০২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন ইসরাইলি জিম্মির বদলে ৯০ ফিলিস্তিনির মুক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

হামাস তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার সাত ঘণ্টা পর ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরাইল। এর মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো। অনিশ্চিত জীবন থেকে দীর্ঘদিন পর ফিলিস্তিনরা মুক্তি পাওয়ায় আনন্দে ভাসছেন স্বজনরা। ইসরাইলি আগ্রাসনে ধ্বংস্তুপে রূপ নেয়া গাজাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার স্বপ্ন বুনছেন ২৩ লাখ বাসিন্দা। চুক্তির ১৬তম দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা শুরু হবে বলে জানালেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বিনা কারণে দখলদার ইসরাইলের হাতে আটকের পর দীর্ঘ কারাবন্দি জীবন, অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় আওতায় প্রথম দফায় ৯০ ফিলিস্তিনির মুক্তি। এরপর রেড ক্রসের জিম্মায় উত্তর ইসরাইলের কারাগার থেকে বাসে করে ফিরলেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের এই বাসিন্দাদের স্বাগত জানান আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা স্বজন ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এক বিজয় উদযাপন মঞ্চে রূপ নেয় অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ্। বুকে জড়িয়ে নেন প্রিয়জনরা।

মাতৃভূমিতে পা রেখেই যুদ্ধবিরতিকে বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিরা, যদিও ততদিনে ইসরাইলের হাতে তছনছ গাজা। দীর্ঘদিন পর রামাল্লার মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পেরে যেন স্বর্গ ফিরে পেলেন তারা। বললেন, ইসরাইলের কারাগার ছিল নরকের মতোই কিছু। বন্দী দশায় অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনাও উঠে এসেছে তাদের কাছ থেকে।

একজন ফিলিস্তিনি বন্দি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি এখন স্বর্গে আছি এবং এই মাত্র নরক থেকে বেরিয়ে এলাম। তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালাতো, মারধর করত, আমাদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তো।’

অন্য একজন বন্দি বলেন, ‘আমি গত ৫ মাস কারাগারে ছিলাম। গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কারাগারের পরিস্থিতি আগের চেয়ও খারাপ হয়েছে।’

কারাবন্দি অন্য একজন বলেন, ‘স্বাধীনতা, হ্যাঁ এটা স্বাধীনতা। কারাগারে থেকে আমরা আকাশ দেখা জন্য মুখিয়ে ছিলাম। আমি বিশ্বাস করতার সত্যি একদিন মুক্তি পাবো, তা আজ সত্যি হয়েছে। তারা আমাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করতো।’

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির দেয়ার সাত ঘণ্টা আগে তিন ইসরাইলি বন্দিকে রেড ক্রসের হাতে বুঝিয়ে দেয় হামাস। যারা ইতোমধ্যেই ফিরেছেন নিজ বাড়িতে। ১৫ মাসের বেশি সময় পর স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। পরে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। হামাসের হাতে আটক ইসরাইলিরা ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ফোনে বিষয়টি তদারকি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে স্বাগত জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজে আজ প্রত্যাবর্তন হতে যাওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেন, ‘চুক্তির ১৬তম দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে। এই পর্যায়ে ইসরাইলি সৈন্যদের মুক্তি এবং হামাস ইসরাইলকে হুমকি না দেয়ার শর্তে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি অগ্রগতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিন ঘণ্টা পর রোববার (১৯ জানুয়ারি) শুরু হওয়া বন্দি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন বিরতিতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ফিলিস্তিনিরা। আশ্রয় শিবির থেকে লাখ লাখ বাসিন্দা ফিরছেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিজ বাড়ি-ঘরে। ইসরাইলি বর্বরতায় ধ্বংস্তুপেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন ২৩ লাখ গাজাবাসী।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমাদের এই বিজয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। আমরা গাজাকে আগের চেয়েও সুন্দর করে গড়ে তুলব। গাজা থেকে পশ্চিম তীরের জেনিন পর্যন্ত এই বিজয় উদযাপন করা হচ্ছে।’

গাজায় বসবাসকারী একজন বলেন, ‘আমরা আমাদের পুরো দেশ পুনর্নির্মাণ করব। আমাদের শিশু-নারীসহ সবাই মিলে নতুন করে শহর গড়ার কাজে অংশ নেবো। গাজা আগের অবস্থায় ফিরবে।’

প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে থাকা ৩৩ ইসরাইলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া কথা ইসরাইলের। পর্যায়ক্রমে জিম্মিরা মুক্তি পাওয়ার পর গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে ইসরাইলের।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৮:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
৭২ জন দেখেছেন

তিন ইসরাইলি জিম্মির বদলে ৯০ ফিলিস্তিনির মুক্তি

আপডেট : ০৮:৩৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

হামাস তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার সাত ঘণ্টা পর ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরাইল। এর মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো। অনিশ্চিত জীবন থেকে দীর্ঘদিন পর ফিলিস্তিনরা মুক্তি পাওয়ায় আনন্দে ভাসছেন স্বজনরা। ইসরাইলি আগ্রাসনে ধ্বংস্তুপে রূপ নেয়া গাজাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার স্বপ্ন বুনছেন ২৩ লাখ বাসিন্দা। চুক্তির ১৬তম দিনের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা শুরু হবে বলে জানালেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বিনা কারণে দখলদার ইসরাইলের হাতে আটকের পর দীর্ঘ কারাবন্দি জীবন, অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় আওতায় প্রথম দফায় ৯০ ফিলিস্তিনির মুক্তি। এরপর রেড ক্রসের জিম্মায় উত্তর ইসরাইলের কারাগার থেকে বাসে করে ফিরলেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের এই বাসিন্দাদের স্বাগত জানান আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা স্বজন ও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এক বিজয় উদযাপন মঞ্চে রূপ নেয় অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ্। বুকে জড়িয়ে নেন প্রিয়জনরা।

মাতৃভূমিতে পা রেখেই যুদ্ধবিরতিকে বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেন কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিরা, যদিও ততদিনে ইসরাইলের হাতে তছনছ গাজা। দীর্ঘদিন পর রামাল্লার মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পেরে যেন স্বর্গ ফিরে পেলেন তারা। বললেন, ইসরাইলের কারাগার ছিল নরকের মতোই কিছু। বন্দী দশায় অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনাও উঠে এসেছে তাদের কাছ থেকে।

একজন ফিলিস্তিনি বন্দি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি এখন স্বর্গে আছি এবং এই মাত্র নরক থেকে বেরিয়ে এলাম। তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালাতো, মারধর করত, আমাদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তো।’

অন্য একজন বন্দি বলেন, ‘আমি গত ৫ মাস কারাগারে ছিলাম। গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কারাগারের পরিস্থিতি আগের চেয়ও খারাপ হয়েছে।’

কারাবন্দি অন্য একজন বলেন, ‘স্বাধীনতা, হ্যাঁ এটা স্বাধীনতা। কারাগারে থেকে আমরা আকাশ দেখা জন্য মুখিয়ে ছিলাম। আমি বিশ্বাস করতার সত্যি একদিন মুক্তি পাবো, তা আজ সত্যি হয়েছে। তারা আমাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করতো।’

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির দেয়ার সাত ঘণ্টা আগে তিন ইসরাইলি বন্দিকে রেড ক্রসের হাতে বুঝিয়ে দেয় হামাস। যারা ইতোমধ্যেই ফিরেছেন নিজ বাড়িতে। ১৫ মাসের বেশি সময় পর স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। পরে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। হামাসের হাতে আটক ইসরাইলিরা ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ফোনে বিষয়টি তদারকি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে স্বাগত জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজে আজ প্রত্যাবর্তন হতে যাওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেন, ‘চুক্তির ১৬তম দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে। এই পর্যায়ে ইসরাইলি সৈন্যদের মুক্তি এবং হামাস ইসরাইলকে হুমকি না দেয়ার শর্তে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি অগ্রগতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিন ঘণ্টা পর রোববার (১৯ জানুয়ারি) শুরু হওয়া বন্দি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন বিরতিতে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ফিলিস্তিনিরা। আশ্রয় শিবির থেকে লাখ লাখ বাসিন্দা ফিরছেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিজ বাড়ি-ঘরে। ইসরাইলি বর্বরতায় ধ্বংস্তুপেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন ২৩ লাখ গাজাবাসী।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমাদের এই বিজয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। আমরা গাজাকে আগের চেয়েও সুন্দর করে গড়ে তুলব। গাজা থেকে পশ্চিম তীরের জেনিন পর্যন্ত এই বিজয় উদযাপন করা হচ্ছে।’

গাজায় বসবাসকারী একজন বলেন, ‘আমরা আমাদের পুরো দেশ পুনর্নির্মাণ করব। আমাদের শিশু-নারীসহ সবাই মিলে নতুন করে শহর গড়ার কাজে অংশ নেবো। গাজা আগের অবস্থায় ফিরবে।’

প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে থাকা ৩৩ ইসরাইলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়া কথা ইসরাইলের। পর্যায়ক্রমে জিম্মিরা মুক্তি পাওয়ার পর গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে ইসরাইলের।