ঈশ্বরদীতে আলোচিত তপু হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি গ্রেফতার
ঈশ্বরদীতে আলোচিত তপুকে হত্যা করে ট্যাংকে লাশ রাখার হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক প্রধান আসামি সোহেল রানা (২২) কে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে গাজীপুরের কাশিমপুর থানার বাগবাড়ি মাদ্রাসা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।আটক সোহেল রানা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। সোহেল রানাকে গ্রেফতারের বিষয়টি রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, চলতি বছরের ২৩ জনু ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের পেছনে মশুড়িয়া পাড়া অরণ্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় আলোচিত কিশোর তপুকে হত্যা করে ট্রাঙ্কে ভরে রাখার ঘটনায় ঈশ্বরী থানার (মামলা নাম্বার ৩৪) এর অন্যতম পলাতক আসামী ম্যাচ ম্যানেজার মোঃ সোহেল রানাকে গাজিপুর মেট্রোপলিটন এলাকার কাশিমপুরের বাগবাড়ি মাদ্রাসা বাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের সাতদিন পর গত বছরের শনিবার (২২ জুন) রাত দুইটার দিকে ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের পেছনে মশুরিয়াপাড়াস্থ অরণ্য ছাত্রাবাসের তিন তলার ৩০৫ নং কক্ষের ট্রাংক থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৫ জুন দুপুরের দিকে কিশোর তপু হোসেন নিখোঁজ হয়। এই ঘটনায় নিহত তপু হোসেনের বাবা মোঃ আবুল কাশেম প্রামানিক বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
হত্যাকান্ডের রহুস্য উদঘাটনে উঠে আসে ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের পেছনে মশুরিয়াপাড়াস্থ রিক্সাচালক আবুল কাশেম প্রামানিকের ছেলে নিহত তপু হোসেন ও একই এলাকার রাজন খালাশি ছেলে ঈশা খালাশি দুইজন বন্ধু। তারা এক সঙ্গে চলাফেরা করতো। তাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে রাজশাহীর বাঘার চক রাজাপুর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে ঈশ্বরদী সরকারী কলেজ সংলগ্ন অরণ্য ছাত্রাবাসের ম্যানেজার মোঃ সোহেল সঙ্গে। এই সোহেলের মাধ্যমেই ওই ছাত্রাবাসে থাকা পাবনার আতাইকুলা থানার দুবলিয়া এলাকার জিয়াউর রহমানের ছেলে আতাইকুলা থানার হত্যা মামলার প্রধান আসামী মাদকাসক্ত জয়নাল আবেদিন জয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
তারা সবাই সংলগ্ন অপর মাতৃছায়া ছাত্রাবাসের মালিক মোঃ আলি হোসেন হাসুর দোকানে বসে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতো। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পূর্ব থেকেই নিহত তপুর বাবা আবুল কাশেমের সঙ্গে হাসুর বিরোধ চলে আসছিল। এর সঙ্গে হাসুর দোকানে বসে ছেলের মাদক সেবন করার বিষয়টি নিয়ে হাসুর সঙ্গে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। এক পর্যায় নিখোঁজের ৪ দিন আগে তপুকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করার হুমকি দেয় হাসু ও তার মা রেনু বেগম । মাতৃছায়া ছাত্রাবাস মালিক হাসুর সঙ্গে অরণ্য ছাত্রাবাসের ম্যানেজার সোহেল সুসম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের জের ধরেই তপুকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে হাসু। তখন সোহেল ও ঈশা খালাশি অরন্য ছাত্রাবাসে থাকা খুনি মামলায় জামিনে আসা জয়ের সঙ্গে আলাপ করে। তপুকে শায়েস্তা করলে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে সোহেল জানায় জয়কে। এরমধ্যে মাদকের টাকা ও হত্যা মামলা এবং ছাত্রাবাসের ভাড়ার বকেয়া টাকাসহ বেশ কিছু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে জয়। জয় তখন রাজি হয়ে যায়।
এরপরই শায়েস্তা করতে ভারতীয় ক্রাইম পেট্রোল সিরিজের ক্রাইমসিন দেখে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ওই ছাত্রাবাসে থাকা আরেক ছাত্র মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোন চুরি করে জয়। এই ফোন দিয়েই ঘটনার দিন (১৫ জুন) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তপুকে অরণ্য ছাত্রাবাসের নিজের কক্ষে ডাকে জয়। তপু তখন জয়ের কক্ষে গিয়ে দুজনে মিলে গাঁজা সেবন করে। এরই মধ্যে সোহেল ও ঈশা খালাশি ওই কক্ষে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে দেয়। এরপর তারা তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। তখন তপু চিৎকার করার চেষ্টা করলে সোহেল পেছন থেকে তপুর মুখ চেপে ধরে। আর ঈশা খালাশি ওই কক্ষে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে।
এরপর জয়ের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে তপুর হাত বেঁধে জীবিত অবস্থায় বস্তার মধ্যে ভরে রাখে। এরপর তারা চাদর দিয়ে রক্ত পরিস্কার করে। হত্যার আলামত নষ্ট করতে তারা চাদরটিকে পরিস্কার করে শুকিয়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে। একই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি সাবান ও ডিটারজেন দিয়ে ধুয়ে বালু দিয়ে পরিস্কার করে। হাতে গ্লোভস পরে ছুরির হাতল সিরিচ কাগজ দিয়ে ঘষে। এরপর ছুরিটি ঈসা খালাশি বাড়িতে তার নিজ কক্ষে স্কুল ব্যাগের ভিতরে ভরে লুকিয়ে রাখে। এরপর সোহেল ও ঈশা খালাশিকে ওই কক্ষে রেখে তপুর মোবাইল ফোন নিয়ে জয় বের হয়ে আসে। পরে নিজের বাড়ি থেকে ঈশা খালাশি একটি টিনের ট্রাংক ও পলিথিন নিয়ে ও কক্ষে যায়। এরপর সোহেল ও ঈশা নিহত তপুর মরদেহটি ট্রাংকের মধ্যে ভরে রাখে।
এরপর সোহেল ওই কক্ষে ঘটনার দিন থেকে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত থেকে পরের দিন বাড়ি চলে যায়। এদিকে জয় সুকৌশলে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে অপহরণ বলে চালানোর জন্য অপর ছাত্রের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন থেকে তপুর বাবা আবুল কাশেমের নিকট থেকে মুক্তিপন হিসেবে ৩০ হাজার টাকা বিকাশে চাওয়া হয়। ছেলের বিপদের কথা ভেবে বাবা আবুল কাশেম ওই নম্বরে খরচসহ ৭ হাজার টাকা বিকাশ করে। এরপরই ফোন নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। আর ফোনটি দাশুড়িয়ার একটি জঙ্গলময় বিপদজনক পুকুরে ফোনটি ফেলে দেয় জয়।
বাখ//আর