বড় চুল কাটতে বলায় মারধর, ১১মাস অজ্ঞান থাকার পরে সেই মানুদাকান্ত লাহিড়ীর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ১১ মাস আগে বাড়ির ওপরে আড্ডা দিতে ও অসংলগ্ন কথা বলতে নিষেধ করা এবং বড় চুল কাটতে বলার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুদাকান্ত লাহিড়ী (৬২) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ ওঠে মশিউর রহমান ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। তারপর থেকে দীর্ঘ ১১মাস হলো অজ্ঞান অবস্থাতেই ছিলেন বৃদ্ধ মানুদাকান্ত। অবশেষে শুক্রবার মারধরের ১১মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান ও মানুদাকান্তর ভাতিজা তুষার কান্ত লাহিড়ী। তুষার কান্ত লাহিড়ী শুরু থেকেই ১১ মাস ধরে তার কাকার সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলেন।
নিহত মানুদাকান্ত লাহিড়ী (৬২) উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের জামিরতা গুধিবাড়ী গ্রামের মৃত লক্ষীকান্ত লাহিড়ীর ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন, একই গ্রামের মশিউর রহমান (৪৫) ও তার দুই ছেলে আবির রহমান (২৫) ও নিবির রহমান সনি (২২)।
এর আগে মারধরের ঘটনায় মানুদাকান্ত লাহিড়ীর স্ত্রী শান্তনা লাহিড়ী বাদি হয়ে শাহজাদপুর থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এখন বিজ্ঞ আদালতকে মানুদাকান্ত’র মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করে এই মামলার সঙ্গে ৩০২ (হত্যাকাণ্ড) যোগ করার জন্য আবেদন দিয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহার ও নিহতের ভাতিজা তুষার কান্ত লাহিড়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে আবির রহমান ও নিবির রহমান সনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মানুদাকান্ত’র বাড়ির সামনে আড্ডা দিচ্ছিল এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিল। এ সময় মানুদাকান্ত লাহিড়ী তাদের এসব করতে বারণ করেন এবং চুল বড় থাকায় চুল কাটতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবির ও সনির বাবা মশিউর রহমান মানুদাকান্তকে মোবাইলে কল করে জরুরি কথা আছে বলে তাদের বাড়ির সামনে ডেকে নেন।
মানুদাকান্ত সরল বিশ্বাসে সেখানে গেলে মশিউর রহমানের নির্দেশে তার ২ ছেলে আবির ও সনি তাদের সহযোগী কয়েকজন বখাটে যুবকসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে মানুদাকান্ত লাহিড়ীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বিভিন্ন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর এক পর্যায়ে মানুদাকান্তের নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে বলেন। পরে তাকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তুষার কান্ত লাহিড়ী বলেন, আমরা সেদিন রাতেই কাকা কে বগুড়া থেকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। যেহেতু মারধরে তার মাথার খুলিও ভেঙ্গে গিয়েছিল তাই সেখানে তার মাথার গুরুতর অস্ত্রপচারের পরে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে ওখানেই ভর্তি রাখা হয়েছিল। এরপর যখন আমরা আর খরচ যোগাতে পারছিলাম না এবং জ্ঞানও ফিরছিল না তখন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শুক্রবার
১৩ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই অজ্ঞান অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। এই ১১মাস আমি ও তার ছেলে তনয় লাহিড়ী কাকার সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলাম। তুষার বলেন, আমাদের অনেক সম্পদের ক্ষতি করে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আমরা তার চিকিৎসার পিছনে খরচ করে নিঃশ্ব হয়ে গেছি তবুও কাকাকে বাঁচাতে পারলাম না। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার জ্ঞানই ফিরলোনা। এরপর শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ হস্তান্তরের পরে রাতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানায় তুষার।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তিনি মারা যাওয়ার পরে বিষয়টি শাহজাদপুর থানা পুলিশকে অবগত করলে শাহজাদপুর থানা পুলিশের তথ্যমতে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পূর্বক লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবার পরে মরদেহ শেষকৃত্যের জন্য তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভিকিটিমের মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবগত করা হয়েছে এবং এই মামলার সঙ্গে ৩০২ (হত্যাকাণ্ড) যোগ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রগণ করা হবে।
বাখ//আর