০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে বিপ্লব, বানিজ্য হয় ১৫শত কোটি টাকা

মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতিবছরের ন্যয় এবারও টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কাঁচা পাঁকা টমেটো ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে । মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাম ভাল থাকায় জমজমাটভাবে চলছে টমেটোর কারবার। গোদাগাড়ী হেলিপ্যাড, সিএন্ডবি, রেলগেট, হাবাসপুর, গোপালপুর, কাঁকনহাট, মহিশালবাড়ী, বসন্তপুর, রেলগেট, চর আষাড়িয়াদহ, পিরিজপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয়েছে পাঁকানোর কারবার, টমেটো পাঁকাতে টমেটো রোদে শুকানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনোগুলো স্তুপ করে রেখে খড় দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে।

যেগুলোতে প্রায় পুরোপুরি লাল রং ধারণ করবে, সেগুলো আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাজারজাত করণ হবে। এই টমেটোগুলোই চলে যাবে নাটোর, বগুড়া, নওগা, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে টমেটো প্রক্রিয়াজতের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়।

বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে অস্থায়ী বাড়ি করে বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফাঁকা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে কাঁচা টমেটো পাঁকিয়ে বাজারজাত করছেন। এভাবে গোদাগাড়ীর অন্তত ৫০টি স্থানে চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই টমেটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। গত প্রায় একমাস ধরে এবারকার মৌসুমের টমেটো বেচাকেনা শুরু করে অব্যাহতভাবে চলছে। এই দুই মাস টমেটোর চরণভূমি বলে খ্যাত গোদাগাড়ীতে শুধুমাত্র টমেটো মৌসুমে প্রায় ১৫ শ থেকে ১৮ শ কোটি টাকার। অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।

পদ্মা নদীর ওই পার চরাঞ্চলের কৃষকরা দিন দিন টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছে। প্রতি বছর চরাঞ্চলে বাড়ছে টমেটোর চাষ। চরাঞ্চলের জমি পলিমাটি হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের চাইতে টমেটোর সাইজ বড় হচ্ছে এবং দাম বেশী পাচ্ছে এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২ হাজার ৬শ” ৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫শ” ৯৫ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ১শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫শ” ২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৪শ” ৬০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৭১ হাজার ২শ” ৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ হাজার ৪ শ” ৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ২শ” ৪৫ হেক্টর; উৎপাদন হয়েছিল ৬৫ হাজার ১শ” ৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬ শ”৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন।

এ উপজেলায় ১৭-২০ জাতের টমেটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগই হাইব্রিড। তবে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তবে ভালো ফলন, বীজ ও দাম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কোনো বছর চাষের হার বেড়েছে আবার কোনো বছর কমেছে। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ১৫ হাজার কৃষক ও কৃষি শ্রমিক।

গোদাগাড়ী উপজেলার মাদারপুর এলাকার বড় টমেটো চাষী সুমন আলী বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে, দামও ভাল পাচ্ছি, চাঁদাবাজি নেই। ব্যবসায়ীরা জমিতে থেকেই টমেটো কিনে নিচ্ছে। ৮ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি গত বছরের চেয়ে বেশী ইনকাম হয়ে গেছে।

টমেটো ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, এবার ভালো টমেটো আছে। ভালো দাম আছে। প্রতিদিন এক ট্রাক করে টমেটো ঢাকায় পাঁঠায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় যাচ্ছে এসব টমেটো। দাম কমে গেল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এই অঞ্চলে দুবার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা। এবছর এই টমেটো ১৫-১৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে। শত শত কোটি টাকার এখানে বানিজ্য হয়। শুধু তাই নয়, টমেটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৯ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:২৭:৪৫ অপরাহ্ন, রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
১১৫ জন দেখেছেন

গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষে বিপ্লব, বানিজ্য হয় ১৫শত কোটি টাকা

আপডেট : ০৪:২৭:৪৫ অপরাহ্ন, রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতিবছরের ন্যয় এবারও টমেটো চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কাঁচা পাঁকা টমেটো ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে । মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাম ভাল থাকায় জমজমাটভাবে চলছে টমেটোর কারবার। গোদাগাড়ী হেলিপ্যাড, সিএন্ডবি, রেলগেট, হাবাসপুর, গোপালপুর, কাঁকনহাট, মহিশালবাড়ী, বসন্তপুর, রেলগেট, চর আষাড়িয়াদহ, পিরিজপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয়েছে পাঁকানোর কারবার, টমেটো পাঁকাতে টমেটো রোদে শুকানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনোগুলো স্তুপ করে রেখে খড় দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে।

যেগুলোতে প্রায় পুরোপুরি লাল রং ধারণ করবে, সেগুলো আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাজারজাত করণ হবে। এই টমেটোগুলোই চলে যাবে নাটোর, বগুড়া, নওগা, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে টমেটো প্রক্রিয়াজতের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়।

বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে অস্থায়ী বাড়ি করে বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফাঁকা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে কাঁচা টমেটো পাঁকিয়ে বাজারজাত করছেন। এভাবে গোদাগাড়ীর অন্তত ৫০টি স্থানে চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই টমেটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। গত প্রায় একমাস ধরে এবারকার মৌসুমের টমেটো বেচাকেনা শুরু করে অব্যাহতভাবে চলছে। এই দুই মাস টমেটোর চরণভূমি বলে খ্যাত গোদাগাড়ীতে শুধুমাত্র টমেটো মৌসুমে প্রায় ১৫ শ থেকে ১৮ শ কোটি টাকার। অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।

পদ্মা নদীর ওই পার চরাঞ্চলের কৃষকরা দিন দিন টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছে। প্রতি বছর চরাঞ্চলে বাড়ছে টমেটোর চাষ। চরাঞ্চলের জমি পলিমাটি হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের চাইতে টমেটোর সাইজ বড় হচ্ছে এবং দাম বেশী পাচ্ছে এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২ হাজার ৬শ” ৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫শ” ৯৫ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ১শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫শ” ২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৪শ” ৬০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৭১ হাজার ২শ” ৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ হাজার ৪ শ” ৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ২শ” ৪৫ হেক্টর; উৎপাদন হয়েছিল ৬৫ হাজার ১শ” ৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬ শ”৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন।

এ উপজেলায় ১৭-২০ জাতের টমেটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগই হাইব্রিড। তবে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তবে ভালো ফলন, বীজ ও দাম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কোনো বছর চাষের হার বেড়েছে আবার কোনো বছর কমেছে। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ১৫ হাজার কৃষক ও কৃষি শ্রমিক।

গোদাগাড়ী উপজেলার মাদারপুর এলাকার বড় টমেটো চাষী সুমন আলী বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে, দামও ভাল পাচ্ছি, চাঁদাবাজি নেই। ব্যবসায়ীরা জমিতে থেকেই টমেটো কিনে নিচ্ছে। ৮ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি গত বছরের চেয়ে বেশী ইনকাম হয়ে গেছে।

টমেটো ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, এবার ভালো টমেটো আছে। ভালো দাম আছে। প্রতিদিন এক ট্রাক করে টমেটো ঢাকায় পাঁঠায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় যাচ্ছে এসব টমেটো। দাম কমে গেল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এই অঞ্চলে দুবার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা। এবছর এই টমেটো ১৫-১৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে। শত শত কোটি টাকার এখানে বানিজ্য হয়। শুধু তাই নয়, টমেটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৯ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাখ//আর