০৮:২৪ অপরাহ্ন, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন চলছে না ট্রেন, কিসের দাবিতে কর্মবিরতি?

অনলাইন ডেস্ক

রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বান করা হয়। তবে নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার কারণে গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেননি রানিং স্টাফরা।

রানিং স্টাফদের মধ্যে গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকোমাস্টার এবং টিটিইর মতো ট্রেন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ রানিং স্টাফ দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, তাদের দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারিত। তবে বাস্তবে তাদের ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অতীতে এই অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা একটি বিশেষ আর্থিক সুবিধা পেতেন, যা রেলওয়ে পরিভাষায় ‘মাইলেজ’ নামে পরিচিত। এটি তাদের বেতনেরই একটি অংশ হিসেবে ধরা হতো।

প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালানোর জন্য তারা মূল বেতনের একটি দিনের সমপরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ পেতেন। এভাবে মাসিক কাজের পরিমাণ আড়াই থেকে তিন মাসের সমান হয়ে যেত এবং তাদের বেতনও সেই অনুযায়ী প্রদান করা হতো। এছাড়া অবসরকালীন ভাতার ক্ষেত্রে তাদের মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে পেনশন দেওয়া হতো।

তবে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে, সরকার অতিরিক্ত কাজের ভিত্তিতে পেনশন সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের ওই বিশেষ সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এক ধর্মঘটের পর রেল মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পেনশন সুবিধা অব্যাহত রাখা হলেও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী লোকোমাস্টাররা এ সুবিধা পাননি। তাদের নিয়োগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরির সময় বা অবসরের পর তারা কোনো অতিরিক্ত অর্থ পাবেন না।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারিতে একটি সংবাদ সম্মেলনে রানিং স্টাফরা মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবি তোলেন। সেই সঙ্গে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে থাকা শর্ত দুটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। দাবি পূরণ না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ১৬০ বছর ধরে রানিং স্টাফরা মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছেন। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতেও তারা নিরলসভাবে ট্রেন চালু রেখেছেন। তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা জাতীয় ছুটির সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারের দুর্নীতি এবং অর্থ অপচয়ের কারণে ২০২১ সালে তাদের এই সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা শুধু রানিং অ্যালাউন্স পাবেন, অন্য কোনো ভাতা নয়। পাশাপাশি, তাদের মাসিক রানিং অ্যালাউন্স মূল বেতনের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। অবসরকালীন পেনশন ও আনুতোষিকের হিসাবও মূল বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে, যা রেলওয়ের প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মজিবুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল কর্মবিরতির সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেসময় রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
১৪৩ জন দেখেছেন

কেন চলছে না ট্রেন, কিসের দাবিতে কর্মবিরতি?

আপডেট : ০১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বান করা হয়। তবে নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার কারণে গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেননি রানিং স্টাফরা।

রানিং স্টাফদের মধ্যে গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকোমাস্টার এবং টিটিইর মতো ট্রেন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ রানিং স্টাফ দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, তাদের দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারিত। তবে বাস্তবে তাদের ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অতীতে এই অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা একটি বিশেষ আর্থিক সুবিধা পেতেন, যা রেলওয়ে পরিভাষায় ‘মাইলেজ’ নামে পরিচিত। এটি তাদের বেতনেরই একটি অংশ হিসেবে ধরা হতো।

প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালানোর জন্য তারা মূল বেতনের একটি দিনের সমপরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ পেতেন। এভাবে মাসিক কাজের পরিমাণ আড়াই থেকে তিন মাসের সমান হয়ে যেত এবং তাদের বেতনও সেই অনুযায়ী প্রদান করা হতো। এছাড়া অবসরকালীন ভাতার ক্ষেত্রে তাদের মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে পেনশন দেওয়া হতো।

তবে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে, সরকার অতিরিক্ত কাজের ভিত্তিতে পেনশন সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের ওই বিশেষ সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এক ধর্মঘটের পর রেল মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পেনশন সুবিধা অব্যাহত রাখা হলেও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী লোকোমাস্টাররা এ সুবিধা পাননি। তাদের নিয়োগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরির সময় বা অবসরের পর তারা কোনো অতিরিক্ত অর্থ পাবেন না।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারিতে একটি সংবাদ সম্মেলনে রানিং স্টাফরা মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবি তোলেন। সেই সঙ্গে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে থাকা শর্ত দুটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। দাবি পূরণ না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ১৬০ বছর ধরে রানিং স্টাফরা মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছেন। দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতেও তারা নিরলসভাবে ট্রেন চালু রেখেছেন। তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা জাতীয় ছুটির সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারের দুর্নীতি এবং অর্থ অপচয়ের কারণে ২০২১ সালে তাদের এই সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা শুধু রানিং অ্যালাউন্স পাবেন, অন্য কোনো ভাতা নয়। পাশাপাশি, তাদের মাসিক রানিং অ্যালাউন্স মূল বেতনের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। অবসরকালীন পেনশন ও আনুতোষিকের হিসাবও মূল বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে, যা রেলওয়ের প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মজিবুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল কর্মবিরতির সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেসময় রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।