সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির ঝরা ঘাসে, সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে। আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই, সরষে ফুলের পাপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই। কবি জসীমউদ্দীনের রাখাল ছেলে কবিতায় লেখা এই পঙক্তিগুলো কথাই যেনো মনে করিয়ে দেয় সেই আহŸান। সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হাওয়ার সুখে মন ছুটে যায় এমন অবারিত পুষ্পে শোভিত সোনালী মাঠে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেড়া ও শাহাজাদপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হুড়াসাগর নদীর পলি মিশ্রিত করশালিখা গ্রামে মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। দিগন্ত জোড়া হলুদের বিস্তার। চরের ফসলি মাঠের চারপাশ ভরে উঠেছে হলুদের ঘ্রাণ আর সৌরভে। গার হলুদ বর্ণের এ ফুলে মৌ-মাছিরা গুন গুন করে মধু আহরণ করছে। দুর থেকে সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয়, কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। রোদে ঝলমল করছে সরিষার ক্ষেত। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। হলুদ সরিষার ফুলের অবারিত সৌন্দর্য এখন লুটিপুটি খাচ্ছে মাঠে মাঠে। শীতের কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চাষিরা সরিষার ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষা বীজ বুনে ভাল ফলনের আশা করছেন চাষিরা। মাঠের পর মাঠ প্রকৃতিতে যেন অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে। হলুদ সরিষা ফুলের মৃদু সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের এখানে-সেখানে। যেকোন মাঠে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সোনাঝরা এ ফুলের সীমাহীন ফসলি জমির বাগান। আকাবাকা মেঠো পথ, দু’পাশে দিগন্ত হারানো হলুদের সমারোহ। ফসল ক্ষেতের সর্বত্রই এখন হলুদ রঙের গালিচা বিছিয়েছে প্রকৃতি।
হুড়াসাগর পাড়ের করশালিখা গ্রামের রজব আলী, কাদের, আফতাবসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। মাঠের পর মাঠজুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সরিষা ফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের। আর এক মাস পরই সরিষা উঠবে তাদের ঘরে। তারা আরও জানান, সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় আবাদে মনোযোগ দিয়েছে এলাকার কৃষকরা।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে পাবনার নয় উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৭৪ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে দুই টন হিসেবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪৮ টন।
যমুনার চরনাগদা গ্রামের বর্গাচাষি আশরাফ জানান, চার বিঘা জমিতে তিন ধরনের সরিষা আবাদ করেছি। সরিষা ফুলে ক্ষেত ভরে গেছে। দেখে খুব ভাল লাগছে। আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে ও জাত পোকার আক্রমন থেকে সরিষা ক্ষেত রক্ষা করতে পারলে সরিষার ব্যাপক ফলন হবে। বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো। ফলন ভালো হলে এবং বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকলে প্রতি বিঘায় ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হবে। সরিষার ক্ষেতকে জাত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এদিকে সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দের রেখা ফুটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরিষা ফুলের হলুদ রঙে অপরুপ শোভা ধারণ করেছে মাঠঘাট। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণি। সরিষার ফুলের চারপাশে মৌমাছির আনাগোনা বেড়ে গেছে। কৃষি বিভাগের মতে পাবনা জেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, চলতি মওসুমে জেলায় ৩৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। গত বছর সষিার ভালো দাম পাওয়ায় চলতি মওসুমে চাষিরা সরিষা চাষে ঝুকে পড়ে। এবছর জেলা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী, আটঘড়িা, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় সরিষা আবাদ বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার ৯৭৪ হেক্টরে। আর এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করবেন চাষিরা। উন্নত জাতের বীজ, সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে ছিল বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম।
বাখ//আর