০৫:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সাড়ে ১২%

অনলাইন ডেস্ক

জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রপ্তানি কমে গেলেও, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র জটিলতা কমে যাওয়ায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আর অর্থনীতীবিদরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় বেড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি।

জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুর্থানের পর বাংলাদেশের রপ্তানিতে কিছুটা ধস নামে। তবে ধীরে ধীরে এই ধস থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাড়তে শুরু করেছে পণ্য রপ্তানি। এনবিআরের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর ডিসেম্বরে রপ্তানি বেড়ে ৪৬৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

চার মাস টানা ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। ফলে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে ২ হাজার ৪৬২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছর ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়।

পণ্য রপ্তানিতে বরাবরের মতই প্রথম স্থানে পোশাক শিল্প। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধ আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে আবারও পোশাক ব্যবসা ফিরেছে। পাশাপাশি চীন থেকেও ক্রয়াদেশ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পোশাক শিল্পে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ তৈরি করার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার আহ্বান তাদের।

বিজিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘২০২৩ এর বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিটি ফ্যাক্টরি অলরেডি হোঁচট খাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ক্যাশ ফ্লো চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ এ পট পরিবর্তনের সময়ে যেসব ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ ছিল সেখানে যে ক্ষতি হয়েছে তাতেও ক্যাশ ফ্লো ব্লিডিং হয়েছে। তাই একটা সময় দিতে হবে রিকভারি জন্য। রিকভারি না হতেই আবার বাড়ানো হলো সব, যেমন ইতোমধ্যে সতর্ক করা হচ্ছে গ্যাসে মূল্য বাড়ানো হবে। ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা না বলেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হলো। এতে তো মূল্যস্ফীতি বাড়বে কমবে না। আমাদের আসলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা করা প্রয়োজন। আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নিলে ইকো সিস্টেমের ক্ষতি হবে।’

এছাড়াও রপ্তানির সাথে জড়িত বিভিন্ন আমলাতন্ত্র ও দুর্নীতি কিছুটা কমে যাওয়াতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বলেন, আমলাতন্ত্র জটিলতা আরো কমে গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটা গ্রে এরিয়া সব সময় থাকে এই জায়গাটাতে দুর্নীতি কমার পাশাপাশি আমলাতন্ত্র আগের থেকে একটু সহজ হয়েছে। কিন্তু এখনো মানসম্মত হয়নি। যার কারণে আমরা রপ্তানিটা ভালোভাবে করতে পারছি। এছাড়া ব্যাংকগুলো আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তবে আরো উন্নতি দরকার রয়েছে।’

এদিকে বিশ্ববাজারের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হওয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিতে জড়িত সকল ক্ষেত্রে নজরদারি আরো বাড়ানোরও আহ্বান তাদের।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার যদি এটা সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারে, টাকা কেনা ও যা বিক্রি হচ্ছে সেটার পরিমাণ সত্যিকার অর্থে জানা। এরই সঙ্গে বহিঃবিশ্বের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সংগতি রাখা এবং নতুন বাজারের প্রতি যদি সঠিকভাবে মনযোগ দেয়া হয়। তাহলে আমি বলতে পারি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের শ্রম মজুরির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলে দেখা যাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাবে আগামীতে।’

বাণিজ্য বাড়াতে এখন থেকেই নতুন বাজার খোঁজারও তাগিদ দেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:৫৮:৪১ অপরাহ্ন, রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
৭১ জন দেখেছেন

চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সাড়ে ১২%

আপডেট : ০২:৫৮:৪১ অপরাহ্ন, রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রপ্তানি কমে গেলেও, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র জটিলতা কমে যাওয়ায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আর অর্থনীতীবিদরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় বেড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি।

জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুর্থানের পর বাংলাদেশের রপ্তানিতে কিছুটা ধস নামে। তবে ধীরে ধীরে এই ধস থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাড়তে শুরু করেছে পণ্য রপ্তানি। এনবিআরের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর ডিসেম্বরে রপ্তানি বেড়ে ৪৬৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

চার মাস টানা ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। ফলে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে ২ হাজার ৪৬২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছর ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়।

পণ্য রপ্তানিতে বরাবরের মতই প্রথম স্থানে পোশাক শিল্প। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধ আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে আবারও পোশাক ব্যবসা ফিরেছে। পাশাপাশি চীন থেকেও ক্রয়াদেশ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পোশাক শিল্পে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ তৈরি করার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার আহ্বান তাদের।

বিজিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘২০২৩ এর বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিটি ফ্যাক্টরি অলরেডি হোঁচট খাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ক্যাশ ফ্লো চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ এ পট পরিবর্তনের সময়ে যেসব ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ ছিল সেখানে যে ক্ষতি হয়েছে তাতেও ক্যাশ ফ্লো ব্লিডিং হয়েছে। তাই একটা সময় দিতে হবে রিকভারি জন্য। রিকভারি না হতেই আবার বাড়ানো হলো সব, যেমন ইতোমধ্যে সতর্ক করা হচ্ছে গ্যাসে মূল্য বাড়ানো হবে। ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা না বলেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হলো। এতে তো মূল্যস্ফীতি বাড়বে কমবে না। আমাদের আসলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা করা প্রয়োজন। আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নিলে ইকো সিস্টেমের ক্ষতি হবে।’

এছাড়াও রপ্তানির সাথে জড়িত বিভিন্ন আমলাতন্ত্র ও দুর্নীতি কিছুটা কমে যাওয়াতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বলেন, আমলাতন্ত্র জটিলতা আরো কমে গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটা গ্রে এরিয়া সব সময় থাকে এই জায়গাটাতে দুর্নীতি কমার পাশাপাশি আমলাতন্ত্র আগের থেকে একটু সহজ হয়েছে। কিন্তু এখনো মানসম্মত হয়নি। যার কারণে আমরা রপ্তানিটা ভালোভাবে করতে পারছি। এছাড়া ব্যাংকগুলো আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তবে আরো উন্নতি দরকার রয়েছে।’

এদিকে বিশ্ববাজারের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হওয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিতে জড়িত সকল ক্ষেত্রে নজরদারি আরো বাড়ানোরও আহ্বান তাদের।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার যদি এটা সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারে, টাকা কেনা ও যা বিক্রি হচ্ছে সেটার পরিমাণ সত্যিকার অর্থে জানা। এরই সঙ্গে বহিঃবিশ্বের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সংগতি রাখা এবং নতুন বাজারের প্রতি যদি সঠিকভাবে মনযোগ দেয়া হয়। তাহলে আমি বলতে পারি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের শ্রম মজুরির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলে দেখা যাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাবে আগামীতে।’

বাণিজ্য বাড়াতে এখন থেকেই নতুন বাজার খোঁজারও তাগিদ দেন সংশ্লিষ্টরা।