০৮:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহুতল ভবন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, শাহরাস্তিতে নিজ উদ্যোগেই সড়কের পাশে দখলমুক্ত করছেন ব্যবসায়ীরা

মোঃ জামাল হোসেন, শাহরাস্তি (চাঁদপুর) প্রতিনিধি

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে অবৈধভাবে দখল করে রাখা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ অভিযানে নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত এক সপ্তাহে শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক, মেহের স্টেশন ও শাহরাস্তি গেট দোয়াভাঙ্গা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনদিনের বিরতি দিয়ে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২৪) আবারো উচ্ছেদ অভিযানে নামে কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিকেলে মেহের কালীবাড়ি বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এদিকে গত কদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী শাহরাস্তি গেইট দোয়াভাঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। এ সময় অবৈধ দখলে থাকা ক’টি বহুতল ভবনের অংশ ভেঙ্গে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয়। বাজারের উত্তর পাশের বেশ ক’টি বহুতল ভবন অবৈধভাবে সড়কের জায়গা দখল করে নির্মিত হওয়ায় সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিলে ভবন মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। সময় পেয়েই ভবন মালিকরা সরকারি সম্পত্তি থেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেন। রাতদিন তারা নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে থাকেন।

এর ফলে শাহরাস্তি গেইট (দোয়াভাঙ্গা) এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ স্থানটিকে এখন চিনতে কষ্ট হয়। সম্মুখে থাকা দোকানগুলো ইতোমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। কোনো সাইনবোর্ড, ব্যানার নেই। বর্তমানে এক কাপ চা খাওয়ার মতো পরিস্থিতিও বিরাজ করছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে, অপরদিকে ভবন মালিকগণ চার-পাঁচতলা ভবনের সামনের অংশ দিনরাত লোক লাগিয়ে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছেন।

এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা চৌধুরী। পালাক্রমে তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে টহল দিতে দেখা গেছে। উচ্ছেদ অভিযানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম।

শাহরাস্তিতে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান এটি। অনেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, বিগত সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাদের বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনকি তাদেরকে ভবন সরিয়ে নিতে বলা হয়নি। বর্তমান সময়ের মাপ অনুযায়ী তাদের ভবন সড়ক ও জনপথের জায়গায় নির্মিত হওয়ায় তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তারা জানান, এতোগুলো বহুতল ভবন নির্মিত হলেও কখনোই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আপত্তি করেনি। ভবন নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করলে হয়তো এতোগুলো ভবন ক্ষতির সম্মুখীন হতো না। সকলের চোখের সামনে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ অতীতে লক্ষ্য করা যায়নি। এ জন্যে স্থানীয় ভবন মালিকগণ তাদেরকে দায়ী করেন।

অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি জায়গা উদ্ধারের অভিযানে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষকে হাত করে পুনরায় যাতে দখল করা না হয় সে বিষয়ে তারা জোর দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত জানান, দোয়াভাঙ্গা এলাকায় সড়ক বিভাগের রাস্তাসহ দুপাশে প্রায় ১৮০ ফুট করে জায়গা রয়েছে।
অভিযান পরিচালনার সময় শাহরাস্তি থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করে চলছে।

বাখ//ইস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৫:১৩:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
১০৮ জন দেখেছেন

বহুতল ভবন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, শাহরাস্তিতে নিজ উদ্যোগেই সড়কের পাশে দখলমুক্ত করছেন ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ০৫:১৩:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে অবৈধভাবে দখল করে রাখা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ অভিযানে নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত এক সপ্তাহে শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক, মেহের স্টেশন ও শাহরাস্তি গেট দোয়াভাঙ্গা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনদিনের বিরতি দিয়ে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২৪) আবারো উচ্ছেদ অভিযানে নামে কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিকেলে মেহের কালীবাড়ি বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এদিকে গত কদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী শাহরাস্তি গেইট দোয়াভাঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। এ সময় অবৈধ দখলে থাকা ক’টি বহুতল ভবনের অংশ ভেঙ্গে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয়। বাজারের উত্তর পাশের বেশ ক’টি বহুতল ভবন অবৈধভাবে সড়কের জায়গা দখল করে নির্মিত হওয়ায় সেগুলো ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিলে ভবন মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। সময় পেয়েই ভবন মালিকরা সরকারি সম্পত্তি থেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেন। রাতদিন তারা নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে থাকেন।

এর ফলে শাহরাস্তি গেইট (দোয়াভাঙ্গা) এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ স্থানটিকে এখন চিনতে কষ্ট হয়। সম্মুখে থাকা দোকানগুলো ইতোমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। কোনো সাইনবোর্ড, ব্যানার নেই। বর্তমানে এক কাপ চা খাওয়ার মতো পরিস্থিতিও বিরাজ করছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে, অপরদিকে ভবন মালিকগণ চার-পাঁচতলা ভবনের সামনের অংশ দিনরাত লোক লাগিয়ে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছেন।

এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা চৌধুরী। পালাক্রমে তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া শাহরাস্তি মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে টহল দিতে দেখা গেছে। উচ্ছেদ অভিযানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম।

শাহরাস্তিতে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উচ্ছেদ অভিযান এটি। অনেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, বিগত সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাদের বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনকি তাদেরকে ভবন সরিয়ে নিতে বলা হয়নি। বর্তমান সময়ের মাপ অনুযায়ী তাদের ভবন সড়ক ও জনপথের জায়গায় নির্মিত হওয়ায় তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তারা জানান, এতোগুলো বহুতল ভবন নির্মিত হলেও কখনোই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আপত্তি করেনি। ভবন নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করলে হয়তো এতোগুলো ভবন ক্ষতির সম্মুখীন হতো না। সকলের চোখের সামনে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ অতীতে লক্ষ্য করা যায়নি। এ জন্যে স্থানীয় ভবন মালিকগণ তাদেরকে দায়ী করেন।

অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি জায়গা উদ্ধারের অভিযানে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষকে হাত করে পুনরায় যাতে দখল করা না হয় সে বিষয়ে তারা জোর দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত জানান, দোয়াভাঙ্গা এলাকায় সড়ক বিভাগের রাস্তাসহ দুপাশে প্রায় ১৮০ ফুট করে জায়গা রয়েছে।
অভিযান পরিচালনার সময় শাহরাস্তি থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করে চলছে।

বাখ//ইস