০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলায় রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরালো করলো ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সাপে-নেউলে সম্পর্ক হলেও, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বারবার শোনা গেছে খোদ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকেই। অন্যদিকে কট্টর ইরান বিরোধী নীতির জন্যও পরিচিত ট্রাম্প। এ অবস্থায় ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলায় মস্কোর সাথে সম্পর্ক আরও জোরালো করলো তেহরান। ট্রাম্প শপথ নেয়া আগে আগে, পারমাণবিক ও সামরিকসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের ২০ বছরের কৌশলগত চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরান এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে এগুচ্ছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০১৭ সালে হোয়াইট হাউসের অধিপতি হয়ে ইরানকে কোণঠাসা করতে তৎপরতা শুরু করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৮ সালে বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হওয়া ইরানের পরমাণু চুক্তি। একইসঙ্গে পুনর্বহাল করেন নিষেধাজ্ঞাও। ২০২২ সালে তেহরানের ওপর দেয়া সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইলের সাথে সংঘাত-উত্তেজনার পারদ বেড়েছে ইরানের। শিকার হয়েছে হামলারও।

এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠা এবং আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইরানের জন্য বড়সড় ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলার ঝুঁকিও তুঙ্গে। এমনকি গেল নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার একমাস না যেতেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ইঙ্গিতও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ অবস্থায় ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের চাবি বুঝে পাওয়া আগে থেকেই বেশ সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে ইরান। এরই অংশ হিসেবে সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই থাকা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে তেহরান। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তেহরান-মস্কোর মধ্যে হওয়া ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি থেকে তারই আভাস মিলছে। পুতিন-পেজেশকিয়ান স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় রয়েছে পারমাণবিক, সামরিক খাতসহ বাণিজ্য, জ্বালানি, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতও।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া চুক্তিটি বিশেষ করে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আমি নিশ্চিত যে পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে তৈরি এই চুক্তি আমাদের মধ্যে সহযোগিতার নতুন এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’

অন্যদিকে, পশ্চিমা হুমকি মোকাবিলা এবং দুই দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বহির্বিশ্বের চাপ এবং অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দুই দেশ এক হয়ে কাজ করবে বলেও জানান পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রতিন বলেন, ‘যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আশা করছি আগামী দিনে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সক্ষম হবো আমরা।’

এদিকে, পশ্চিমা ও ইসরাইলি হুমকির মধ্যেই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরালো করে ইরান এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে এগুচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এরমধ্যে প্রথমটি হতে পারে-পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সস্পর্ক থাকার বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা; যার মধ্য দিয়ে বন্ধুর সঙ্গে শত্রুর বন্ধুত্বকে নিজেদের ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল হতে পারে তেহরানের। তা যদি নাও হয়, তবে যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বে সামরিক শক্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়াকে পাশে পাওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত করা হতে পারে অন্যতম লক্ষ্য। কারণ রাশিয়া এমন এক দেশ যারা যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শক্তি রাখে বলে মত বিশ্লেষকদের।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:১৬:০০ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
১১৬ জন দেখেছেন

ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলায় রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরালো করলো ইরান

আপডেট : ০২:১৬:০০ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সাপে-নেউলে সম্পর্ক হলেও, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বারবার শোনা গেছে খোদ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকেই। অন্যদিকে কট্টর ইরান বিরোধী নীতির জন্যও পরিচিত ট্রাম্প। এ অবস্থায় ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলায় মস্কোর সাথে সম্পর্ক আরও জোরালো করলো তেহরান। ট্রাম্প শপথ নেয়া আগে আগে, পারমাণবিক ও সামরিকসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের ২০ বছরের কৌশলগত চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরান এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে এগুচ্ছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০১৭ সালে হোয়াইট হাউসের অধিপতি হয়ে ইরানকে কোণঠাসা করতে তৎপরতা শুরু করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৮ সালে বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হওয়া ইরানের পরমাণু চুক্তি। একইসঙ্গে পুনর্বহাল করেন নিষেধাজ্ঞাও। ২০২২ সালে তেহরানের ওপর দেয়া সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইলের সাথে সংঘাত-উত্তেজনার পারদ বেড়েছে ইরানের। শিকার হয়েছে হামলারও।

এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠা এবং আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইরানের জন্য বড়সড় ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলার ঝুঁকিও তুঙ্গে। এমনকি গেল নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার একমাস না যেতেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ইঙ্গিতও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ অবস্থায় ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের চাবি বুঝে পাওয়া আগে থেকেই বেশ সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে ইরান। এরই অংশ হিসেবে সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই থাকা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে তেহরান। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) তেহরান-মস্কোর মধ্যে হওয়া ২০ বছর মেয়াদি চুক্তি থেকে তারই আভাস মিলছে। পুতিন-পেজেশকিয়ান স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় রয়েছে পারমাণবিক, সামরিক খাতসহ বাণিজ্য, জ্বালানি, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতও।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া চুক্তিটি বিশেষ করে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আমি নিশ্চিত যে পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে তৈরি এই চুক্তি আমাদের মধ্যে সহযোগিতার নতুন এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’

অন্যদিকে, পশ্চিমা হুমকি মোকাবিলা এবং দুই দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বহির্বিশ্বের চাপ এবং অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দুই দেশ এক হয়ে কাজ করবে বলেও জানান পুতিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রতিন বলেন, ‘যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আশা করছি আগামী দিনে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সক্ষম হবো আমরা।’

এদিকে, পশ্চিমা ও ইসরাইলি হুমকির মধ্যেই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরালো করে ইরান এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে এগুচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এরমধ্যে প্রথমটি হতে পারে-পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সস্পর্ক থাকার বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা; যার মধ্য দিয়ে বন্ধুর সঙ্গে শত্রুর বন্ধুত্বকে নিজেদের ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল হতে পারে তেহরানের। তা যদি নাও হয়, তবে যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বে সামরিক শক্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়াকে পাশে পাওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত করা হতে পারে অন্যতম লক্ষ্য। কারণ রাশিয়া এমন এক দেশ যারা যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শক্তি রাখে বলে মত বিশ্লেষকদের।