০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী জামাই-বউ মেলা

মোঃ রেজাউল করিম, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় লালমনিরহাটের বড়বাড়ি শহীদ আবুল কাশেম ডিগ্রি কলেজ মাঠে পনের দিনব্যাপী গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামাই-বউ মেলা শুরু হয়েছে।

 

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর‌্যন্ত। এবারের মেলায় মৎস্য স্টল, পিঠা স্টল ও অন্যান্য প্রসাধনী পণ্যের স্টল স্থান পেয়েছে।

 

মেলার প্রথম দিন উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গলায় মালা ও শাড়ি পড়ে মেয়ে-জামাই মেলায় এসে আনন্দ উপভোগ করেছেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ও আশপাশের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন। মেলায় হরেক রকমের পিঠা ও নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় প্রতিদিন সকালে মৎস্য উৎসব ও বিকেল থেকে রাত পর‌্যন্ত চলবে পিঠা উৎসব।

 

এদিকে মেলা উপলক্ষে সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এসেছেন মেয়ে ও জামাই। গলায় মালা ও লাল শাড়ি পড়ে নতুন রূপে সেজে-গুজে মেয়ে-জামাই এসেছে মেলায়। তারা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য কিনছে বড় মাছ ও নানান রকমের মিঠা। নতুন জামাই বাড়িতে আসবে বলে শ্বশুরদের ও কিনতে হচ্ছে বড় বড় মাছ।

 

মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলেন, “অনেক আশা নিয়ে মাছ, পিঠা নিতে এ মেলায় এসেছি। কিন্তু বিক্রেতারা মাছ ও পিঠার দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। তবে দাম যাই হোক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মেলায় আসা বউ ও জামাই পছন্দ মতো মাছ ও পিঠা কিনে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছেন।”

 

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, “আড়তেই দাম চড়া। এ কারণে পরিবহন খরচ নিয়ে এই মাছগুলোর বিক্রি করতে হয়। মেলায় বিক্রি বেশি হয় তাই লাভ কম করি।” পিঠা বিক্রেতারা বলছেন, “সব জিনিসেরই দাম বেশি হওয়ায় এ বছর পিঠা দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।”

 

মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফারুক সিদ্দিকী জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে জামাই-বউ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জামাই মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবে আর হরেক রকম পিঠা খাবে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের শিশুরা বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতির মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। সব মিলিয়ে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই মূলত এ ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

ফারুক সিদ্দিকী আরও জানান, এই মেলাটির তাৎপর্য হলো এ অঞ্চলের জামাইরা বউ নিয়ে সকাল বেলায় এই মাছের মেলায় আসেন। বড় বড় মাছ নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যাবেন। শাশুড়ি দুপুরের রান্না করবেন। শ্বশুড়-শাশুড়ি ও তার অন্যান্য আত্নীয় স্বজন মাছের তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন। খেয়ে আবার বিকেলে পিঠা মেলায় এসে বিভিন্ন গ্রামীণ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবে।

 

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১০:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
৯৯ জন দেখেছেন

লালমনিরহাটে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী জামাই-বউ মেলা

আপডেট : ১০:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় লালমনিরহাটের বড়বাড়ি শহীদ আবুল কাশেম ডিগ্রি কলেজ মাঠে পনের দিনব্যাপী গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামাই-বউ মেলা শুরু হয়েছে।

 

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর‌্যন্ত। এবারের মেলায় মৎস্য স্টল, পিঠা স্টল ও অন্যান্য প্রসাধনী পণ্যের স্টল স্থান পেয়েছে।

 

মেলার প্রথম দিন উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গলায় মালা ও শাড়ি পড়ে মেয়ে-জামাই মেলায় এসে আনন্দ উপভোগ করেছেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ও আশপাশের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন। মেলায় হরেক রকমের পিঠা ও নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় প্রতিদিন সকালে মৎস্য উৎসব ও বিকেল থেকে রাত পর‌্যন্ত চলবে পিঠা উৎসব।

 

এদিকে মেলা উপলক্ষে সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এসেছেন মেয়ে ও জামাই। গলায় মালা ও লাল শাড়ি পড়ে নতুন রূপে সেজে-গুজে মেয়ে-জামাই এসেছে মেলায়। তারা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য কিনছে বড় মাছ ও নানান রকমের মিঠা। নতুন জামাই বাড়িতে আসবে বলে শ্বশুরদের ও কিনতে হচ্ছে বড় বড় মাছ।

 

মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলেন, “অনেক আশা নিয়ে মাছ, পিঠা নিতে এ মেলায় এসেছি। কিন্তু বিক্রেতারা মাছ ও পিঠার দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। তবে দাম যাই হোক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মেলায় আসা বউ ও জামাই পছন্দ মতো মাছ ও পিঠা কিনে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছেন।”

 

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, “আড়তেই দাম চড়া। এ কারণে পরিবহন খরচ নিয়ে এই মাছগুলোর বিক্রি করতে হয়। মেলায় বিক্রি বেশি হয় তাই লাভ কম করি।” পিঠা বিক্রেতারা বলছেন, “সব জিনিসেরই দাম বেশি হওয়ায় এ বছর পিঠা দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।”

 

মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফারুক সিদ্দিকী জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে জামাই-বউ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জামাই মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবে আর হরেক রকম পিঠা খাবে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের শিশুরা বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতির মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। সব মিলিয়ে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই মূলত এ ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

ফারুক সিদ্দিকী আরও জানান, এই মেলাটির তাৎপর্য হলো এ অঞ্চলের জামাইরা বউ নিয়ে সকাল বেলায় এই মাছের মেলায় আসেন। বড় বড় মাছ নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যাবেন। শাশুড়ি দুপুরের রান্না করবেন। শ্বশুড়-শাশুড়ি ও তার অন্যান্য আত্নীয় স্বজন মাছের তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন। খেয়ে আবার বিকেলে পিঠা মেলায় এসে বিভিন্ন গ্রামীণ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবে।

 

বাখ//এস