০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেলের প্রকোষ্ঠ থেকে রক্ষা পেলেও কবরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের বাসিন্দা শামসুল হক

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধি

মো. শামসুল হক (৫৮)। আপদামস্তক বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শের এক আওয়ামী লীগার। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি তার। এক সময় ছিলেন বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। আমৃত্যু ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলার চাখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯৬’র অসহযোগ আন্দোলন ও ২০০১-০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন সক্রিয় এক অমিত সাহসী কর্মী। বিগত নির্বাচনগুলোতেও নৌকাকে বিজয়ী করতে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। বিভিন্ন সময় হয়রাণিমূলক মামলা-হামলারও শিকার হয়েছেন।

গত টানা প্রায় ১৬ বছর নিজ দল আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে দলের কতিপয় নেতার মধুরেহণের সময় নিবেদিত প্রাণ শামসুল হক ছিলেন অপাক্তেয়, বঞ্চিত। দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। বসবাস করতেন জীর্ণশীর্ন ঘরে। ক্ষমতার আমলে আওয়ামী লীগের ‘পিলার’ মুজিব অন্তঃপ্রাণ শামসুল হকদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও অনেক নেতা ঠিকই ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছেন। অথচ ‘বঞ্চিত’ শামসুল হকদের মত মুজিববাদী নিবেদিত প্রাণ কর্মীরাই ‘ফিনিক্স পাখির’ মত দলের ‘আত্মা’ হয়ে দুর্দিনে, সংকটে আওয়ামী লীগকে পুর্নজীবিত করে তোলেন। কিন্তু দলের সুদিনে তাদের ‘প্রাপ্তির ঝুলি’ থাকে শূণ্য।

২৪’র ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দায়েরকৃত দুটি মামলার আসামী হয়ে গ্রেফতার এড়াতে শামসুল হক বেশীরভাগ সময় আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। এ দুঃসময়ে তার কিংবা তার পরিবারের খোঁজ নেয়নি দলের কোন নেতা। শামসুল হক হয়রাণিমূলক মামলায় কারাগারের (জেলহাজত) প্রকোষ্ঠে না যেতে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়িয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও তাকে ‘অমোঘ মৃত্যু’ কবরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের বাসিন্দা করে দিয়েছে।

বুধবার (১ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মহাখালীতে খালার বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী,এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারী) বাদ আসর উপজেলার চাখারের মমতাজ পার্ক মাঠে জানাজা শেষে পার্ক সংলগ্ন বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তাকে হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের চোখে ঘোর অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছে।

 

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৩:৪২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
১১৫ জন দেখেছেন

জেলের প্রকোষ্ঠ থেকে রক্ষা পেলেও কবরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের বাসিন্দা শামসুল হক

আপডেট : ০৩:৪২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

মো. শামসুল হক (৫৮)। আপদামস্তক বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শের এক আওয়ামী লীগার। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি তার। এক সময় ছিলেন বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। আমৃত্যু ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলার চাখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯৬’র অসহযোগ আন্দোলন ও ২০০১-০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন সক্রিয় এক অমিত সাহসী কর্মী। বিগত নির্বাচনগুলোতেও নৌকাকে বিজয়ী করতে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। বিভিন্ন সময় হয়রাণিমূলক মামলা-হামলারও শিকার হয়েছেন।

গত টানা প্রায় ১৬ বছর নিজ দল আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে দলের কতিপয় নেতার মধুরেহণের সময় নিবেদিত প্রাণ শামসুল হক ছিলেন অপাক্তেয়, বঞ্চিত। দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। বসবাস করতেন জীর্ণশীর্ন ঘরে। ক্ষমতার আমলে আওয়ামী লীগের ‘পিলার’ মুজিব অন্তঃপ্রাণ শামসুল হকদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও অনেক নেতা ঠিকই ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছেন। অথচ ‘বঞ্চিত’ শামসুল হকদের মত মুজিববাদী নিবেদিত প্রাণ কর্মীরাই ‘ফিনিক্স পাখির’ মত দলের ‘আত্মা’ হয়ে দুর্দিনে, সংকটে আওয়ামী লীগকে পুর্নজীবিত করে তোলেন। কিন্তু দলের সুদিনে তাদের ‘প্রাপ্তির ঝুলি’ থাকে শূণ্য।

২৪’র ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দায়েরকৃত দুটি মামলার আসামী হয়ে গ্রেফতার এড়াতে শামসুল হক বেশীরভাগ সময় আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। এ দুঃসময়ে তার কিংবা তার পরিবারের খোঁজ নেয়নি দলের কোন নেতা। শামসুল হক হয়রাণিমূলক মামলায় কারাগারের (জেলহাজত) প্রকোষ্ঠে না যেতে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়িয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও তাকে ‘অমোঘ মৃত্যু’ কবরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের বাসিন্দা করে দিয়েছে।

বুধবার (১ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মহাখালীতে খালার বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী,এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারী) বাদ আসর উপজেলার চাখারের মমতাজ পার্ক মাঠে জানাজা শেষে পার্ক সংলগ্ন বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তাকে হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের চোখে ঘোর অমানিশার অন্ধকার নেমে এসেছে।

 

বাখ//আর