০৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাড়াশে দেশীয় মাছ সংকটে, শুঁটকি উৎপাদনে স্থবিরতা

আশরাফুল ইসলাম রনি, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শুঁটকির উপযোগী মাছের অভাবে চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগও শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাজারে চলনবিলের দেশীয় মাছের শুঁটকির দাম আকাশ ছোঁয়া।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশ্বিন থেকে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত দেশীয় মাছের শুঁটকি তৈরির মৌসুম ধরা হয়। এ বছর উপজেলায় দেশীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে ২২০ টন, যা গত বছর ছিল ৩০৭ টন। তাছাড়া এ বছর খালবিলে বোয়াল মাছের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ছোটজাতের দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো খাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।

শুঁটকির চাতাল মালিকদের ভাষ্য, পাঁচ বছর আগেও ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে মৌসুমি শুঁটকি ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব ছিল। তখন মাছের দাম যেমন কম ছিল, তেমনি জোগানও ছিল পর্যাপ্ত। বর্তমানে এ ব্যবসায় পুঁজি বাড়াতে হয়েছে প্রায় তিন গুণ। পাশাপাশি মাছের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ও চাহিদা মাফিক মাছের সরবরাহ না থাকায় এ ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে।

তিনি আরো জানান, তিন কেজি কাঁচা পুঁটি মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি হয় ১ কেজি। ৫ কেজি বোয়াল মাছে শুঁটকি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। ৪ কেজি শোল শুঁটকি হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম। এ ছাড়া শুঁটকি তৈরিতে মাছ কেনা, লবণ ক্রয়, মাছ ধোয়া, রোদে শুকাতে শ্রমিক খরচ, মাছ কেনা ও শুঁটকি বিক্রির সময় পরিবহন খরচ মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ খুবই কম।

উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুঁটকির চাতাল মালিক মো. নান্নু হোসেন জানান, চলনবিলে দেশীয় মাছের আকাল। দুই দশক আগেও চলনবিল অঞ্চলের ১০টি উপজেলায় শুঁটকির চাতাল ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মত। তিনি জানান, সৈয়দপুরের বিখ্যাত শুঁটকির মোকামে এ মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের বোয়াল মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৮ হাজার টাকা, টাকি মাছের শুঁটকি ৩৬ হাজার টাকা, পুঁটি মাছের শুঁটকি ২৪ হাজার টাকা, শোল মাছের শুঁটকি ৬৮ হাজার টাকা ও চান্দা মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা।

এ ছাড়া প্রতিমণ ছোট ইচা বা দেশীয় চিংড়ির শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। বর্তমানে চলনবিল অঞ্চলের হাটবাজার ও মাছের আড়তে শুঁটকি তৈরির উপযোগী ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ১ কেজি বোয়াল মাছের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের শোল মাছের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পুঁটি মাছ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টাকি মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চান্দা মাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ছোট ইচা বা দেশীয় চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগেও বর্তমানের তুলনায় প্রজাতি ভেদে মাছের দাম ৯০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে কম ছিল।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ জানান, বর্তমানে শুটকি চাতালে কিছুটা দেশীয় প্রজাতির মাছ কম পাওয়ার কারন হলো এবছর বোয়াল মাছের সংখ্যা খুবই বেশি। তাই এমাছগুলো ছোট মাছ খায়। একারনেই দেশীয় জাতের মাছ কিছুটা কম।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, রোববার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
১৩৫ জন দেখেছেন

তাড়াশে দেশীয় মাছ সংকটে, শুঁটকি উৎপাদনে স্থবিরতা

আপডেট : ০১:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, রোববার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শুঁটকির উপযোগী মাছের অভাবে চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগও শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাজারে চলনবিলের দেশীয় মাছের শুঁটকির দাম আকাশ ছোঁয়া।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশ্বিন থেকে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত দেশীয় মাছের শুঁটকি তৈরির মৌসুম ধরা হয়। এ বছর উপজেলায় দেশীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে ২২০ টন, যা গত বছর ছিল ৩০৭ টন। তাছাড়া এ বছর খালবিলে বোয়াল মাছের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ছোটজাতের দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো খাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।

শুঁটকির চাতাল মালিকদের ভাষ্য, পাঁচ বছর আগেও ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে মৌসুমি শুঁটকি ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব ছিল। তখন মাছের দাম যেমন কম ছিল, তেমনি জোগানও ছিল পর্যাপ্ত। বর্তমানে এ ব্যবসায় পুঁজি বাড়াতে হয়েছে প্রায় তিন গুণ। পাশাপাশি মাছের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ও চাহিদা মাফিক মাছের সরবরাহ না থাকায় এ ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে।

তিনি আরো জানান, তিন কেজি কাঁচা পুঁটি মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি হয় ১ কেজি। ৫ কেজি বোয়াল মাছে শুঁটকি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। ৪ কেজি শোল শুঁটকি হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম। এ ছাড়া শুঁটকি তৈরিতে মাছ কেনা, লবণ ক্রয়, মাছ ধোয়া, রোদে শুকাতে শ্রমিক খরচ, মাছ কেনা ও শুঁটকি বিক্রির সময় পরিবহন খরচ মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ খুবই কম।

উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুঁটকির চাতাল মালিক মো. নান্নু হোসেন জানান, চলনবিলে দেশীয় মাছের আকাল। দুই দশক আগেও চলনবিল অঞ্চলের ১০টি উপজেলায় শুঁটকির চাতাল ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মত। তিনি জানান, সৈয়দপুরের বিখ্যাত শুঁটকির মোকামে এ মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের বোয়াল মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৮ হাজার টাকা, টাকি মাছের শুঁটকি ৩৬ হাজার টাকা, পুঁটি মাছের শুঁটকি ২৪ হাজার টাকা, শোল মাছের শুঁটকি ৬৮ হাজার টাকা ও চান্দা মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা।

এ ছাড়া প্রতিমণ ছোট ইচা বা দেশীয় চিংড়ির শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। বর্তমানে চলনবিল অঞ্চলের হাটবাজার ও মাছের আড়তে শুঁটকি তৈরির উপযোগী ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ১ কেজি বোয়াল মাছের দাম ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের শোল মাছের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পুঁটি মাছ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টাকি মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চান্দা মাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ছোট ইচা বা দেশীয় চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগেও বর্তমানের তুলনায় প্রজাতি ভেদে মাছের দাম ৯০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে কম ছিল।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ জানান, বর্তমানে শুটকি চাতালে কিছুটা দেশীয় প্রজাতির মাছ কম পাওয়ার কারন হলো এবছর বোয়াল মাছের সংখ্যা খুবই বেশি। তাই এমাছগুলো ছোট মাছ খায়। একারনেই দেশীয় জাতের মাছ কিছুটা কম।

বাখ//এস