০৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান ছিদ্দিকুর রহমান

হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি

বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। বার্ধক্য জনিত নানান রোগে আক্রান্ত তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি পেতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বলছিলাম কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কাগজীগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মৃত গাজী মামুদ কাগজীর ছেলে ৭১ সালের রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজীর কথা। মঙ্গলবার (৩১ডিসেম্বর) সকালে দীর্ঘ সময় কথা হয় তাঁর সাথে। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে ৭১ এর রনাঙ্গনের ভীবিষিকাময় দিনগুলির স্মৃতিচারণ করেন।

৭১ এর ২৫শে মার্চ এর পর ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন ও এলাকার সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে গ্যারিলা সংগঠন করে ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী ইপিআর সদস্য আঃ হাফিজের কাছে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং এপ্রিলের ৯/১০ তারিখে নেত্রকোনা হয়ে ভারতের মেঘালয়ের বারেঙ্গাপাড়ায় ন্যাপ-কমিউনিষ্ট ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে যান। সেখান থেকে আসামের তেজপুর সালনী বাড়িতে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ শেষে বামনহাট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঁচদিন উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরে সেখানকার কোম্পানী কমান্ডার অধ্যাপক নূরুল হকের অধীনে সহযোদ্ধা হোসেন আহম্মদ, আবদুল হেকিম ও ফজলুর রহমান খাঁনকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের ১১ নং সেক্টরে গ্যারিলা যোদ্ধা হিসেবে (ডিজি নং-১১৬২৩৮৪) যোগদান করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুড়ি, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান, রাশু চৌধুরী, কাজী আফতাব, এরশাদ আলী ও আবু ছালেকের সাথে বিভিন্ন রনাঙ্গণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর ৭১ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ জানুয়ারী ১৯৭২ ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর কাছে রনাঙ্গণে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র মার্ক ৪ রাইফেল নং- ২৭১১০ জমা দেন।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী এ প্রতিনিধিকে জানান, জীবন বাজী রেখে গ্যারিলা যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সহযোদ্ধারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমি রাজনৈতিক রোষানলে পরে দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার পরেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাইনি। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম তাহলে মরেও সুখ পেতাম।

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও তাঁর সহযোদ্ধা কাজী আফতাব বলেন, ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যাবতীয় প্রমাণাদি থাকা সত্যেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্যাজেট ভুক্ত হতে পারেননি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

বাখ//ইস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৫:৫৯:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
১৬৩ জন দেখেছেন

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান ছিদ্দিকুর রহমান

আপডেট : ০৫:৫৯:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। বার্ধক্য জনিত নানান রোগে আক্রান্ত তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি পেতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বলছিলাম কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কাগজীগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মৃত গাজী মামুদ কাগজীর ছেলে ৭১ সালের রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজীর কথা। মঙ্গলবার (৩১ডিসেম্বর) সকালে দীর্ঘ সময় কথা হয় তাঁর সাথে। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে ৭১ এর রনাঙ্গনের ভীবিষিকাময় দিনগুলির স্মৃতিচারণ করেন।

৭১ এর ২৫শে মার্চ এর পর ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন ও এলাকার সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে গ্যারিলা সংগঠন করে ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী ইপিআর সদস্য আঃ হাফিজের কাছে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং এপ্রিলের ৯/১০ তারিখে নেত্রকোনা হয়ে ভারতের মেঘালয়ের বারেঙ্গাপাড়ায় ন্যাপ-কমিউনিষ্ট ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে যান। সেখান থেকে আসামের তেজপুর সালনী বাড়িতে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ শেষে বামনহাট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঁচদিন উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরে সেখানকার কোম্পানী কমান্ডার অধ্যাপক নূরুল হকের অধীনে সহযোদ্ধা হোসেন আহম্মদ, আবদুল হেকিম ও ফজলুর রহমান খাঁনকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের ১১ নং সেক্টরে গ্যারিলা যোদ্ধা হিসেবে (ডিজি নং-১১৬২৩৮৪) যোগদান করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুড়ি, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান, রাশু চৌধুরী, কাজী আফতাব, এরশাদ আলী ও আবু ছালেকের সাথে বিভিন্ন রনাঙ্গণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর ৭১ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ জানুয়ারী ১৯৭২ ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর কাছে রনাঙ্গণে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র মার্ক ৪ রাইফেল নং- ২৭১১০ জমা দেন।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী এ প্রতিনিধিকে জানান, জীবন বাজী রেখে গ্যারিলা যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সহযোদ্ধারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমি রাজনৈতিক রোষানলে পরে দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার পরেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাইনি। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম তাহলে মরেও সুখ পেতাম।

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও তাঁর সহযোদ্ধা কাজী আফতাব বলেন, ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যাবতীয় প্রমাণাদি থাকা সত্যেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্যাজেট ভুক্ত হতে পারেননি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

বাখ//ইস