক ৩০২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমেও সর্বোচ্চ ৬৬৯ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়। ওই বছর ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ২৩৯ হেক্টর ও মূলা চাষ হয় ৩২৮ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি চাষে গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে পবা উপজেলা। এ বছর উপজেলাটিতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ী উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শাকসবজি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সময় অনেক বেশি সবজি বাজারে ওঠে। ফলে তুলনামূলক চড়া দাম পাওয়া যায়। যে কারণে আগাম সবজিতে বিশেষ নজর থাকে তাদের। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পেরে দামও বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। শিম, টমেটো ও বেগুনের দাম তুলনামূলক বেশি। আর ১০/১৫ পর থেকে পুরোদমে সবজি উঠতে শুরু করবে। আলুর দাম বাড়তে থাকলেও  ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে বেগুন, লাউ, পটল, কচুর ও শশার দাম। তবে এবার বেশ লাভবান হওয়ার আশাবাদ চাষিদের।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকায় এ মৌসুমে দুলাল ফকির কয়েক  প্রকার সবজি ও তিন রকম শাক চাষ করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় খাওয়ার জন্য প্রতিবছরই সবজি চাষ করি। তবে এবার সবজির আইটেম বাড়িয়েছি। এবার আমার চাষ করা সবজির তালিকায় রয়েছে-  শিম, করলা, লাউ, চাল কুমড়া, বেগুন, টমেটো, কলা, পেপে। তিনি আরও বলেন, সবজি চাষের মতই আবহাওয়া রয়েছে।
গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন বলেন,  এবার টমেটো,বেগুন, কপি কয়েক ধরনের শাক চাষ করেছি। সবজির ফলন ভালো হয়েছে। ঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে আমার জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এগুলো উত্তোলনের পর সবসময় পেঁয়াজ, রসুন,  দেশি আলু আলুর দাম বেশী থাকায় জমি প্রস্তুত রেখেছি। শ্রমিক পেলে এ সপ্তাহেই এসব লাগানো শুরু করব।
গোদাগাড়ী উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ী রজব আলী  বলেন, শীতের এসব সবজি অসময়ে বাজারজাত করতে পারায় দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব সবজি আকারে ছোট সাইজের এবং ওজনে কম। একই মন্তব্য করেন সবজি চাষী মোফাজ্জুল হোসেন।
সচেতন কৃষকদের অভিযোগ, যদিও অভিযোগ রয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে পানি নিতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাষিদের। সময়মত পানি দিতে না পেরে ফসলের ক্ষতির ঘটনাও নতুন নয়। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
 এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার  বলেন, ফলন যাতে ভালো হয় সেজন্য কৃষকদের পরামার্শ দেয়া হচ্ছে পতিত বা অব্যবহৃত জায়গায় আমরা পুষ্টি বাগান করে দিচ্ছি। এটা খুব সাড়া ফেলছে। এ প্রকল্পে বিষমুক্ত পিওর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ উপজেলাতে সবজি চাষ হয় ভাল হয়েছে। দিনে দিনে এসব সবজি পরিবহণের ব্যবস্থা থাকায় চাষিদের দামে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমরা খুশি। তাদের প্রণোদনা ও পরামর্শ যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। চাষিরা লাভবান হবে বলে আমরা আশাবাদি। আগামীতে সবজি চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
৯৮ জন দেখেছেন

দামও কমতে শুরু করেছে

রাজশাহী অঞ্চলে শীতের আগাম সবজিতে চাষির মুখে হাসির ঝলক

আপডেট : ০১:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
সকাল-সন্ধ্যার কুয়াশায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ সবজির সমারোহ। সবজির বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে যেন হাসির ঝলক। শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন তারা। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ৩৪ রকমের শাকসবজি। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩০ রকমের শাকসবজি চাষ হয় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা। শীতের আগাম এসব সবজির মধ্যে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, টমেটো, মূলা, পটল, করলা, ঝিঙ্গা ও বরবটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পালংশাক, পুইশাক, লালশাক এবং ধনিয়াপাতাও রয়েছে এ তালিকায়।
সূত্র জানায়, জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বেগুন। মোট ৯০৮ হেক্টর জমিতে এ সবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। আর ফুলকপি ৩৮৭ হেক্টর, বাঁধাকপি ৩২৩ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর ও টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া লালশাক ৫৩৮ হেক্টর ও পুইশাক ৩০২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমেও সর্বোচ্চ ৬৬৯ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়। ওই বছর ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ২৩৯ হেক্টর ও মূলা চাষ হয় ৩২৮ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি চাষে গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে পবা উপজেলা। এ বছর উপজেলাটিতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ী উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শাকসবজি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সময় অনেক বেশি সবজি বাজারে ওঠে। ফলে তুলনামূলক চড়া দাম পাওয়া যায়। যে কারণে আগাম সবজিতে বিশেষ নজর থাকে তাদের। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পেরে দামও বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। শিম, টমেটো ও বেগুনের দাম তুলনামূলক বেশি। আর ১০/১৫ পর থেকে পুরোদমে সবজি উঠতে শুরু করবে। আলুর দাম বাড়তে থাকলেও  ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে বেগুন, লাউ, পটল, কচুর ও শশার দাম। তবে এবার বেশ লাভবান হওয়ার আশাবাদ চাষিদের।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকায় এ মৌসুমে দুলাল ফকির কয়েক  প্রকার সবজি ও তিন রকম শাক চাষ করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় খাওয়ার জন্য প্রতিবছরই সবজি চাষ করি। তবে এবার সবজির আইটেম বাড়িয়েছি। এবার আমার চাষ করা সবজির তালিকায় রয়েছে-  শিম, করলা, লাউ, চাল কুমড়া, বেগুন, টমেটো, কলা, পেপে। তিনি আরও বলেন, সবজি চাষের মতই আবহাওয়া রয়েছে।
গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন বলেন,  এবার টমেটো,বেগুন, কপি কয়েক ধরনের শাক চাষ করেছি। সবজির ফলন ভালো হয়েছে। ঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে আমার জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এগুলো উত্তোলনের পর সবসময় পেঁয়াজ, রসুন,  দেশি আলু আলুর দাম বেশী থাকায় জমি প্রস্তুত রেখেছি। শ্রমিক পেলে এ সপ্তাহেই এসব লাগানো শুরু করব।
গোদাগাড়ী উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ী রজব আলী  বলেন, শীতের এসব সবজি অসময়ে বাজারজাত করতে পারায় দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব সবজি আকারে ছোট সাইজের এবং ওজনে কম। একই মন্তব্য করেন সবজি চাষী মোফাজ্জুল হোসেন।
সচেতন কৃষকদের অভিযোগ, যদিও অভিযোগ রয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে পানি নিতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাষিদের। সময়মত পানি দিতে না পেরে ফসলের ক্ষতির ঘটনাও নতুন নয়। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
 এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার  বলেন, ফলন যাতে ভালো হয় সেজন্য কৃষকদের পরামার্শ দেয়া হচ্ছে পতিত বা অব্যবহৃত জায়গায় আমরা পুষ্টি বাগান করে দিচ্ছি। এটা খুব সাড়া ফেলছে। এ প্রকল্পে বিষমুক্ত পিওর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ উপজেলাতে সবজি চাষ হয় ভাল হয়েছে। দিনে দিনে এসব সবজি পরিবহণের ব্যবস্থা থাকায় চাষিদের দামে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমরা খুশি। তাদের প্রণোদনা ও পরামর্শ যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। চাষিরা লাভবান হবে বলে আমরা আশাবাদি। আগামীতে সবজি চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাখ//আর