০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছেলে ফিরবেই অপেক্ষায় মা রিতা রানী !

মো: খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

গায়ের রং ফর্সা, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, পরনে ব্লু রঙের সোয়েটার, জিন্স প্যান্ট, শরীরের গঠন হালকা-পাতলা, মুখমন্ডল কিছুটা লম্বা। নাম শ্রী জীবন চন্দ্র দাস(১৮), পিতা: নির্মল চন্দ্র দাস, মাতা: রিতা রানী, গ্রাম: উমরপাইল, থানা: কোতোয়ালি, সদর,দিনাজপুর। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করে জীবন চন্দ্র দাস। নববর্ষের সাথে নতুন অতিথির আগমনে সেদিন পুরো পরিবারটিকে করেছিল ছন্দময় শাব্দিকতা ভরা একটি সুখের সংসার। এভাবেই চলছিল নির্মলা ও রিতার জীবনচক্র। কিন্তু জীবনের চলার পথ বড়ই নিষ্ঠুর। তবে এমন নিষ্ঠুরতার লক্ষ্য হবে নির্মলা রিতার সংসার তা ছিল হতচকিত।

গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় শ্রী জীবন চন্দ্র দাস। সমস্ত দিন গেল। অপেক্ষায় মা-বাবা ও ছোট বোন সুস্মিতা রানী দাস। রাত দশটা দিকে কল দিল ছেলের মোবাইল নাম্বারে। মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। অজানা আতঙ্কে বুক ধরফর করা শুরু হলো নির্মলা ও রিতা রানীর। নিদ্রাহীন একমাত্র ছোট মন সুস্মিতা রানী দাস। নিকট আত্মীয়সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর না পেয়ে পরের দিন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা নির্মল চন্দ্র দাস। ডাইরি নম্বর ১২৩৯।

এর নয় দিন পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখে কোতোয়ালি থানার ৫ নং শশরা উনিয়নের অন্তর্গত উমরপাইল মৌজার আত্রাই নদীর পূর্ব পাশে জনৈক মেজরের আম বাগানের পশ্চিম পাশে চারা নারিকেলের গাছের নিকট নদীর ধারের উপর পাওয়া যায় একটি মাথার খুলি। সেই মাথার খুলি টিকেই জীবন চন্দ্র দাসের মাথার খুলি হিসাবে চিহ্নিত করে তা ডিএনএ টেস্টের জন্য মহামান্য আদালতে আবেদন করেন সাব ইন্সপেক্টর তৌহিদুল। এরপর ২০২৪ সালের জুন মাসের ২৭ তারিখ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় মাথার খুলির সাথে নির্মল চন্দ্র দাসের ডিএনএ ম্যাচ করেছে। অর্থাৎ এই খুলিটি জীবনচন্দ্র দাশের এমনই বলছে ডিএনএ রিপোর্ট। তবে পুলিশের কাছে সে ডিএনএ রিপোর্ট চাইতে গেলে উল্টো গালি খেতে হয় নির্মল চন্দ্র দাস কে।
বাংলা খবরকে বাবা নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, আমার ছেলের খুব শখ ছিল সে বড় হয়ে সেনাবাহিনী অথবা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে যোগ দেবে। আমরাও আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ নিয়তি নিষ্ঠুর খেলায় হারিয়ে ফেললাম আমার বড় ছেলেকে। অনেকের কাছে গিয়েছি কোন বিচার পাইনি। আমি পুলিশকে বলেছি এই খুনের মামলায় আমি বাদী হব কিন্তু মামলায় আমাকে না বাদী করে পুলিশ বাদী হয়েছে। এটি কি কারনে হলো তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। আপনারা সাংবাদিকরা জাতির বিবেক বিষয়টি আপনারাও ভেবে দেখবেন। আজ ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি আরো বলেন, কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ফরিদ হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন কেন বললেন আপনারা চাইলে মাথার খুলি নিয়ে যান এবং তার সৎকার করেন? এছাড়া সেলফোন চেক করা হলো না কেন? এক বছর হয়ে গেলেও কোন চার সিট বা ফাইনাল রিপোর্ট কোর্টে দিতে পারল না কেন? মামলায় আমাকে বাদে না করে পুলিশ নিজেই কেন বাদী হল? পুলিশ কেন ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমার কাছে গোপন করলো? কেন অভিযুক্ত রনি ও শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হলো না? পুলিশ কেন আমার ছেলের বন্ধু ও এলাকার মাদক কারবারিদের জিজ্ঞাসার আওতায় আনলো না?

নিহতের মা রিতা রানী বলেন, যেই মাথার খুলি টা দেখানো হয়েছে ওটা আমার ছেলের না। আমার ছেলে এখনো জীবিত আছে। সে একদিন ফিরে আসবেই বলেই অশ্রু সজল তার দুই নয়ন।

নিহত শ্রাবণ চন্দ্র দাসের আত্মীয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন চন্দ্র দাস বলেন, পারিবারিক দিক থেকে প্রতিবেশীর সঙ্গে ওই পরিবারের কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। তার বাবা একজন অতি নিরীহ মানুষ। বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দ্বন্দ্বই তার মৃত্যুর কারণ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়টি যদি আরও গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখত তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র আমরা দেখতে পারতাম। জানতে পারতাম হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম আনোয়ার হোসেন বলেন, মামলাটি ২০২৩ সালের। তদন্ত চলমান আছে। অগ্রগতির বিষয়ে তেমন বলার কিছু নেই।

উল্লেখ্য যে, কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ( বিপি ৭১৯৯ ০০৮০১৮ ) এবং থানার তদন্তকারী ইন্সপেক্টর মোঃ মোতালেব হোসেন (বিপি ৮৩০২০০০৯৪৬) স্বাক্ষরিত প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামীর নাম অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে। ধারা উল্লেখ করা হয়েছে ৩০২, ২০১, ৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ অর্থাৎ পরস্পর যোগ সাজোসে হত্যা করিয়া লাশ গোপন করার অপরাধ। বর্তমানে মামলাটি যার নং ৫৩/৯২৯ মহামান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৭:০৫:৫০ অপরাহ্ন, রোববার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
২২৫ জন দেখেছেন

ছেলে ফিরবেই অপেক্ষায় মা রিতা রানী !

আপডেট : ০৭:০৫:৫০ অপরাহ্ন, রোববার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

গায়ের রং ফর্সা, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, পরনে ব্লু রঙের সোয়েটার, জিন্স প্যান্ট, শরীরের গঠন হালকা-পাতলা, মুখমন্ডল কিছুটা লম্বা। নাম শ্রী জীবন চন্দ্র দাস(১৮), পিতা: নির্মল চন্দ্র দাস, মাতা: রিতা রানী, গ্রাম: উমরপাইল, থানা: কোতোয়ালি, সদর,দিনাজপুর। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করে জীবন চন্দ্র দাস। নববর্ষের সাথে নতুন অতিথির আগমনে সেদিন পুরো পরিবারটিকে করেছিল ছন্দময় শাব্দিকতা ভরা একটি সুখের সংসার। এভাবেই চলছিল নির্মলা ও রিতার জীবনচক্র। কিন্তু জীবনের চলার পথ বড়ই নিষ্ঠুর। তবে এমন নিষ্ঠুরতার লক্ষ্য হবে নির্মলা রিতার সংসার তা ছিল হতচকিত।

গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় শ্রী জীবন চন্দ্র দাস। সমস্ত দিন গেল। অপেক্ষায় মা-বাবা ও ছোট বোন সুস্মিতা রানী দাস। রাত দশটা দিকে কল দিল ছেলের মোবাইল নাম্বারে। মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। অজানা আতঙ্কে বুক ধরফর করা শুরু হলো নির্মলা ও রিতা রানীর। নিদ্রাহীন একমাত্র ছোট মন সুস্মিতা রানী দাস। নিকট আত্মীয়সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর না পেয়ে পরের দিন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা নির্মল চন্দ্র দাস। ডাইরি নম্বর ১২৩৯।

এর নয় দিন পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখে কোতোয়ালি থানার ৫ নং শশরা উনিয়নের অন্তর্গত উমরপাইল মৌজার আত্রাই নদীর পূর্ব পাশে জনৈক মেজরের আম বাগানের পশ্চিম পাশে চারা নারিকেলের গাছের নিকট নদীর ধারের উপর পাওয়া যায় একটি মাথার খুলি। সেই মাথার খুলি টিকেই জীবন চন্দ্র দাসের মাথার খুলি হিসাবে চিহ্নিত করে তা ডিএনএ টেস্টের জন্য মহামান্য আদালতে আবেদন করেন সাব ইন্সপেক্টর তৌহিদুল। এরপর ২০২৪ সালের জুন মাসের ২৭ তারিখ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় মাথার খুলির সাথে নির্মল চন্দ্র দাসের ডিএনএ ম্যাচ করেছে। অর্থাৎ এই খুলিটি জীবনচন্দ্র দাশের এমনই বলছে ডিএনএ রিপোর্ট। তবে পুলিশের কাছে সে ডিএনএ রিপোর্ট চাইতে গেলে উল্টো গালি খেতে হয় নির্মল চন্দ্র দাস কে।
বাংলা খবরকে বাবা নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, আমার ছেলের খুব শখ ছিল সে বড় হয়ে সেনাবাহিনী অথবা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে যোগ দেবে। আমরাও আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ নিয়তি নিষ্ঠুর খেলায় হারিয়ে ফেললাম আমার বড় ছেলেকে। অনেকের কাছে গিয়েছি কোন বিচার পাইনি। আমি পুলিশকে বলেছি এই খুনের মামলায় আমি বাদী হব কিন্তু মামলায় আমাকে না বাদী করে পুলিশ বাদী হয়েছে। এটি কি কারনে হলো তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। আপনারা সাংবাদিকরা জাতির বিবেক বিষয়টি আপনারাও ভেবে দেখবেন। আজ ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি আরো বলেন, কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ফরিদ হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন কেন বললেন আপনারা চাইলে মাথার খুলি নিয়ে যান এবং তার সৎকার করেন? এছাড়া সেলফোন চেক করা হলো না কেন? এক বছর হয়ে গেলেও কোন চার সিট বা ফাইনাল রিপোর্ট কোর্টে দিতে পারল না কেন? মামলায় আমাকে বাদে না করে পুলিশ নিজেই কেন বাদী হল? পুলিশ কেন ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমার কাছে গোপন করলো? কেন অভিযুক্ত রনি ও শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হলো না? পুলিশ কেন আমার ছেলের বন্ধু ও এলাকার মাদক কারবারিদের জিজ্ঞাসার আওতায় আনলো না?

নিহতের মা রিতা রানী বলেন, যেই মাথার খুলি টা দেখানো হয়েছে ওটা আমার ছেলের না। আমার ছেলে এখনো জীবিত আছে। সে একদিন ফিরে আসবেই বলেই অশ্রু সজল তার দুই নয়ন।

নিহত শ্রাবণ চন্দ্র দাসের আত্মীয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন চন্দ্র দাস বলেন, পারিবারিক দিক থেকে প্রতিবেশীর সঙ্গে ওই পরিবারের কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। তার বাবা একজন অতি নিরীহ মানুষ। বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দ্বন্দ্বই তার মৃত্যুর কারণ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়টি যদি আরও গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখত তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র আমরা দেখতে পারতাম। জানতে পারতাম হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম আনোয়ার হোসেন বলেন, মামলাটি ২০২৩ সালের। তদন্ত চলমান আছে। অগ্রগতির বিষয়ে তেমন বলার কিছু নেই।

উল্লেখ্য যে, কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ( বিপি ৭১৯৯ ০০৮০১৮ ) এবং থানার তদন্তকারী ইন্সপেক্টর মোঃ মোতালেব হোসেন (বিপি ৮৩০২০০০৯৪৬) স্বাক্ষরিত প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামীর নাম অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে। ধারা উল্লেখ করা হয়েছে ৩০২, ২০১, ৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ অর্থাৎ পরস্পর যোগ সাজোসে হত্যা করিয়া লাশ গোপন করার অপরাধ। বর্তমানে মামলাটি যার নং ৫৩/৯২৯ মহামান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বাখ//আর