০৭:৪৩ অপরাহ্ন, রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই বিপ্লব বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে : প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক

বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। যাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।

আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশের বইমেলার উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘একুশ ঐক্যের প্রতীক। একুশের মতোই জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। রফিক, সালাম, বরকতের আত্মত্যাগ বিস্ফোরণ হয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।’ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত দেশকে সঠিক গন্তব্য পৌঁছানোর পথে তৈরি হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্পাতকঠিন প্রতিজ্ঞা। এ সময় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতাদের স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা যদি একুশের ভাষা আন্দোলনকে আরো গভীরতর প্রেক্ষিতে স্বাধিকার আন্দোলন হিসাবেও দেখি তাহলে অমর একুশের গণ্ডি বৃহত্তর হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমরা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের তাদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। শহর ও গ্রামের নারী পুরুষকে কৃষি, শিল্প, সাংস্কৃতিক জগৎ, বিজ্ঞান, বাণিজ্য শিক্ষায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা নির্দিষ্ট বছরে জাতির জন্য অবদান রেখেছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে পারি, তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক আয়োজন করে দিতে পারি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের, প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। সারা পৃথিবী জুড়ে নানা কাজে বাংলাদেশিরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আমরা একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা সবাই একুশের দিনে নিজের দেশকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করে। তারা আমাদের পরিবারের অংশ হিসেবে তাদের সন্তান-সন্ততির কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা, একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া, একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা-বিস্ফোরক শতাব্দি। অর্ধশতাব্দি পর এই মহা-বিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিলো। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেলো। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্ত্বায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রথিত হলো। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ের শপথ নিতে এসেছি।

বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এছাড়া অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৮:০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১০৭ জন দেখেছেন

জুলাই বিপ্লব বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে : প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট : ০৮:০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। যাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।

আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশের বইমেলার উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘একুশ ঐক্যের প্রতীক। একুশের মতোই জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। রফিক, সালাম, বরকতের আত্মত্যাগ বিস্ফোরণ হয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।’ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত দেশকে সঠিক গন্তব্য পৌঁছানোর পথে তৈরি হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্পাতকঠিন প্রতিজ্ঞা। এ সময় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতাদের স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা যদি একুশের ভাষা আন্দোলনকে আরো গভীরতর প্রেক্ষিতে স্বাধিকার আন্দোলন হিসাবেও দেখি তাহলে অমর একুশের গণ্ডি বৃহত্তর হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমরা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের তাদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। শহর ও গ্রামের নারী পুরুষকে কৃষি, শিল্প, সাংস্কৃতিক জগৎ, বিজ্ঞান, বাণিজ্য শিক্ষায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা নির্দিষ্ট বছরে জাতির জন্য অবদান রেখেছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে পারি, তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক আয়োজন করে দিতে পারি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের, প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি। সারা পৃথিবী জুড়ে নানা কাজে বাংলাদেশিরা কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আমরা একুশের দিনে তাদের সবাইকে স্মরণ করতে চাই। তারা সবাই একুশের দিনে নিজের দেশকে স্মরণ করে অনুষ্ঠান করে। তারা আমাদের পরিবারের অংশ হিসেবে তাদের সন্তান-সন্ততির কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা, একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া, একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা-বিস্ফোরক শতাব্দি। অর্ধশতাব্দি পর এই মহা-বিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিলো। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেলো। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্ত্বায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রথিত হলো। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ের শপথ নিতে এসেছি।

বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এছাড়া অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।