০৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদত্যাগ করেও স্বস্তিতে নেই টিউলিপ সিদ্দিক

অনলাইন ডেস্ক

ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেও টিউলিপ সিদ্দিক স্বস্তিতে নেই। দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে প্রবল সমালোচনার মুখে গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাঁর খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মা শেখ রেহানা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বলা হয়, রাজনীতির খেলায় দুই দেশেই কলঙ্কিত টিউলিপ সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না।

ওই নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। তিনি দুর্নীতির এ অভিযোগকে ‘সরাসরি ডাকাতি’ আখ্যা দিয়ে টিউলিপকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অর্থপাচারের সঙ্গে টিউলিপের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। টিউলিপ ব্রিটেনের সরকারি প্রতিনিধিদলের চীন সফর থেকে বিরত থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়ে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন।

টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।

চলতি মাসে ফিন্যানশিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপকে তাঁর খালা ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপার লন্ডনে একটি দুই-বেডরুমের ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। তবে টিউলিপের দাবি, এই ফ্ল্যাটটি তিনি তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন এবং ম্যাগনাসকে জানান, এই বাড়িটি যে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর উপহার, তা তিনি সম্প্রতি জানতে পেরেছেন।

এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টিউলিপ হ্যাম্পস্টেডের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন, যা তাঁর ছোট বোনের।

ওই ফ্ল্যাটটিও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আরেক ব্যবসায়ী উপহার দিয়েছিলেন। টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সিদ্দিক প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি তাঁর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান, বিশেষ করে ব্রিটিশ আওয়ামী লীগের বাংলাদেশি সদস্যদের সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

গার্ডিয়ানের নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৩ সালে ১২ বিলিয়ন ডলারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ছবিতে তাঁকে তাঁর খালা শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা গেছে।

টিউলিপ দাবি করেন, এটি স্রেফ একটি পারিবারিক সফর এবং তিনি সেখানে গিয়েছিলেন পর্যটক হিসেবে। ম্যাগনাস তাঁর ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছেন। তবে এখন টিউলিপ বাংলাদেশের ওই চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের মুখোমুখি।

এদিকে লরি ম্যাগনাস লন্ডনে টিউলিপের বাড়িগুলোর বিষয়েও কোনো নিয়ম ভঙের প্রমাণ পাননি এবং লেনদেনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে তথ্য ছিল কম এবং টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তির ঝুঁকি সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারতেন। তিনি এটাও উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চাইলে করতে পারেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, টিউলিপ পদত্যাগে বাধ্য হন।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:৩২:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
১১৮ জন দেখেছেন

পদত্যাগ করেও স্বস্তিতে নেই টিউলিপ সিদ্দিক

আপডেট : ০২:৩২:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেও টিউলিপ সিদ্দিক স্বস্তিতে নেই। দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে প্রবল সমালোচনার মুখে গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাঁর খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মা শেখ রেহানা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বলা হয়, রাজনীতির খেলায় দুই দেশেই কলঙ্কিত টিউলিপ সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না।

ওই নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। তিনি দুর্নীতির এ অভিযোগকে ‘সরাসরি ডাকাতি’ আখ্যা দিয়ে টিউলিপকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অর্থপাচারের সঙ্গে টিউলিপের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। টিউলিপ ব্রিটেনের সরকারি প্রতিনিধিদলের চীন সফর থেকে বিরত থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়ে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন।

টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।

চলতি মাসে ফিন্যানশিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপকে তাঁর খালা ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপার লন্ডনে একটি দুই-বেডরুমের ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। তবে টিউলিপের দাবি, এই ফ্ল্যাটটি তিনি তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন এবং ম্যাগনাসকে জানান, এই বাড়িটি যে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর উপহার, তা তিনি সম্প্রতি জানতে পেরেছেন।

এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টিউলিপ হ্যাম্পস্টেডের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন, যা তাঁর ছোট বোনের।

ওই ফ্ল্যাটটিও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আরেক ব্যবসায়ী উপহার দিয়েছিলেন। টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সিদ্দিক প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি তাঁর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান, বিশেষ করে ব্রিটিশ আওয়ামী লীগের বাংলাদেশি সদস্যদের সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

গার্ডিয়ানের নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৩ সালে ১২ বিলিয়ন ডলারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ছবিতে তাঁকে তাঁর খালা শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা গেছে।

টিউলিপ দাবি করেন, এটি স্রেফ একটি পারিবারিক সফর এবং তিনি সেখানে গিয়েছিলেন পর্যটক হিসেবে। ম্যাগনাস তাঁর ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছেন। তবে এখন টিউলিপ বাংলাদেশের ওই চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের মুখোমুখি।

এদিকে লরি ম্যাগনাস লন্ডনে টিউলিপের বাড়িগুলোর বিষয়েও কোনো নিয়ম ভঙের প্রমাণ পাননি এবং লেনদেনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে তথ্য ছিল কম এবং টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তির ঝুঁকি সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারতেন। তিনি এটাও উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চাইলে করতে পারেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, টিউলিপ পদত্যাগে বাধ্য হন।