মাথার খুলি নিয়ে যান এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এবং সৎকার করেন : দিনাজপুরে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পিতা

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ সবুজ আলী (বিপি-৮৩০২০০০৯৪৬) ভুক্তভোগীর পিতাকে বললেন, মাথার খুলি নিয়ে যান এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন এবং সৎকার করেন। আজ ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্রী শ্রাবণ চন্দ্র দাস এর পিতা শ্রী নির্মল চন্দ্র দাস।
সংবাদ সম্মেলনে নিয়তের পিতা লিখিত বক্তব্য বলেন, আমার ছেলে শ্রী শ্রাবণ চন্দ্র দাস (১৮) দিনাজপুর পাঁচ বাড়ি মহাবিদ্যালয় এসএসসি দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করত। গেল ৮-১২-২০২৩ তারিখে সকাল আনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় আমাদের বাড়ির কাউকে কোন কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তারপর সারাদিন আমার ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসলে আমি আমার মোবাইল ফোন হইতে আমার ছেলের মোবাইল ফোনে রিং দিলে আমার ছেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাই। পরবর্তীতে আমি আমার নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকেও খোঁজখবর নেই।
এছাড়াও চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেওয়ার পরেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। এমন বাস্তবতায় গেল ৯/১২/২০২৩ তারিখে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করি। ডাইরি নং ১২৩৯। মামলা নং ৫৩/৯২৯। এরপর গেল ১৮-১২- ২০২৩ তারিখে বাড়ির পাশে একটি মাথার খুলি পাওয়া যায়। এটিকে মামলার আলামত হিসেবে নিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর ডিএনএ টেস্টের জন্য এসআই তহিদুল কোর্টে আবেদন করেন এবং ২৭/৬/২০২৪। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষায় মিল পাওয়ায় ওই মাথাটি আমার ছেলের এমন ব্যাখ্যা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এরপর পুলিশ সিডিআর রেকর্ডের ভিত্তিতে শ্রাবণের দুই বন্ধু মাদকাসক্ত রনি ও শিমুলকে আটক করে এবং দুই দিনের রিমান্ড নেন। পরবর্তীতে নিবারণ নামে আরো একজনকে এই মামলায় আটক দেখানো হয়। রিমান্ড শেষে ভুক্তভোগীর পরিবারকে জানানো হয় আটককৃতদের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুলিশ মামলার তথ্য ও ডি এন এ রিপোর্ট দিতে টালবাহানা শুরু করেন। থানার সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তা একই কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আরো উল্লেখ করা হয়, খুনি একই এলাকার এটা নিশ্চিত।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ফরিদ হোসেন ও ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ মোতালেব হোসেন কেন বললেন আপনারা চাইলে মাথার খুলি নিয়ে যান তার সৎকার করেন? এছাড়া সেলফোন চেক করা হলো না কেন? এক বছর হয়ে গেলেও কোন চার্জশিট বা ফাইনাল রিপোর্ট কোর্টে দিতে পারল না কেন? মামলায় আমাকে বাদী না করে পুলিশ কেন বাদি হল? পুলিশ কেন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমার কাছে গোপন করলো? কেন অভিযুক্ত রনি ও শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চাওয়া হলো না? পুলিশ কেন আমার নিহত ছেলের বন্ধু, এলাকার মাদকাসক্ত সমবয়সী ও মাদক কারবারিদের জিজ্ঞাসা করল না?
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ অজ্ঞাত কারণে আমাকে মামলার আসামি না করে পুলিশ নিজেই বাদী হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি সাংবাদিকদের নিকট আকুল প্রার্থনা করেন আপনারা বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরবেন। আমি নিরুপায় হয়ে আপনাদের শরণাপন্ন হয়েছি। আপনারা আমার পাশে দাঁড়ালে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার পাব। এজন্য আমি পিবিআই তদন্ত চাই। আপনারা দয়া করে আমার পাশে দাঁড়ান। আমি নিঃস্ব অসহায় দীর্ঘ এক বছর হয়ে গেল আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার সাবেক (বর্তমানে ডিএমপিতে কর্মরত) সাব-ইন্সপেক্টর সবুজ আলী বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি আমি তাই লিখেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না। এই বলে তুমি সেল ফোন রেখে দেন।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার সাবেক ভার পর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন এর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগ রেখে চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন দাস, নিহতের দাদা সৌরভ দাস, নিহতের ভাতিজা দিলীপ দাস ও ভাই অর্জুন দাস।
বাখ//এস