১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়েই যুদ্ধের অবসান চান গাজাবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়েই যুদ্ধের অবসান চান গাজাবাসী। গাজায় আর কোনো বোমার শব্দ শুনতে চান না তারা। স্বজনদের মুখ দেখার অপেক্ষায় বন্দিরা। প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরাইলির বিনিময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ১ হাজার ৮৯০ জন ফিলিস্তিনি। ৪২ দিনের চুক্তিটি কার্যকর হচ্ছে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে যুদ্ধবিরতিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পুরস্কার হিসেবে দেখছে হিজবুল্লাহ।

দীর্ঘ ১৫ মাস পর কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে যাচ্ছেন গাজাবাসী। ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। গাজার প্রতি ২০ জনের একজন যুদ্ধে আহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত ১৯ লাখ বাসিন্দার ৮০ শতাংশই বাস করছে জরাজীর্ণ তাঁবুতে। চরম খাদ্য সংকটে ২২ লাখ বাসিন্দা।

ফিলিস্তিনকে রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে ইসরাইল। অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিদ্ধান্ত হলো কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরাইলির বিনিময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি। সেই তালিকায় আছেন ফিলিস্তিনের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও ফাতাহর বেশ কয়েকজন সদস্য।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের ঘরবাড়ি ছাড়া কয়েক লাখ মানুষ। অবশেষে পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যাচ্ছেন তারা। তাদের আশা এর মধ্য দিয়ে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটবে। আর কোনো নিরীহ ফিলিস্তিনিকে প্রাণ দিতে হবে না।

ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যুদ্ধে আমরা ক্লান্ত। আমাদের একটা চাওয়া আর কোনো অজুহাতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন হবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা নিজেদের বাড়ি ফিরবো, পরিবার ও বন্ধুদের খোঁজ করবো। ১৫ মাস পর আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি।’

তবে ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তির শর্তাবলি বাস্তবায়ন বা পূরণ করা এখনো চ্যালেঞ্জের বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটি বাধার মুখেও পড়তে পারে। হামাসের সঙ্গে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ঐক্য গড়ার বিষয়টি উদ্বেগের।

ইসরাইলি বিষয়ক ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞ ইমাদ আবু আওয়াদ বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত, চুক্তিটি অনেক ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি হবে, ইসরাইল চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করতে পারে এবং এর দায়ে আবারও তাদের হামলা অব্যাহত করতে পারে। যা ফিলিস্তিনকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীর প্রধান জানান, এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পুরস্কার।

হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রধান নাইম কাসেম বলেন, ‘গাজার বিজয়ে বড় অবদান রেখেছে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। শুরু থেকেই লেবানন থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে গেছে। হিজবুল্লাহর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে সামনে এগিয়ে গেছে। তারা ভয়ংকর শত্রুদের মুখেও পিছু পা হয়নি।’

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। চুক্তি বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য মিশরে একটি যৌথ অপারেশন কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের পাশাপাশি ইসরাইলের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:১৮:০০ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
১১৪ জন দেখেছেন

অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়েই যুদ্ধের অবসান চান গাজাবাসী

আপডেট : ০২:১৮:০০ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়েই যুদ্ধের অবসান চান গাজাবাসী। গাজায় আর কোনো বোমার শব্দ শুনতে চান না তারা। স্বজনদের মুখ দেখার অপেক্ষায় বন্দিরা। প্রথম ধাপে ৩৩ ইসরাইলির বিনিময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ১ হাজার ৮৯০ জন ফিলিস্তিনি। ৪২ দিনের চুক্তিটি কার্যকর হচ্ছে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে যুদ্ধবিরতিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পুরস্কার হিসেবে দেখছে হিজবুল্লাহ।

দীর্ঘ ১৫ মাস পর কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে যাচ্ছেন গাজাবাসী। ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। গাজার প্রতি ২০ জনের একজন যুদ্ধে আহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত ১৯ লাখ বাসিন্দার ৮০ শতাংশই বাস করছে জরাজীর্ণ তাঁবুতে। চরম খাদ্য সংকটে ২২ লাখ বাসিন্দা।

ফিলিস্তিনকে রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে ইসরাইল। অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিদ্ধান্ত হলো কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরাইলির বিনিময়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি। সেই তালিকায় আছেন ফিলিস্তিনের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও ফাতাহর বেশ কয়েকজন সদস্য।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের ঘরবাড়ি ছাড়া কয়েক লাখ মানুষ। অবশেষে পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যাচ্ছেন তারা। তাদের আশা এর মধ্য দিয়ে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটবে। আর কোনো নিরীহ ফিলিস্তিনিকে প্রাণ দিতে হবে না।

ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যুদ্ধে আমরা ক্লান্ত। আমাদের একটা চাওয়া আর কোনো অজুহাতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন হবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা নিজেদের বাড়ি ফিরবো, পরিবার ও বন্ধুদের খোঁজ করবো। ১৫ মাস পর আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি।’

তবে ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তির শর্তাবলি বাস্তবায়ন বা পূরণ করা এখনো চ্যালেঞ্জের বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে সেটি বাধার মুখেও পড়তে পারে। হামাসের সঙ্গে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ঐক্য গড়ার বিষয়টি উদ্বেগের।

ইসরাইলি বিষয়ক ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞ ইমাদ আবু আওয়াদ বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত, চুক্তিটি অনেক ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি হবে, ইসরাইল চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করতে পারে এবং এর দায়ে আবারও তাদের হামলা অব্যাহত করতে পারে। যা ফিলিস্তিনকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীর প্রধান জানান, এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পুরস্কার।

হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রধান নাইম কাসেম বলেন, ‘গাজার বিজয়ে বড় অবদান রেখেছে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। শুরু থেকেই লেবানন থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে গেছে। হিজবুল্লাহর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে সামনে এগিয়ে গেছে। তারা ভয়ংকর শত্রুদের মুখেও পিছু পা হয়নি।’

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। চুক্তি বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য মিশরে একটি যৌথ অপারেশন কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের পাশাপাশি ইসরাইলের প্রতিনিধিরা থাকবেন।