১১ বছর পর
বেলকুচিতে মিছিলে হামলার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রীসহ আ.লীগের ৫৬ নেতাকর্মীর নামে মামলা

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১১ বছর আগে ১৮ দলীয় জোটের মিছিলে হামলার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে প্রধান আসামি করে বেলকুচি পৌর সভার সাবেক মেয়র ও যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস এবং বেলকুচি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান হোসেন, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান লাজুক বিশ্বাসসহ আওয়ামী লীগের ৫৬ জন নেতা কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত দশটার দিকে বেলকুচি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকেরিয়া হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে এই প্রতিবেদককে বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করার পর এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বরের দুপুরের দিকে পৌর শহরের মুকন্দগাতী এলাকা হতে ১৮ দলীয় জোটের একটি মিছিল সোহাগপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পৌছালে হঠাৎ আসামিরা সেই মিছিলে হামলা চালায় । সেই সঙ্গে বোমা বিস্ফোরন ঘটায়। এতে জোটের তিন নেতা কর্মী আহত হন। সে সময় মামলার পরিবেশ না থাকায় এ বিষয়ে দীর্ঘ দিন পর এই মামলাটি দায়ের করা হলো।
৪ আগস্ট জেলার চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় তাঁকে এনায়েতপুর থানা আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক ওমর ফারুক মামলার শোনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার দুপুরে বেলকুচি পৌর এলাকার কামারপাড়া নিজ বাসায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ৪ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ হত্যার ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট পুলিশের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে আসামি করে মামলাটি করেন। এ ছাড়া এতে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ–ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে; ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে চার কোটি টাকা।
আসামিরা হলেন, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান (বাচ্চু), সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে এনায়েতপুর থানা এলাকার এনায়েতপুর গ্রামে খাজা ইউনুস আলী (রহ.)–এর দরবার শরিফে ১১০তম ওরস শরিফে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস পৌঁছালে ১ নম্বর ফটক এলাকায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী তাঁর গাড়ি প্রতিরোধ করে। এ সময় দুর্বৃত্তের ঢিলে গাড়ির একটি গ্লাস ভেঙে যায়। পরে দরবার শরিফের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।
আবদুল লতিফ বিশ্বাস গত বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এর পর থেকে নিজ এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।
বাখ//আর