০৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুলের বাজারে কৃষকের মাঝে স্বস্তি, ভারতীয় কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি

রাফিউল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

ফুলের রাজ্য গাতখালীতে চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুলের বাজারে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে ভারতীয় কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি করেছেন এতদ্বাঅঞ্চলের ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা।

তাদের অভিযোগ, দেশের একশ্রেণির অর্থলোভী আমদানিকারক কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে ভারতীয় কৃত্রিমফুল আমদানি করছেন। ফলে, দেশীয় ফুলের বাজারে এর অশুভ প্রভাব পড়ছে। অবিলম্বে ভারতীয় ফুল আমদানি বন্ধ না করা হলে দেশীয় ফুলের বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনই শঙ্কার কথা জানালেন ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফরসহ ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (০২জানুয়ারি) সরেজমিনে ফুলবাজার পরিদর্শনে গেলে ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানালেন,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলেররাজ্য যশোরের গদখালীতে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগতমান অনেক ভালো। ফুলের কাঙ্ক্ষিত বাজারদর পেয়ে কৃষকেরাও তাই বেশ খুশি। এখানকার উৎপাদিত ফুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। সরকারের উচিত অবিলম্বে ভারতীয় ফুল আমদানি নিষিদ্ধ করা। অন্যথায় ভারতীয় ফুলের অশুভ আগ্রাসনের কবলে দেশীয় ফুলের বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, ফুলের বাজার কেন্দ্রীক একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ- সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তৎকালীন আওয়ামী প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট এই চাঁদাবাজ- সিন্ডিকেটের জিম্মি হয়ে পড়ে এখানকার ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট সদস্যরা ফুলের নিত্য বাজারদর নিয়ন্ত্রণে মুখ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতো। শুধু তাই নয়, তাদের বেধে দেওয়া বাজারদরের বাইরে ফুল বেচাকেনা ছিল একপ্রকার অসম্ভব।

অনেক ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট সদস্যদের বেধে দেওয়া বাজারদর ও বাকি টাকায় ফুল বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। এতদ্বাঞ্চলের ভুক্তভোগী বহু কৃষকের দাবি বাকি টাকায় ফুল বিক্রির পাওনা লাখ লাখ টাকা দেওয়ার ভয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এসব ব্যবসায়ী নামধারী চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট সদস্যরা আত্মগোপন করেছে। এখন তারা ফুলের বাজার ঘিরে নানা ধরনের অপপ্রচার মিথ্যাচার করে ফুলচাষীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করছে। ফুলের বাজার ধ্বংস করতেও তারা এখন মরিয়া হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমকেও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রচেষ্টা করছে বলে জানান গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর।

কথা হয় ফুল ব্যবসায়ী সৈয়দ পাড়া গ্রামের হযরত আলীর সাথে । তিনি জানালেন, আমরা এখন চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুল বেচাকেনা করতে পারছি। ফুল বিক্রি করতে বাড়তি কোন খরচ নেই একটি টাকাও কাউকে দিতে হচ্ছে না।

হাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম একজন সফল গোলাপ চাষী। তিনি ক্ষোভের সাথে জানালেন, ভারতীয় কৃত্রিম ফুলের কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সে কারণে আমরা ফুলের দাম কিছুটা কম পাচ্ছি।

একই গ্রামের শরিফুল, রাসেল ও রেজাউল জানালেন, আমাদের উৎপাদিত ফুল গুণগতমান অনেক ভালো। এবছর আরো ভালো দাম পেতাম কিন্তু ভারতীয় ফুলের কারণে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছি না। তারা বলেন, অবিলম্বে এলসির মাধ্যমে ভারতীয় ফুল আমদানি বন্ধ করো দাবী জানাচ্ছি।

সৈয়দপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও ফুল চাষী হযরত আলী জানালেন, গোলাপ, রজনীগন্ধা, প্রিন্ট গ্লাডিউলাস, সাদা গ্লাডিওলাস ও জারবেরা ফুলের উৎপাদন, আমদানি ও বেচাকেনা খুব ভালো। বাজার দরও ভালো। তার দাবি প্রতিপিস গোলাপ ৭ থেকে ৮ টাকা, রজনীগন্ধা ও ভুট্টা ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রিন্ট ২৪ থেকে ২৫ টাকা, সাদা গ্লাডিওলাস ১৩ থেকে ১৪ টাকা, জারবেরা ১৬ থেকে ১৮ টাকা আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুল চাষী আলমগীর টাওরা গ্রামের আব্দুল হাকিম ও গদখালী গ্রামের গোলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গোলাপ ক্ষেতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা আগের তুলনায় এখন অতোটা ফলপ্রসূ ও কার্যকর হচ্ছে না। এতে তাদের ফুল উৎপাদনে কীটনাশক কিনতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

পানিসারা গ্রামের কিসমত সরদার জানালেন, তার দুই বিঘা সেডের জারবেরা ফুলের চাষ রয়েছে। কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এই জারবেরা কৃষক জানালেন ফুলের ভালো দাম পাওয়ায় চাষের পরিধি আরো বাড়াতে চান।

হাড়িয়া নিমতলার গোলাপ চাষী রেজাউল হক, নীলকন্ঠনগর গ্রামের আব্দুল আহাদ, আকুই গ্রামের মফিজুর রহমান, কৃষ্ণনগর গ্রামের ডাক্তার শামসুল হক ও সৈয়দপাড়া গ্রামের খাইরুল হাসান জানালেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সার ,কীটনাশক ও সেচসহ মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত হচ্ছে না।

বাখ//ইস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৬:০৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
১১৯ জন দেখেছেন

চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুলের বাজারে কৃষকের মাঝে স্বস্তি, ভারতীয় কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি

আপডেট : ০৬:০৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

ফুলের রাজ্য গাতখালীতে চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুলের বাজারে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে ভারতীয় কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি করেছেন এতদ্বাঅঞ্চলের ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা।

তাদের অভিযোগ, দেশের একশ্রেণির অর্থলোভী আমদানিকারক কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে ভারতীয় কৃত্রিমফুল আমদানি করছেন। ফলে, দেশীয় ফুলের বাজারে এর অশুভ প্রভাব পড়ছে। অবিলম্বে ভারতীয় ফুল আমদানি বন্ধ না করা হলে দেশীয় ফুলের বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনই শঙ্কার কথা জানালেন ফুলচাষী ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফরসহ ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (০২জানুয়ারি) সরেজমিনে ফুলবাজার পরিদর্শনে গেলে ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানালেন,আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলেররাজ্য যশোরের গদখালীতে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগতমান অনেক ভালো। ফুলের কাঙ্ক্ষিত বাজারদর পেয়ে কৃষকেরাও তাই বেশ খুশি। এখানকার উৎপাদিত ফুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। সরকারের উচিত অবিলম্বে ভারতীয় ফুল আমদানি নিষিদ্ধ করা। অন্যথায় ভারতীয় ফুলের অশুভ আগ্রাসনের কবলে দেশীয় ফুলের বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, ফুলের বাজার কেন্দ্রীক একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ- সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তৎকালীন আওয়ামী প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট এই চাঁদাবাজ- সিন্ডিকেটের জিম্মি হয়ে পড়ে এখানকার ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট সদস্যরা ফুলের নিত্য বাজারদর নিয়ন্ত্রণে মুখ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতো। শুধু তাই নয়, তাদের বেধে দেওয়া বাজারদরের বাইরে ফুল বেচাকেনা ছিল একপ্রকার অসম্ভব।

অনেক ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট সদস্যদের বেধে দেওয়া বাজারদর ও বাকি টাকায় ফুল বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। এতদ্বাঞ্চলের ভুক্তভোগী বহু কৃষকের দাবি বাকি টাকায় ফুল বিক্রির পাওনা লাখ লাখ টাকা দেওয়ার ভয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এসব ব্যবসায়ী নামধারী চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট সদস্যরা আত্মগোপন করেছে। এখন তারা ফুলের বাজার ঘিরে নানা ধরনের অপপ্রচার মিথ্যাচার করে ফুলচাষীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করছে। ফুলের বাজার ধ্বংস করতেও তারা এখন মরিয়া হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমকেও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রচেষ্টা করছে বলে জানান গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর।

কথা হয় ফুল ব্যবসায়ী সৈয়দ পাড়া গ্রামের হযরত আলীর সাথে । তিনি জানালেন, আমরা এখন চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেট মুক্ত ফুল বেচাকেনা করতে পারছি। ফুল বিক্রি করতে বাড়তি কোন খরচ নেই একটি টাকাও কাউকে দিতে হচ্ছে না।

হাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম একজন সফল গোলাপ চাষী। তিনি ক্ষোভের সাথে জানালেন, ভারতীয় কৃত্রিম ফুলের কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সে কারণে আমরা ফুলের দাম কিছুটা কম পাচ্ছি।

একই গ্রামের শরিফুল, রাসেল ও রেজাউল জানালেন, আমাদের উৎপাদিত ফুল গুণগতমান অনেক ভালো। এবছর আরো ভালো দাম পেতাম কিন্তু ভারতীয় ফুলের কারণে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছি না। তারা বলেন, অবিলম্বে এলসির মাধ্যমে ভারতীয় ফুল আমদানি বন্ধ করো দাবী জানাচ্ছি।

সৈয়দপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও ফুল চাষী হযরত আলী জানালেন, গোলাপ, রজনীগন্ধা, প্রিন্ট গ্লাডিউলাস, সাদা গ্লাডিওলাস ও জারবেরা ফুলের উৎপাদন, আমদানি ও বেচাকেনা খুব ভালো। বাজার দরও ভালো। তার দাবি প্রতিপিস গোলাপ ৭ থেকে ৮ টাকা, রজনীগন্ধা ও ভুট্টা ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রিন্ট ২৪ থেকে ২৫ টাকা, সাদা গ্লাডিওলাস ১৩ থেকে ১৪ টাকা, জারবেরা ১৬ থেকে ১৮ টাকা আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুল চাষী আলমগীর টাওরা গ্রামের আব্দুল হাকিম ও গদখালী গ্রামের গোলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গোলাপ ক্ষেতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা আগের তুলনায় এখন অতোটা ফলপ্রসূ ও কার্যকর হচ্ছে না। এতে তাদের ফুল উৎপাদনে কীটনাশক কিনতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

পানিসারা গ্রামের কিসমত সরদার জানালেন, তার দুই বিঘা সেডের জারবেরা ফুলের চাষ রয়েছে। কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এই জারবেরা কৃষক জানালেন ফুলের ভালো দাম পাওয়ায় চাষের পরিধি আরো বাড়াতে চান।

হাড়িয়া নিমতলার গোলাপ চাষী রেজাউল হক, নীলকন্ঠনগর গ্রামের আব্দুল আহাদ, আকুই গ্রামের মফিজুর রহমান, কৃষ্ণনগর গ্রামের ডাক্তার শামসুল হক ও সৈয়দপাড়া গ্রামের খাইরুল হাসান জানালেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সার ,কীটনাশক ও সেচসহ মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত হচ্ছে না।

বাখ//ইস