০২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পতিত স্বৈরাচার সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে’

অনলাইন ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কারে কাজ করছে বর্তমান সরকার। পতিত স্বৈরাচার সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের প্রয়োজনে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করেছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ (শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে পাওয়া প্রস্তাবনা যাছাই বাছাই করা হবে। যার মধ্যে দিয়ে গণমাধ্যমের জন্য একটা কাঠামো দাঁড় করা যাবে। যার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যম গণমানুষের হয়ে কাজ করবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস সেন্টারে কর্মীরা যদি তাদের বেতনের জন্য এত বড় ফাইট করতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? আপনি যে সংবাদ মাধ্যম চালান না কেন, আপনাকে ভালো সাংবাদিক রাখতে হবে এবং মিনিমাম মজুরি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের সংস্কার করতে যাচ্ছি। কারণ, গণমাধ্যমকে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশে যতগুলো গণমাধ্যম আছে, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তাদের ছিল। ডিজিএফআইয়ের একটা ফোন কল, এনএসআইয়ের একটা ফোন কল, ডিজির একটা ফোন কল, মিনিস্টারের একটা ফোন কল তখন সংবাদ মাধ্যমের জন্য এনাফ ছিল। আইসিটি নামে যেটা ছিল সেটায় ন্যায়বিচার ছিল না। সেটা ভয়াবহ অন্যায়-অবিচার ছিল।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে থাকা নসরুল হামিদ মিলনায়তন নসরুল হামিদ তার নিজস্ব টাকায় করেছেন কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এই নামটি রাখা উচিত কি না, তা রিপোর্টার ইউনিটিকে ভাবার পরামর্শও দেন।

যুক্তরাজ্য দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আকবর হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে আমরা অনেক পরিবর্তনের কথা বলছি। গার্মেন্টস সেক্টরের মতো ন্যূনতম মজুরির কথা বলছি। কিন্তু কয়টা মিডিয়ায় এই মানদণ্ড আছে? ওয়েজ বোর্ড যেটা আছে সেটা শুধু পত্রিকার জন্য। আমরা যদি একটা মানদণ্ড ঠিক করতে পারি, আপনি যদি এটা ঠিক করতে পারেন, তাহলে আপনি পত্রিকা রান করতে পারবেন, না হলে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ইন হাউজে তার রিপোর্টারকে কেয়ারই করেন না। একটা রিপোর্টারের কতটা খাটুনি, সপ্তাহে মানসম্পন্ন রিপোর্ট করতে কত খাটুনি যায়, সেটা তারা কেয়ারই করে না। মিডিয়া হাউজগুলোর অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকা দরকার। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করা পরিহার করতে হবে। মিডিয়া হাউজে থেকে আপনি একটিভিজম করবেন আর বলবেন স্বাধীনতা নাই এটা করা যাবে না। আপনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে একটিভিজম করবেন, সমালোচনা করবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।’

আলোচনা সভা থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সরকারি নিয়ন্ত্রণ রোধে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা, বেতন কাঠামোর সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন, বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখা, গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজিকরণ, আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন- ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই-এর মুখপাত্র প্লাবন তারিক, আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির, সাইবার অ্যাক্টিভিস্ট আব্বাস উদ্দিন নয়ন, আইনজীবী মোল্লা ফারুক এহসান এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম প্রমুখ।

এর আগে ‘আমরা গণমাধ্যম সংস্কার’ নামক প্লাটফর্ম থেকে ১৩ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১১:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
৮১ জন দেখেছেন

‘পতিত স্বৈরাচার সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে’

আপডেট : ১১:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কারে কাজ করছে বর্তমান সরকার। পতিত স্বৈরাচার সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের প্রয়োজনে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করেছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ (শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে পাওয়া প্রস্তাবনা যাছাই বাছাই করা হবে। যার মধ্যে দিয়ে গণমাধ্যমের জন্য একটা কাঠামো দাঁড় করা যাবে। যার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যম গণমানুষের হয়ে কাজ করবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টস সেন্টারে কর্মীরা যদি তাদের বেতনের জন্য এত বড় ফাইট করতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? আপনি যে সংবাদ মাধ্যম চালান না কেন, আপনাকে ভালো সাংবাদিক রাখতে হবে এবং মিনিমাম মজুরি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের সংস্কার করতে যাচ্ছি। কারণ, গণমাধ্যমকে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশে যতগুলো গণমাধ্যম আছে, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তাদের ছিল। ডিজিএফআইয়ের একটা ফোন কল, এনএসআইয়ের একটা ফোন কল, ডিজির একটা ফোন কল, মিনিস্টারের একটা ফোন কল তখন সংবাদ মাধ্যমের জন্য এনাফ ছিল। আইসিটি নামে যেটা ছিল সেটায় ন্যায়বিচার ছিল না। সেটা ভয়াবহ অন্যায়-অবিচার ছিল।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে থাকা নসরুল হামিদ মিলনায়তন নসরুল হামিদ তার নিজস্ব টাকায় করেছেন কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এই নামটি রাখা উচিত কি না, তা রিপোর্টার ইউনিটিকে ভাবার পরামর্শও দেন।

যুক্তরাজ্য দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আকবর হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে আমরা অনেক পরিবর্তনের কথা বলছি। গার্মেন্টস সেক্টরের মতো ন্যূনতম মজুরির কথা বলছি। কিন্তু কয়টা মিডিয়ায় এই মানদণ্ড আছে? ওয়েজ বোর্ড যেটা আছে সেটা শুধু পত্রিকার জন্য। আমরা যদি একটা মানদণ্ড ঠিক করতে পারি, আপনি যদি এটা ঠিক করতে পারেন, তাহলে আপনি পত্রিকা রান করতে পারবেন, না হলে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ইন হাউজে তার রিপোর্টারকে কেয়ারই করেন না। একটা রিপোর্টারের কতটা খাটুনি, সপ্তাহে মানসম্পন্ন রিপোর্ট করতে কত খাটুনি যায়, সেটা তারা কেয়ারই করে না। মিডিয়া হাউজগুলোর অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকা দরকার। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করা পরিহার করতে হবে। মিডিয়া হাউজে থেকে আপনি একটিভিজম করবেন আর বলবেন স্বাধীনতা নাই এটা করা যাবে না। আপনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে একটিভিজম করবেন, সমালোচনা করবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।’

আলোচনা সভা থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সরকারি নিয়ন্ত্রণ রোধে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা, বেতন কাঠামোর সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন, বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখা, গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজিকরণ, আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন- ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই-এর মুখপাত্র প্লাবন তারিক, আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির, সাইবার অ্যাক্টিভিস্ট আব্বাস উদ্দিন নয়ন, আইনজীবী মোল্লা ফারুক এহসান এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম প্রমুখ।

এর আগে ‘আমরা গণমাধ্যম সংস্কার’ নামক প্লাটফর্ম থেকে ১৩ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।