০২:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে আমন খেতে ইঁদুরের উপদ্রবে সাবাড় ধান

এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নে আমন খেতে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। গত বোধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকেরা ফসল রক্ষা করার জন্য আমন ক্ষেতে কলার গাছ, বাঁশে কনচির ওপরে প্লাস্টিক বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ বা কলার গাছের শুকনো ছাল আমনখেতে ব্যবহার করছেন। আবার কোনো কৃষক সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের বিষ ইঁদুরের কাঁটা ধানের নিকট বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বিষ প্রয়োগ করছেন। এতেও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না কৃষক। কটিয়াদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৬০ হেক্টর। চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলার বীরনোয়াকান্দী গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, আমার আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে। অনেক প্রকার বিষ প্রয়োগ করে ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না । প্রতি রাতেই ইঁদুর এসে আমন ধান কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে । ধান কাটার কারণে ওই ধান শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ইঁদুরে ধান কেটে ফেললে যে টাকা খরচ করে আবাদ করেছি তা উঠবে না। আমাদের চাষিদের পরতে হবে ক্ষতির মুখে।’ একই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য জমিতে বিষসহ অনেক উপকরণ দেওয়া হয়েছে তাতেও কাজ হয় না। জমিতে পানি থাকার পরও দিন দিন ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ছে।

তিনি জানান, দিনের বেলায় ইঁদুর জঙ্গলে এবং গাছে উঠে যায়। রাত হলেই নেমে আসে ধানক্ষেতে। ক্ষেতের কচি ডগা কেটে ফেলে রেখে চলে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ধান কেটে ফেলছে। একই এলাকার চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে ১৪৮ শতক জমিতে ধানের আবাদ করেছি। আবাদ করতে গিয়ে বীজতলা তৈরি, ক্ষেত চাষ দেওয়া, সার, সেচ, শ্রমিকদের মজুরিসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে।

আগামী এক মাসের মধ্যেই ধান ঘরে তোলার কথা। কিন্তু এর মধ্যে ইঁদুরে ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। কীটনাশক বিষ দিয়েও ইঁদুরকে থামানো যাচ্ছে না। ইঁদুর যে হারে ধান গাছ নষ্ট করছে তাতে করে আশানুরূপ ধানের ফলন পাওয়া যাবে না। আর ফলন ভালো না হলে খরচ উঠবে না। পরে সংসার চালাতে কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে।’

মুমুরদিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমের মাঝামাঝিতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছিল, কীটনাশক দিয়ে তা দমন করা গেছে। এখন ধানক্ষেতে ইঁদুর এসে গাছ কেটে নষ্ট করায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। তবে এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে আসছে না।’ কটিয়াদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।

বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বৃষ্টিনির্ভর ও সেচ সুবিধাযুক্ত ধানের জমিতে ফসল কাটার পূর্বে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জলী আমন ধান (শতকরা ৩২-৩৭ ভাগ)। বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ও ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। এদের মধ্যে কালো ইঁদুর মাঠে ও গুদামে এবং মাঠের বড় কালো ইঁদুর নিচু জমিতে বেশি আক্রমণ করে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:৩২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
১১৩ জন দেখেছেন

কটিয়াদীতে আমন খেতে ইঁদুরের উপদ্রবে সাবাড় ধান

আপডেট : ০২:৩২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নে আমন খেতে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। গত বোধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকেরা ফসল রক্ষা করার জন্য আমন ক্ষেতে কলার গাছ, বাঁশে কনচির ওপরে প্লাস্টিক বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ বা কলার গাছের শুকনো ছাল আমনখেতে ব্যবহার করছেন। আবার কোনো কৃষক সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের বিষ ইঁদুরের কাঁটা ধানের নিকট বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বিষ প্রয়োগ করছেন। এতেও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না কৃষক। কটিয়াদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৬০ হেক্টর। চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলার বীরনোয়াকান্দী গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, আমার আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে। অনেক প্রকার বিষ প্রয়োগ করে ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না । প্রতি রাতেই ইঁদুর এসে আমন ধান কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে । ধান কাটার কারণে ওই ধান শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ইঁদুরে ধান কেটে ফেললে যে টাকা খরচ করে আবাদ করেছি তা উঠবে না। আমাদের চাষিদের পরতে হবে ক্ষতির মুখে।’ একই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য জমিতে বিষসহ অনেক উপকরণ দেওয়া হয়েছে তাতেও কাজ হয় না। জমিতে পানি থাকার পরও দিন দিন ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ছে।

তিনি জানান, দিনের বেলায় ইঁদুর জঙ্গলে এবং গাছে উঠে যায়। রাত হলেই নেমে আসে ধানক্ষেতে। ক্ষেতের কচি ডগা কেটে ফেলে রেখে চলে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ধান কেটে ফেলছে। একই এলাকার চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে ১৪৮ শতক জমিতে ধানের আবাদ করেছি। আবাদ করতে গিয়ে বীজতলা তৈরি, ক্ষেত চাষ দেওয়া, সার, সেচ, শ্রমিকদের মজুরিসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে।

আগামী এক মাসের মধ্যেই ধান ঘরে তোলার কথা। কিন্তু এর মধ্যে ইঁদুরে ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। কীটনাশক বিষ দিয়েও ইঁদুরকে থামানো যাচ্ছে না। ইঁদুর যে হারে ধান গাছ নষ্ট করছে তাতে করে আশানুরূপ ধানের ফলন পাওয়া যাবে না। আর ফলন ভালো না হলে খরচ উঠবে না। পরে সংসার চালাতে কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে।’

মুমুরদিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমের মাঝামাঝিতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছিল, কীটনাশক দিয়ে তা দমন করা গেছে। এখন ধানক্ষেতে ইঁদুর এসে গাছ কেটে নষ্ট করায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। তবে এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে আসছে না।’ কটিয়াদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।

বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বৃষ্টিনির্ভর ও সেচ সুবিধাযুক্ত ধানের জমিতে ফসল কাটার পূর্বে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জলী আমন ধান (শতকরা ৩২-৩৭ ভাগ)। বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ও ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। এদের মধ্যে কালো ইঁদুর মাঠে ও গুদামে এবং মাঠের বড় কালো ইঁদুর নিচু জমিতে বেশি আক্রমণ করে।

বাখ//এস