০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে চাহিদার বিপরীতে ২ শতাংশ চিনিও উৎপাদন হচ্ছে না

অনলাইন ডেস্ক

বিশাল চাহিদার বিপরীতে ২ শতাংশ চিনিও উৎপাদন করতে পারছে না দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলো। আখের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা দেয়ায় আখ চাষ কিছুটা বাড়লেও তা প্রভাব ফেলেনি চিনি উৎপাদনে। এছাড়া ৬টি চিনিকল বন্ধ থাকায় খাতটি হয়ে পড়েছে আমদানি নির্ভর। এতে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে চিনির বাজার। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো চালুর দাবি ব্যবসায়ী ও চিনিকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের।

১৯৬২ সালে চালুর পর এ জয়পুরহাট চিনিকলে সর্বোচ্চ চিনির উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪১ মেট্রিক টন। সর্বনিম্ন উৎপাদন ২০২১-২২ মড়াই মৌসুমে হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ১শ ৬২ মেট্রিক টন। তবে গত বছর উৎপাদন কিছু বাড়লেও এখনো আমদানি নির্ভরশীলতা কমছে না ফলে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হচ্ছে চিনির বাজা।

মাড়াই সক্ষমতার দিক থেকে জয়পুরহাট দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল। প্রতিদিন ২ হাজার টন আখ মাড়াই সক্ষমতা থাকলেও এ চিনিকলটিতে দেখা দিয়েছে আখের সংকট। বর্তমানে এক মাস মাড়াই করার মতো আখ মিলছে না। চলতি মাড়াই মৌসুমে ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গত মৌসুমের তুলনায় কিছুটা বেশি। কৃষকরা বলছেন আখ চাষে কিছুটা সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় আগের তুলনায় আখ চাষ কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম আরও বাড়ানোসহ উন্নত জাতের চারা দাবি করেছেন তারা। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি কৃষকদের আখচাষে ফেরাতে কৃষি ঋণ ও বীজসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক তারেক ফরহাদ বলেন, ‘আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উন্নত মানের বীজ, কীটনাশক, নগদ অর্থসহ নানা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ’

২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে দেশের ১৫ চিনিকলের মধ্যে পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর , রংপুর , পাবনা ও কুষ্টিয়া চিনিকল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ওই এলাকার আখ চাষ থেকে সরে আসে কৃষক। যার প্রভাব পড়ছে চিনি উৎপাদনে। চাকরি হারায় কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। দীর্ঘদিন চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন দেশীয় চিনির উৎপাদন বাড়ানো। তাই বন্ধ চিনিকলগুলির চালুর পাশাপাশি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে মত চিনি ব্যবসায়ীদের।

জয়পুরহাট চিনিকলের চিনি ব্যবসায়ী ও ডিলার আব্দুস সালাম আকন্দ বলেন, ‘আগের চেয়ে এই চিনির মিলগুলোর উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে। এরই সঙ্গে ৬ টা মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন উৎপাদন কমে গেলে ভোক্তা চিনি চাহিদা মতো পাবেন না এবং বাজারে দামও বেড়ে যাবে। ’

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তথ্য মতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশে চিনির চাহিদা ছিল ২২ লাখ টন। সেখানে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টন যা চাহিদার মাত্র দেড় ভাগ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে ২০২৪ সালে চিনি আমদানিতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৭শ ১০ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৩:৩৬:১৩ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
১১৩ জন দেখেছেন

দেশে চাহিদার বিপরীতে ২ শতাংশ চিনিও উৎপাদন হচ্ছে না

আপডেট : ০৩:৩৬:১৩ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বিশাল চাহিদার বিপরীতে ২ শতাংশ চিনিও উৎপাদন করতে পারছে না দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলো। আখের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা দেয়ায় আখ চাষ কিছুটা বাড়লেও তা প্রভাব ফেলেনি চিনি উৎপাদনে। এছাড়া ৬টি চিনিকল বন্ধ থাকায় খাতটি হয়ে পড়েছে আমদানি নির্ভর। এতে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে চিনির বাজার। এ অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো চালুর দাবি ব্যবসায়ী ও চিনিকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের।

১৯৬২ সালে চালুর পর এ জয়পুরহাট চিনিকলে সর্বোচ্চ চিনির উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪১ মেট্রিক টন। সর্বনিম্ন উৎপাদন ২০২১-২২ মড়াই মৌসুমে হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ১শ ৬২ মেট্রিক টন। তবে গত বছর উৎপাদন কিছু বাড়লেও এখনো আমদানি নির্ভরশীলতা কমছে না ফলে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হচ্ছে চিনির বাজা।

মাড়াই সক্ষমতার দিক থেকে জয়পুরহাট দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল। প্রতিদিন ২ হাজার টন আখ মাড়াই সক্ষমতা থাকলেও এ চিনিকলটিতে দেখা দিয়েছে আখের সংকট। বর্তমানে এক মাস মাড়াই করার মতো আখ মিলছে না। চলতি মাড়াই মৌসুমে ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গত মৌসুমের তুলনায় কিছুটা বেশি। কৃষকরা বলছেন আখ চাষে কিছুটা সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় আগের তুলনায় আখ চাষ কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম আরও বাড়ানোসহ উন্নত জাতের চারা দাবি করেছেন তারা। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি কৃষকদের আখচাষে ফেরাতে কৃষি ঋণ ও বীজসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক তারেক ফরহাদ বলেন, ‘আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উন্নত মানের বীজ, কীটনাশক, নগদ অর্থসহ নানা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ’

২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে দেশের ১৫ চিনিকলের মধ্যে পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর , রংপুর , পাবনা ও কুষ্টিয়া চিনিকল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ওই এলাকার আখ চাষ থেকে সরে আসে কৃষক। যার প্রভাব পড়ছে চিনি উৎপাদনে। চাকরি হারায় কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। দীর্ঘদিন চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন দেশীয় চিনির উৎপাদন বাড়ানো। তাই বন্ধ চিনিকলগুলির চালুর পাশাপাশি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে মত চিনি ব্যবসায়ীদের।

জয়পুরহাট চিনিকলের চিনি ব্যবসায়ী ও ডিলার আব্দুস সালাম আকন্দ বলেন, ‘আগের চেয়ে এই চিনির মিলগুলোর উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে। এরই সঙ্গে ৬ টা মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন উৎপাদন কমে গেলে ভোক্তা চিনি চাহিদা মতো পাবেন না এবং বাজারে দামও বেড়ে যাবে। ’

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তথ্য মতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশে চিনির চাহিদা ছিল ২২ লাখ টন। সেখানে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টন যা চাহিদার মাত্র দেড় ভাগ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে ২০২৪ সালে চিনি আমদানিতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৭শ ১০ কোটি টাকা।