০৭:৫৫ অপরাহ্ন, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গৌরনদীতে সেই শিক্ষিকা বহাল তবিয়তে

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেচ্ছাচারিতা, উদাসীনতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রকাশ্যে ওই শিক্ষিকা নিজের দোষ স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২/৩ শিক্ষক নেতা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গত ২ জানুয়ারি সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটোকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ‘শিক্ষা নিয়ে গর্ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ‘ লেখা সম্মিলিত একটি বিজ্ঞপ্তি ব্যানার টাঙায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার। ওইদিন দুপুরে ব্যনারটি স্থানীয়দের নজরে আসলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা ওই শিক্ষিকার বদলী ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

বিষয়টি গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় ও আঞ্চলিক কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ”প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, ভর্তির ব্যানারে শেখ হাসিনার শ্লোগান, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা”- শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের টনক নড়ে। পরদিন রোববার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার ঘটনা তদন্তের জন্য বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে গৌরনদী শিক্ষক সমাজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় ১৫/২০ ব্যক্তি বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন।

এ সময় সবার উপস্থিতিতে ওই ২ শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযুক্ত শিক্ষিকা, সহকারী শিক্ষিকাদের ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহন করেন। সাক্ষিদের জবানবন্দিতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার ২ জানুয়ারি সকালে স্কুলের স্ট্রীলের আলমারী থেকে ওই ব্যানারটি বের করে স্কুলের প্রধান ফটকে টাঙ্গানোর প্রমান পায় তারা। এ সময় ওই ২ কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার নিজের দোষ ও দায় স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই ২ কর্তকর্তা সাদা কাগজে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন না করার ও অভিবাবকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করার অভিযোগের বিষয়টিও এড়িয়ে যান শিক্ষা কর্মকর্তারা।

এ বিষয়য়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রুবেল গোমস্তা জানান, ছাত্র-জনতা হত্যাকারী খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার কিছু দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে রয়েছে। ওই খুনি হাসিনার দোসর শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের যথাযথ শাস্তির দাবি করছি। অন্যথায় ছাত্র জনতা কঠোর আন্দোলনে মাঠে নামবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার বলেন, আমার দোষ ও দায় স্বীকার করে অনিচ্ছাকৃত ভ‚লের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রোববার স্কুলে এসেছিল। তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে এ মর্মে স্থাণীয়দের কাছ থেকে প্রত্যায়ন নিয়েছে তারা। আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবাদ ছাপানো হয়েছে। উক্ত পত্রিকার কপি ওইদিনই শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি।

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার বলেন, সরেজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকাও নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তদন্তে গিয়েছি এ মর্মে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর এনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হবে।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আপোষ মিমাংসার বিষয় না। ঘটনা তদন্ত করে গৌরনদী শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
১২৬ জন দেখেছেন

গৌরনদীতে সেই শিক্ষিকা বহাল তবিয়তে

আপডেট : ০৪:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেচ্ছাচারিতা, উদাসীনতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রকাশ্যে ওই শিক্ষিকা নিজের দোষ স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২/৩ শিক্ষক নেতা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষিকা, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গত ২ জানুয়ারি সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটোকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ‘শিক্ষা নিয়ে গর্ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ‘ লেখা সম্মিলিত একটি বিজ্ঞপ্তি ব্যানার টাঙায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার। ওইদিন দুপুরে ব্যনারটি স্থানীয়দের নজরে আসলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা ওই শিক্ষিকার বদলী ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

বিষয়টি গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় ও আঞ্চলিক কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ”প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, ভর্তির ব্যানারে শেখ হাসিনার শ্লোগান, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা”- শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের টনক নড়ে। পরদিন রোববার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার ঘটনা তদন্তের জন্য বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে গৌরনদী শিক্ষক সমাজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় ১৫/২০ ব্যক্তি বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন।

এ সময় সবার উপস্থিতিতে ওই ২ শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযুক্ত শিক্ষিকা, সহকারী শিক্ষিকাদের ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহন করেন। সাক্ষিদের জবানবন্দিতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার ২ জানুয়ারি সকালে স্কুলের স্ট্রীলের আলমারী থেকে ওই ব্যানারটি বের করে স্কুলের প্রধান ফটকে টাঙ্গানোর প্রমান পায় তারা। এ সময় ওই ২ কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার নিজের দোষ ও দায় স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই ২ কর্তকর্তা সাদা কাগজে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন না করার ও অভিবাবকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করার অভিযোগের বিষয়টিও এড়িয়ে যান শিক্ষা কর্মকর্তারা।

এ বিষয়য়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রুবেল গোমস্তা জানান, ছাত্র-জনতা হত্যাকারী খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার কিছু দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে রয়েছে। ওই খুনি হাসিনার দোসর শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের যথাযথ শাস্তির দাবি করছি। অন্যথায় ছাত্র জনতা কঠোর আন্দোলনে মাঠে নামবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার বলেন, আমার দোষ ও দায় স্বীকার করে অনিচ্ছাকৃত ভ‚লের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রোববার স্কুলে এসেছিল। তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করা হয়েছে এ মর্মে স্থাণীয়দের কাছ থেকে প্রত্যায়ন নিয়েছে তারা। আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবাদ ছাপানো হয়েছে। উক্ত পত্রিকার কপি ওইদিনই শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি।

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার বলেন, সরেজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকাও নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তদন্তে গিয়েছি এ মর্মে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর এনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হবে।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আপোষ মিমাংসার বিষয় না। ঘটনা তদন্ত করে গৌরনদী শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বাখ//আর