০৭:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রায় ৪০০ বাথানে প্রতিদিন সংগ্রহ হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ লিটার খাঁটি তরল দুধ

শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনা ও সিরাজগঞ্জে মিল্কভিটাও ব্যক্তি মালিকাধীন চারশত বাথানের দিগন্ত বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে উন্নতজাতের প্রায় লক্ষাধিক গরু বিচরণ করছে। এসব গরুর আয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই লাখ পরিবার। বাথান থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ লিটার ব্যাকটেরিয়া মুক্ত খাঁটি তরল দুধ। এই দুধ সরবরাহ করা হয় সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গো-খামারীদের উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। এদিকে গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য ও অব্যাহত লোকসানে অনেকেই খামার বন্ধ করে অন্য পেশা চলে গেছেন।

শতাব্দীর প্রাচীন কাল থেকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গো-খামারী ও কৃষকরা উন্নতজাতের পাক-ভারতের জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও মুলতানি গরু লালন-পালন করে আসছেন। এ অঞ্চলের গোসম্পদের ভবিষ্যৎ এবং গোসম্পদকে অর্থকরী সম্পদে রুপ দিতে স্বাধীনতার পর বাঘাবাড়ী বড়াল নদী পাড়ে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা করখানা স্থাপন করা হয়। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির দৌরাত্বে মিল্কভিটার আওতাভূক্ত বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি বেহাত হয়ে গেছে।

স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গোচারণ ভূমির প্রায় ৫৫০ একর জমি জাল দলিল ও পত্তনির মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। সেই জমিতে ঘাসের পরিবর্তে এখন বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে খাস জমি এবং মিল্কভিটার নিয়ন্ত্রনাধীন বাথান অঞ্চল যেটুক রয়েছে, তার যথাযথ ব্যবহার করা সম্বব হচ্ছে না। ফলে বাথানে গরুর বিচরণ ও দুধ উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। বিগত বছরগুলোতে বাথানে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। বর্তমানে দুধের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখ লিটার।

জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী-নিমাইচরা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের রাউতরার কাছে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রিং বাঁধ প্রতিবছর আগাম বন্যায় ভেঙ্গে তলিয়ে যায় গোচারন ভূমি। অথচ আধা কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা হলে গবাদি-পশু কমপক্ষে নয় থেকে ১০ মাস বাথানে বিচরণ করতে পারবে। খামারীদের লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো। গো-খাদ্য খড়, ভুসি, খৈল, লালির উচ্চমূল্যের কারনে খামারীরা আর পুষিয়ে উঠতে পারছে না। অনেক খামারী অভিযোগ তুলে বলেছেন, এখন তাদের তেমন লাভ হচ্ছে না।

খামারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুধের মূল্যবৃদ্ধির দাবি করে আসছেন। সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার দরের সাথে সমন্বয় করে দুধের দাম বাড়াচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র দাম বাড়িয়েছে বলে খামারীরা অভিযোগ করেছেন। মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো গোসম্পদ উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গোসম্পদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

সরকারি ও বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারীদের কাছ থেকে চার দশমিক শুন্য স্ট্যার্ন্ডাড ননীযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনে সেই সরকারি ও বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারীদের কাছ থেকে চার দশমিক শুন্য স্ট্যার্ন্ডাড ননীযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৫৫ টাকায় কিনে সেই দুধ থেকে ননী বেড় করে নিচ্ছে। পরে তিন দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননীযুক্ত তরল দুধ প্যকেটজাত করে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে এ দুধ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা লিটার। প্রতি লিটার দুধ থেকে শুন্য দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননী তুলে ঘি তৈরি করা হচ্ছে।

এতে প্রতিলিটার দুধ থেকে ৭০ টাকার ঘি উৎপাদিত হচ্ছে। সবমিলে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধে প্রায় ১৬০ টাকা আয় করছে। তাদের প্রতিলিটার দুধে লাভ থাকছে ১০৫ টাকা। এদিকে অব্যাহত লোকসানের মুখে কৃষক ও খামারীরা এ পেশাকে অলাভজনক মনে করতে শুরু করেছেন। খামারীরা দুধের দাম বৃদ্ধির দাবি করে আসলেও তাদের সে দাবি মানা হচ্ছে না।

শাহজাদপুর উপজেলার চরাচিথুলিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সদস্য সোহেল রানা, ইউসুফ আলী, রওশন আলী, আব্দুল আলীমসহ কয়েকজন জানান, খামারীরা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারি প্রতিষ্ঠানে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করছে। এতে তাদের দুধ উৎপাদন খরচ উঠছে না। অথচ খোলা বাজারে এই দুধ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা লোকসানে পড়েছেন। অনেক খামারি লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনাময় দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে চলনবিল অঞ্চলের বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৪০০টি বাথানে প্রায় পাঁচ হাজার একর গোচারন ভূমি ছিল। জাল দলিল ও ভূয়া পত্তনি নিয়ে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি গোচারন ভূমি আত্মসাৎ করেছে। মিল্কভিটার ম্যানেজার সোসাইটি জানান, মাত্র ৮৫০ একর জমি তাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

তিনি জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন গোচারণ ভূমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। অনেকে গোচারণ ভূমি বোরো আবাদে ব্যবহার করছে। সে কারনে গোচারণ ভূমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। ফলে বিশাল এ গোসম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, অস্ট্রেলিয়ান ও সিন্ধিসহ হরেক জাতের শঙ্কর গাভী রয়েছে বাথান এলাকায়।

পৌষ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস (ছয় মাস) পর্যন্ত গবাদিপশু বাথাণ এলাকায় অবস্থান করে। বণ্যার পানি গোচারণ ভূমি থেকে নেমে যাওয়ার পর আবাদকৃত ঘাস খাওয়ার উপযোগী হলেই গবাদিপশু বাথানে নেয়া হয়। বাথান এলাকার অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে বাঁশের ঘেরা দিয়ে গরুগুলো রাখা হয়। তবে বকনা, ও থারি, ষাঁড় এবং বাছুরগুলোর জন্য পাশাপাশি রয়েছে আলাদা ঘেরার ব্যবস্থা। বিস্তীর্ণ গোচারন ভূমিতে চরে বেড়ানোর পর বিকেলে এরা ঘেরায় ফিরে আসে। গবাদিপশুর খৈল-ভূসি ও রাখালদের থাকার জন্য রয়েছে খড়ের তৈরি ঘর। প্রায় ছয় মাস এখানে রাখলদের থাকতে হয়। গোচারণ ভূমি বণ্যার পানিতে তলিয়ে গেলে গবাদিপশু নিয়ে আসা হয় গোশালায়।

গবাদিপশুর মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একক মালিকানায় বাথানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। পাঁচ থেকে ১৫ জন মিলে একত্রে একটি বাথানে আয়তন ভেদে ৪০০ থেকে ৯০০ গরু রাখেন। এসব খামার মালিকদের প্রায় প্রতিদিনই একবার করে বাথানে যেতে হয় খোঁজখবর নিতে। তবে তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে খৈল-ভূসি-লালি সরবরাহ দুধের দাম ইত্যাদি সংগ্রহ করে। খামার মালিকদের নিয়োজিত রাখালরা সার্বক্ষনিক বাথানে অবস্থান করে। পুরোপুরি এদের ওপরই নির্ভর করতে হয় গরুর মালিকদের। বর্তমানে বাথানে প্রতিদিন সকাল বিকাল প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ হচ্ছে। খামারিরা এই দুধ সরকারি-বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজাবে সরবরাহ করে আসছে।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৭:১১:২৯ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
১২২ জন দেখেছেন

প্রায় ৪০০ বাথানে প্রতিদিন সংগ্রহ হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ লিটার খাঁটি তরল দুধ

আপডেট : ০৭:১১:২৯ অপরাহ্ন, রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

পাবনা ও সিরাজগঞ্জে মিল্কভিটাও ব্যক্তি মালিকাধীন চারশত বাথানের দিগন্ত বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে উন্নতজাতের প্রায় লক্ষাধিক গরু বিচরণ করছে। এসব গরুর আয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই লাখ পরিবার। বাথান থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ লিটার ব্যাকটেরিয়া মুক্ত খাঁটি তরল দুধ। এই দুধ সরবরাহ করা হয় সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গো-খামারীদের উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। এদিকে গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য ও অব্যাহত লোকসানে অনেকেই খামার বন্ধ করে অন্য পেশা চলে গেছেন।

শতাব্দীর প্রাচীন কাল থেকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গো-খামারী ও কৃষকরা উন্নতজাতের পাক-ভারতের জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও মুলতানি গরু লালন-পালন করে আসছেন। এ অঞ্চলের গোসম্পদের ভবিষ্যৎ এবং গোসম্পদকে অর্থকরী সম্পদে রুপ দিতে স্বাধীনতার পর বাঘাবাড়ী বড়াল নদী পাড়ে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা করখানা স্থাপন করা হয়। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির দৌরাত্বে মিল্কভিটার আওতাভূক্ত বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি বেহাত হয়ে গেছে।

স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গোচারণ ভূমির প্রায় ৫৫০ একর জমি জাল দলিল ও পত্তনির মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। সেই জমিতে ঘাসের পরিবর্তে এখন বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে খাস জমি এবং মিল্কভিটার নিয়ন্ত্রনাধীন বাথান অঞ্চল যেটুক রয়েছে, তার যথাযথ ব্যবহার করা সম্বব হচ্ছে না। ফলে বাথানে গরুর বিচরণ ও দুধ উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। বিগত বছরগুলোতে বাথানে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। বর্তমানে দুধের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখ লিটার।

জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী-নিমাইচরা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের রাউতরার কাছে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রিং বাঁধ প্রতিবছর আগাম বন্যায় ভেঙ্গে তলিয়ে যায় গোচারন ভূমি। অথচ আধা কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা হলে গবাদি-পশু কমপক্ষে নয় থেকে ১০ মাস বাথানে বিচরণ করতে পারবে। খামারীদের লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো। গো-খাদ্য খড়, ভুসি, খৈল, লালির উচ্চমূল্যের কারনে খামারীরা আর পুষিয়ে উঠতে পারছে না। অনেক খামারী অভিযোগ তুলে বলেছেন, এখন তাদের তেমন লাভ হচ্ছে না।

খামারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুধের মূল্যবৃদ্ধির দাবি করে আসছেন। সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার দরের সাথে সমন্বয় করে দুধের দাম বাড়াচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র দাম বাড়িয়েছে বলে খামারীরা অভিযোগ করেছেন। মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো গোসম্পদ উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গোসম্পদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

সরকারি ও বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারীদের কাছ থেকে চার দশমিক শুন্য স্ট্যার্ন্ডাড ননীযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনে সেই সরকারি ও বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারীদের কাছ থেকে চার দশমিক শুন্য স্ট্যার্ন্ডাড ননীযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৫৫ টাকায় কিনে সেই দুধ থেকে ননী বেড় করে নিচ্ছে। পরে তিন দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননীযুক্ত তরল দুধ প্যকেটজাত করে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে এ দুধ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা লিটার। প্রতি লিটার দুধ থেকে শুন্য দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননী তুলে ঘি তৈরি করা হচ্ছে।

এতে প্রতিলিটার দুধ থেকে ৭০ টাকার ঘি উৎপাদিত হচ্ছে। সবমিলে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটার দুধে প্রায় ১৬০ টাকা আয় করছে। তাদের প্রতিলিটার দুধে লাভ থাকছে ১০৫ টাকা। এদিকে অব্যাহত লোকসানের মুখে কৃষক ও খামারীরা এ পেশাকে অলাভজনক মনে করতে শুরু করেছেন। খামারীরা দুধের দাম বৃদ্ধির দাবি করে আসলেও তাদের সে দাবি মানা হচ্ছে না।

শাহজাদপুর উপজেলার চরাচিথুলিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সদস্য সোহেল রানা, ইউসুফ আলী, রওশন আলী, আব্দুল আলীমসহ কয়েকজন জানান, খামারীরা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারি প্রতিষ্ঠানে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করছে। এতে তাদের দুধ উৎপাদন খরচ উঠছে না। অথচ খোলা বাজারে এই দুধ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা লোকসানে পড়েছেন। অনেক খামারি লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনাময় দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে চলনবিল অঞ্চলের বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলায় ৪০০টি বাথানে প্রায় পাঁচ হাজার একর গোচারন ভূমি ছিল। জাল দলিল ও ভূয়া পত্তনি নিয়ে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি গোচারন ভূমি আত্মসাৎ করেছে। মিল্কভিটার ম্যানেজার সোসাইটি জানান, মাত্র ৮৫০ একর জমি তাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

তিনি জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন গোচারণ ভূমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। অনেকে গোচারণ ভূমি বোরো আবাদে ব্যবহার করছে। সে কারনে গোচারণ ভূমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। ফলে বিশাল এ গোসম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, অস্ট্রেলিয়ান ও সিন্ধিসহ হরেক জাতের শঙ্কর গাভী রয়েছে বাথান এলাকায়।

পৌষ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস (ছয় মাস) পর্যন্ত গবাদিপশু বাথাণ এলাকায় অবস্থান করে। বণ্যার পানি গোচারণ ভূমি থেকে নেমে যাওয়ার পর আবাদকৃত ঘাস খাওয়ার উপযোগী হলেই গবাদিপশু বাথানে নেয়া হয়। বাথান এলাকার অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে বাঁশের ঘেরা দিয়ে গরুগুলো রাখা হয়। তবে বকনা, ও থারি, ষাঁড় এবং বাছুরগুলোর জন্য পাশাপাশি রয়েছে আলাদা ঘেরার ব্যবস্থা। বিস্তীর্ণ গোচারন ভূমিতে চরে বেড়ানোর পর বিকেলে এরা ঘেরায় ফিরে আসে। গবাদিপশুর খৈল-ভূসি ও রাখালদের থাকার জন্য রয়েছে খড়ের তৈরি ঘর। প্রায় ছয় মাস এখানে রাখলদের থাকতে হয়। গোচারণ ভূমি বণ্যার পানিতে তলিয়ে গেলে গবাদিপশু নিয়ে আসা হয় গোশালায়।

গবাদিপশুর মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একক মালিকানায় বাথানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। পাঁচ থেকে ১৫ জন মিলে একত্রে একটি বাথানে আয়তন ভেদে ৪০০ থেকে ৯০০ গরু রাখেন। এসব খামার মালিকদের প্রায় প্রতিদিনই একবার করে বাথানে যেতে হয় খোঁজখবর নিতে। তবে তাদের বেশিরভাগ সময় কাটে খৈল-ভূসি-লালি সরবরাহ দুধের দাম ইত্যাদি সংগ্রহ করে। খামার মালিকদের নিয়োজিত রাখালরা সার্বক্ষনিক বাথানে অবস্থান করে। পুরোপুরি এদের ওপরই নির্ভর করতে হয় গরুর মালিকদের। বর্তমানে বাথানে প্রতিদিন সকাল বিকাল প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ হচ্ছে। খামারিরা এই দুধ সরকারি-বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাজাবে সরবরাহ করে আসছে।

বাখ//এস