০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিতলমারীতে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিচার চেয়ে বিপাকে সহকারী শিক্ষকরা

চিতলমারী প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারীর কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষকরা। নিজের ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সহকারি শিক্ষকদের হুমকি-ধামকি, মারপিট ও ভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী ও ভীতি প্রদর্শন করছেন প্রধান শিক্ষক। এই অবস্থায় নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছেন সহকারী শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদার বলেন, কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম ২০১৬ সালে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি দ‚র্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারি ও ক্ষমতা লোভী হয়ে উঠেন। প্রধান শিক্ষক উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

তিনি কথায় কথায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে দ‚র্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেত না। গত ৫ই আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনিসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ রেজুলেশনের মাধ্যমে তার আমলের কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের নিরিক্ষা কমিটি গঠন করেন। নিরীক্ষা কমিটির তার দেওয়া তথ্য, কাগজপত্র বিশ্লেষন করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের হিসাব দাখিল দেন।

এই বিরাট আত্মসাতের কথা সর্বত্র জানাজানি ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি শিক্ষকদের সাথে চরম দ‚র্ব্যবহার, থানায় মিথ্যা অভিযোগ, ভয়ভীতি, শারিরীক নির্যাতনের মত ঘটনা তিনি ঘটিয়ে চলেছেন। তার প্রতিবাদে শিক্ষকগণ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ সংবাদ সম্মেলন এবং ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ উপজেলা পরিষদে মানববন্ধন করে বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিচারের দাবীতে নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

তিনি অর্থ আত্মসাৎ ও দ‚র্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সহকারি শিক্ষকদের হয়রানির জন্য একটি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। যা গত ১৫ জানুয়ারী ডুমুরিয়া ক্যাম্প ইনচার্জ বিদ্যালয়ে তদন্তের জন্য যান। এ অভিযোগের বিষয় শুনে সহকারি শিক্ষকদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘যে প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্মাসাৎ ও দ‚র্নীতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এতবড় মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন। সেই শিক্ষক আমাদের যে কোন সময় যে কোন ধরনের মান অপমানসহ প্রাণনাশ ঘটাতে কাল বিলম্ব করবেন না বলে আমরা মনে করি।’

আরেক সহকারী শিক্ষক অপ‚র্ব বিশ্বাস বরেন, প্রধান শিক্ষক একজন দ‚র্নীতিবাজ মানুষ। সে বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা যখনই এসব নিয়ে কথা বলেছি, তখনই তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছি।

এ ব্যাপারে কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম জানান, আসলে আমি কোন অর্থ আত্মসাত করি নেই। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহাদাৎ হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করেছেন। শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে ঘটনার সমাধান করার কথা বলেছেন।

বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৮:৩১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
৮৭ জন দেখেছেন

চিতলমারীতে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিচার চেয়ে বিপাকে সহকারী শিক্ষকরা

আপডেট : ০৮:৩১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

বাগেরহাটের চিতলমারীর কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষকরা। নিজের ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সহকারি শিক্ষকদের হুমকি-ধামকি, মারপিট ও ভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী ও ভীতি প্রদর্শন করছেন প্রধান শিক্ষক। এই অবস্থায় নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছেন সহকারী শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদার বলেন, কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম ২০১৬ সালে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি দ‚র্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারি ও ক্ষমতা লোভী হয়ে উঠেন। প্রধান শিক্ষক উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

তিনি কথায় কথায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে দ‚র্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেত না। গত ৫ই আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনিসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ রেজুলেশনের মাধ্যমে তার আমলের কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের নিরিক্ষা কমিটি গঠন করেন। নিরীক্ষা কমিটির তার দেওয়া তথ্য, কাগজপত্র বিশ্লেষন করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের হিসাব দাখিল দেন।

এই বিরাট আত্মসাতের কথা সর্বত্র জানাজানি ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি শিক্ষকদের সাথে চরম দ‚র্ব্যবহার, থানায় মিথ্যা অভিযোগ, ভয়ভীতি, শারিরীক নির্যাতনের মত ঘটনা তিনি ঘটিয়ে চলেছেন। তার প্রতিবাদে শিক্ষকগণ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ সংবাদ সম্মেলন এবং ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ উপজেলা পরিষদে মানববন্ধন করে বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিচারের দাবীতে নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

তিনি অর্থ আত্মসাৎ ও দ‚র্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সহকারি শিক্ষকদের হয়রানির জন্য একটি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। যা গত ১৫ জানুয়ারী ডুমুরিয়া ক্যাম্প ইনচার্জ বিদ্যালয়ে তদন্তের জন্য যান। এ অভিযোগের বিষয় শুনে সহকারি শিক্ষকদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘যে প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্মাসাৎ ও দ‚র্নীতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এতবড় মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন। সেই শিক্ষক আমাদের যে কোন সময় যে কোন ধরনের মান অপমানসহ প্রাণনাশ ঘটাতে কাল বিলম্ব করবেন না বলে আমরা মনে করি।’

আরেক সহকারী শিক্ষক অপ‚র্ব বিশ্বাস বরেন, প্রধান শিক্ষক একজন দ‚র্নীতিবাজ মানুষ। সে বিদ্যালয়ের বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা যখনই এসব নিয়ে কথা বলেছি, তখনই তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছি।

এ ব্যাপারে কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম জানান, আসলে আমি কোন অর্থ আত্মসাত করি নেই। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহাদাৎ হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করেছেন। শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে ঘটনার সমাধান করার কথা বলেছেন।

বাখ//এস