০২:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়ার পরে গোলাম ফারুক অভির দেশে ফেরার গুঞ্জন

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি

বহুল আলোচিত মডেল কন্যা সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার ঘটনায় করা মামলা থেকে প্রায় ২৩ বছর পর খালাস পেয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোসা. শাহীনুর আক্তার মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) এক রায়ে তাকে এ হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন। হত্যা মামলায় খালাস পাওয়ার পরে বহুল আলোচিত বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির দেশে ফেরার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

অশীতিপর মমতাময়ী বৃদ্ধা মাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা অভি শিগগিরই দেশে ফিরছেন বলে তার ঘনিষ্ট উজিরপুর উপজেলা জেপির সাবেক আহবায়ক শামসুল হক সিকদার জানান। কানাডায় অবস্থানরত অভির সঙ্গে মুঠোফোনে তার কথা হলে তিনি তার কাছে প্রাণপ্রিয় মাকে দেখার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেন। হত্যা মামলায় আসামী হয়ে গত প্রায় দুই যুগ ধরে বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি দুই ভাই ও এক বোনসহ অনেক স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মী-সমর্থককে হারিয়েছেন। শেষ বিদায় বেলায় তাদের মৃৃত মুখটিও দেখতে পারেননি অভি। বৃদ্ধা মা সহ এখনও তার দুই ভাই ও চার বোন রয়েছেন।

মাসহ স্বজন ও নিজ এলাকা এবং দেশের মানুষের সান্নিধ্য বঞ্চিত অভি তাদের কাছে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে মুখিয়ে আছেন। এদিকে হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার খবরে তার জন্মস্থান বরিশালের উজিরপুর উপজেলাসহ পুরনো নির্বাচনী এলাকায় তার ভক্ত অনুসারীরা নবরূপে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে দেশে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। তারা গোলাম ফারুক অভি ১৯৯৬-২০০১ সালে বরিশাল-২ আসনে সংসদ সদস্য থাকাকালীণ নির্বাচনী এলাকায় তার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথাও তুলে ধরছেন।

আবেগআপ্লুত তার অনুসারীরা কানাডায় ফোন দিয়ে তাকে দেশে ফিরে আসার কথা বলছেন। তিনিও ফিরে আসার বিষয়ে উদগ্রীব হয়ে আছেন বলে তাদের কাছে ব্যক্ত করছেন। উল্লেখ্য, অদম্য মেধাবী গোলাম ফারুক অভি জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন।

এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি অবহেলিত জনপদ উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে নতুনরূপে আলোচনায় আসেন। ২০০১ সালে তিনি এরশাদের জাপা ছেড়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির প্রার্থী হয়ে সাইকেল প্রতীক নিয়ে বরিশাল-২ আসনে নির্বাচনে লড়ে হেরে যান। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসন পুর্নবিন্যাস হয়ে উজিরপুর-বানারীপাড়া উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত হয়।

এদিকে অভি দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বরিশাল-২ ( উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সৃষ্টি হবে। পাল্টে যাবে রাজনীতির সব পুরনো হিসাব-নিকাশ। আগামী নির্বাচনে তাকে নাটকীয় ভাবে বড় কোন রাজনৈতিক দলে দেখা যেতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। জানা গেছে, তিনি এক সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে মুঠোফোনে সারা না মেলায় এ বিষয়ে কানাডায় অবস্থানরত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ১০ই নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর উপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১’র ১১ নম্বর পিলারের নিচে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ই নভেম্বর সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অনিন্দ্য সুন্দর মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি হত্যার ঘটনায় ওই সময় দেশ জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে অভির নাম থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪শে নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ই নভেম্বর অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ২০১০ সালের ১৪ই জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় অনুপস্থিত অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, কানাডায় পলাতক অভি তার আইনজীবী বরাবর একটি চিঠি লেখেন। এর কপি দেয়া হয় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলিকেও। এতে অভি দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিন্নি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পারেন,তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় যান।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৯:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
৯২ জন দেখেছেন

মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়ার পরে গোলাম ফারুক অভির দেশে ফেরার গুঞ্জন

আপডেট : ০৯:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

বহুল আলোচিত মডেল কন্যা সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার ঘটনায় করা মামলা থেকে প্রায় ২৩ বছর পর খালাস পেয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোসা. শাহীনুর আক্তার মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) এক রায়ে তাকে এ হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন। হত্যা মামলায় খালাস পাওয়ার পরে বহুল আলোচিত বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির দেশে ফেরার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

অশীতিপর মমতাময়ী বৃদ্ধা মাকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা অভি শিগগিরই দেশে ফিরছেন বলে তার ঘনিষ্ট উজিরপুর উপজেলা জেপির সাবেক আহবায়ক শামসুল হক সিকদার জানান। কানাডায় অবস্থানরত অভির সঙ্গে মুঠোফোনে তার কথা হলে তিনি তার কাছে প্রাণপ্রিয় মাকে দেখার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেন। হত্যা মামলায় আসামী হয়ে গত প্রায় দুই যুগ ধরে বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি দুই ভাই ও এক বোনসহ অনেক স্বজন ও অনুসারী নেতাকর্মী-সমর্থককে হারিয়েছেন। শেষ বিদায় বেলায় তাদের মৃৃত মুখটিও দেখতে পারেননি অভি। বৃদ্ধা মা সহ এখনও তার দুই ভাই ও চার বোন রয়েছেন।

মাসহ স্বজন ও নিজ এলাকা এবং দেশের মানুষের সান্নিধ্য বঞ্চিত অভি তাদের কাছে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে মুখিয়ে আছেন। এদিকে হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাওয়ার খবরে তার জন্মস্থান বরিশালের উজিরপুর উপজেলাসহ পুরনো নির্বাচনী এলাকায় তার ভক্ত অনুসারীরা নবরূপে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে দেশে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। তারা গোলাম ফারুক অভি ১৯৯৬-২০০১ সালে বরিশাল-২ আসনে সংসদ সদস্য থাকাকালীণ নির্বাচনী এলাকায় তার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথাও তুলে ধরছেন।

আবেগআপ্লুত তার অনুসারীরা কানাডায় ফোন দিয়ে তাকে দেশে ফিরে আসার কথা বলছেন। তিনিও ফিরে আসার বিষয়ে উদগ্রীব হয়ে আছেন বলে তাদের কাছে ব্যক্ত করছেন। উল্লেখ্য, অদম্য মেধাবী গোলাম ফারুক অভি জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন।

এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি অবহেলিত জনপদ উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে নতুনরূপে আলোচনায় আসেন। ২০০১ সালে তিনি এরশাদের জাপা ছেড়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির প্রার্থী হয়ে সাইকেল প্রতীক নিয়ে বরিশাল-২ আসনে নির্বাচনে লড়ে হেরে যান। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসন পুর্নবিন্যাস হয়ে উজিরপুর-বানারীপাড়া উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত হয়।

এদিকে অভি দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বরিশাল-২ ( উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সৃষ্টি হবে। পাল্টে যাবে রাজনীতির সব পুরনো হিসাব-নিকাশ। আগামী নির্বাচনে তাকে নাটকীয় ভাবে বড় কোন রাজনৈতিক দলে দেখা যেতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। জানা গেছে, তিনি এক সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে মুঠোফোনে সারা না মেলায় এ বিষয়ে কানাডায় অবস্থানরত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ১০ই নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর উপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১’র ১১ নম্বর পিলারের নিচে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ই নভেম্বর সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অনিন্দ্য সুন্দর মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি হত্যার ঘটনায় ওই সময় দেশ জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে অভির নাম থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪শে নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ই নভেম্বর অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ২০১০ সালের ১৪ই জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় অনুপস্থিত অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, কানাডায় পলাতক অভি তার আইনজীবী বরাবর একটি চিঠি লেখেন। এর কপি দেয়া হয় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলিকেও। এতে অভি দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে বরিশাল-২ আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিন্নি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পারেন,তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় যান।

বাখ//আর