০৪:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী পর্বতারোহী ফ্যানি বুলকের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা

অনলাইন ডেস্ক

আজ যার কথা বলছি, তিনি শুরুর দিকে নারী পর্বতারোহীদের একজন ছিলেন। তাঁর নাম ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান। তিনি ১৮৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন।

উঁচু পর্বত জয় করার ক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্ন রেকর্ড ভেঙেছিলেন তিনি। তবে ফ্যানিকে শুধু পর্বতারোহী বলা যাবে না, বরং তিনি একাধারে ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, অভিযাত্রী ও ভ্রমণ লেখক ছিলেন। ইউরোপের ১০টি ভিন্ন জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি থেকে সম্মানীয় পদক (মেডেল অব অনার) অর্জন করেন তিনি।

পর্বতারোহণের পাশাপাশি ভ্রমণের কাহিনিগুলো ফ্যানি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখতেন। ভ্রমণে তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্বামী উইলিয়াম হান্টার ওয়ার্কম্যান।এই দম্পতি মিলে মোট আটটি বই প্রকাশ করেন। এতে করে ফ্যানির দুঃসাহসিক অভিযাত্রা সম্পর্কে মানুষের জানা অনেকটা সহজ হয়। ভ্রমণের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এসব বইয়ের পাতায় নারীদের দুর্দশা এবং সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ফ্যানি।

ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন ফ্যানি ও তাঁর স্বামী। দু’জনের কাউকেই তাই ভ্রমণের খরচ নিয়ে সেভাবে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। তাছাড়া আমেরিকান ক্লাইম্বিং ক্লাবগুলো ইউরোপীয় ক্লাবের চেয়ে ভিন্ন ছিল। তারা নারীদের পর্বতারোহণে উৎসাহ দিত। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে নারী পর্বতারোহীরা পুরুষ পর্বতারোহীদের ছাপিয়ে গিয়েছিল।

নিউ হ্যাম্পশায়ারের হোয়াইট মাউন্টেনে ফ্যানি এবং উইলিয়াম একসঙ্গে অনেক সময় কাটান। মাউন্ট ওয়াশিংটনের চূঁড়ায়ও এই দম্পতি একাধিকবার আরোহণ করেন।

বাইসাইকেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতায়ও যুক্ত ছিলেন ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান। ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৩ সালের মধ্যে ওয়ার্কম্যান দম্পতি সাইকেলে করে ইতালি, ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন।

পরের বছর তাঁরা আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই স্পেনজুড়ে ২৮০০ মাইল বা সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বাইসাইকেলে পাড়ি দেন এই দম্পতি। ভারতেও বাইসাইকেল ভ্রমণ করেছিলেন ফ্যানি। এ ছাড়া হিমালয় পর্বতমালায় ওঠার অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর।

১৯১৪ সালে ফ্যানি এবং উইলিয়াম তাঁদের দীর্ঘ ভ্রমণযাত্রায় ইতি টানেন। এরপর দু’জন বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন।

ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে ফ্রান্সের প্যারিসের সরবোন ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা দেন। লন্ডনের রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি মনোনীত প্রথম নারী সদস্যও ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯১৭ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফ্যানি। ১৯২৫ সালে ফ্রান্সের কানে তাঁর মৃত্যু হয়।

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস রাজ্যটির ওয়েলসলি কলেজে ফ্যানি বুলকের নামে এখনও ফেলোশিপ রয়েছে। এভাবেই নিজের লেখা, দুঃসাহসী সব অভিযাত্রা এবং বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে রয়ে গেছেন এই ভ্রমণপিপাসু নারী। তথ্যসূত্র: উইমেন ইন এক্সপ্লোরেশন, অ্যাডভেঞ্চার জার্নাল ডট কম

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১২:০০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
১০৭ জন দেখেছেন

নারী পর্বতারোহী ফ্যানি বুলকের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা

আপডেট : ১২:০০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

আজ যার কথা বলছি, তিনি শুরুর দিকে নারী পর্বতারোহীদের একজন ছিলেন। তাঁর নাম ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান। তিনি ১৮৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন।

উঁচু পর্বত জয় করার ক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্ন রেকর্ড ভেঙেছিলেন তিনি। তবে ফ্যানিকে শুধু পর্বতারোহী বলা যাবে না, বরং তিনি একাধারে ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, অভিযাত্রী ও ভ্রমণ লেখক ছিলেন। ইউরোপের ১০টি ভিন্ন জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি থেকে সম্মানীয় পদক (মেডেল অব অনার) অর্জন করেন তিনি।

পর্বতারোহণের পাশাপাশি ভ্রমণের কাহিনিগুলো ফ্যানি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখতেন। ভ্রমণে তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্বামী উইলিয়াম হান্টার ওয়ার্কম্যান।এই দম্পতি মিলে মোট আটটি বই প্রকাশ করেন। এতে করে ফ্যানির দুঃসাহসিক অভিযাত্রা সম্পর্কে মানুষের জানা অনেকটা সহজ হয়। ভ্রমণের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এসব বইয়ের পাতায় নারীদের দুর্দশা এবং সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ফ্যানি।

ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন ফ্যানি ও তাঁর স্বামী। দু’জনের কাউকেই তাই ভ্রমণের খরচ নিয়ে সেভাবে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। তাছাড়া আমেরিকান ক্লাইম্বিং ক্লাবগুলো ইউরোপীয় ক্লাবের চেয়ে ভিন্ন ছিল। তারা নারীদের পর্বতারোহণে উৎসাহ দিত। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে নারী পর্বতারোহীরা পুরুষ পর্বতারোহীদের ছাপিয়ে গিয়েছিল।

নিউ হ্যাম্পশায়ারের হোয়াইট মাউন্টেনে ফ্যানি এবং উইলিয়াম একসঙ্গে অনেক সময় কাটান। মাউন্ট ওয়াশিংটনের চূঁড়ায়ও এই দম্পতি একাধিকবার আরোহণ করেন।

বাইসাইকেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতায়ও যুক্ত ছিলেন ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান। ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৩ সালের মধ্যে ওয়ার্কম্যান দম্পতি সাইকেলে করে ইতালি, ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন।

পরের বছর তাঁরা আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই স্পেনজুড়ে ২৮০০ মাইল বা সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বাইসাইকেলে পাড়ি দেন এই দম্পতি। ভারতেও বাইসাইকেল ভ্রমণ করেছিলেন ফ্যানি। এ ছাড়া হিমালয় পর্বতমালায় ওঠার অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর।

১৯১৪ সালে ফ্যানি এবং উইলিয়াম তাঁদের দীর্ঘ ভ্রমণযাত্রায় ইতি টানেন। এরপর দু’জন বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন।

ফ্যানি বুলক ওয়ার্কম্যান প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে ফ্রান্সের প্যারিসের সরবোন ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা দেন। লন্ডনের রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি মনোনীত প্রথম নারী সদস্যও ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯১৭ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফ্যানি। ১৯২৫ সালে ফ্রান্সের কানে তাঁর মৃত্যু হয়।

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস রাজ্যটির ওয়েলসলি কলেজে ফ্যানি বুলকের নামে এখনও ফেলোশিপ রয়েছে। এভাবেই নিজের লেখা, দুঃসাহসী সব অভিযাত্রা এবং বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে রয়ে গেছেন এই ভ্রমণপিপাসু নারী। তথ্যসূত্র: উইমেন ইন এক্সপ্লোরেশন, অ্যাডভেঞ্চার জার্নাল ডট কম