১০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে বছরে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যানসারে

অনলাইন ডেস্ক

দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যান্সারে কারণে হয়। আর নতুন রোগী হয় প্রতি লাখে ৫৩ জন। আজ (শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে চলমান গবেষণা ফলে এ তথ্য দেয়া হয়। গবেষণায় আরো বলা হয় নতুন যুক্ত হওয়া ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার এবং স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি।

দেশে ক্যান্সার রোগীর সঠিক সংখ্যা এবং ধরণ নির্ধারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই ধাপে একটি গবেষণা কার্যক্রম চলে। যেখানে দেখা যায় দেশে বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যান্সার।

আজ (শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বিএসএমএমইউতে পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগ আয়োজিত বাংলাদেশের ক্যান্সার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলে এসব তথ্য দেয়া হয়।

গবেষণায় ৩৮টি ভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। রোগীদের মধ্যে ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সীরাই বেশি। এর মধ্যে প্রধান পাঁচটি ক্যান্সার হলো স্তন ক্যান্সার, ঠোঁট ও মুখগহ্বর, পাকস্থলী, স্বরযন্ত্র এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস, লিভার ও স্বরযন্ত্র এবং নারীদের ক্ষেত্রে লিভার, জরায়ুমুখ, এবং খাদ্যনালির ক্যান্সার বেশি। এগুলো কেন বাড়ছে এবং প্রতিকার নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান চিকিৎসকরা।

গবেষণা কার্যক্রমটি এখনও সম্পন্ন হয়নি। আগামীতে যাতে এ ধরনের কার্যক্রম বিএসএমএমইউ ছাড়াও আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে যাতে হয়, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

আগামী এক মাসের মধ্যে ক্যান্সার হাসপাতালে দু’টি রেডিওলজি মেশিন দেয়া হবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের আট বিভাগে নির্মাণাধীন ক্যান্সার হাসপাতালে প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ওয়েব-ভিত্তিক জাতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রতিটি পরিবারের সশরীরে সাক্ষাতকার নেয়া হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে একই পরিবারের ফলো-আপ শুরু হয়।

গবেষণার প্রধান বিএসএমএমইউ-এর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমডি খালেকুজ্জামান ফলাফল উপস্থাপন করেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি লাখে ১০৬ জনের মধ্যে (পুরুষদের জন্য লাখে ১১৮ জন এবং নারীদের জন্য লাখে ৯৬ জন) ক্যানসারে প্রাদুর্ভাব ছিল। গবেষণায় ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লাখ ১ হাজার ৬৬৮ জন অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমকি ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৮ ধরনের ক্যানসার চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যানসার রোগী ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ছিলেন। ২ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী ১৮ বছরের নিচে এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ রোগী ৭৫ বছরের ওপরে ছিলেন।

গবেষণা অনুযায়ী, শীর্ষ ৫টি ক্যানসারে ছিল– স্তন ক্যানসার (১৬.৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যানসার (৮.৪ শতাংশ), পাকস্থলীর ক্যানসার (৭ শতাংশ), কণ্ঠনালীর ক্যানসার (৭ শতাংশ) এবং জরায়ু ক্যানসার (৫.১ শতাংশ)।

নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রজনন অঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত (জরায়ু ক্যানসার ১১ শতাংশ, ডিম্বাশয় ৫ শতাংশ, এবং গর্ভাশয় ৩ শতাংশ)।

ক্যানসার রোগীদের আরও কিছু রোগ ছিল– হাইপারটেনশন (১৭ শতাংশ), ডায়াবেটিস (১১ শতাংশ), হৃদরোগ (৬ শতাংশ), ক্রনিক কিডনি রোগ (৩ শতাংশ) এবং স্ট্রোক (২ শতাংশ)। ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ক্যানসার রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। ৪৬ শতাংশ ক্যানসার রোগী তামাক সেবন করেন না।

ক্যানসার রোগীদের ৬০ শতাংশ একাধিক চিকিৎসা যেমন অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী রোগ নির্ণয়ের পর কোনো চিকিৎসা পাননি।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪১১টি পরিবারের ৫৮ হাজার ৫৩৯ জন অংশগ্রহণকারীকে ফলো-আপ করা হয়েছে।

নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ ৩টি ক্যানসার ছিল– ফুসফুসের ক্যানসার (১৬.১ শতাংশ), যকৃতের ক্যানসার (১২.৯ শতাংশ) এবং কণ্ঠনালীর ক্যানসার (১২.৯ শতাংশ)। গবেষকরা বলেছেন, বর্তমান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা উচিত।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:২৭:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১১০ জন দেখেছেন

দেশে বছরে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যানসারে

আপডেট : ০৪:২৭:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যান্সারে কারণে হয়। আর নতুন রোগী হয় প্রতি লাখে ৫৩ জন। আজ (শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে চলমান গবেষণা ফলে এ তথ্য দেয়া হয়। গবেষণায় আরো বলা হয় নতুন যুক্ত হওয়া ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার এবং স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি।

দেশে ক্যান্সার রোগীর সঠিক সংখ্যা এবং ধরণ নির্ধারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই ধাপে একটি গবেষণা কার্যক্রম চলে। যেখানে দেখা যায় দেশে বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যান্সার।

আজ (শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বিএসএমএমইউতে পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগ আয়োজিত বাংলাদেশের ক্যান্সার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলে এসব তথ্য দেয়া হয়।

গবেষণায় ৩৮টি ভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। রোগীদের মধ্যে ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সীরাই বেশি। এর মধ্যে প্রধান পাঁচটি ক্যান্সার হলো স্তন ক্যান্সার, ঠোঁট ও মুখগহ্বর, পাকস্থলী, স্বরযন্ত্র এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস, লিভার ও স্বরযন্ত্র এবং নারীদের ক্ষেত্রে লিভার, জরায়ুমুখ, এবং খাদ্যনালির ক্যান্সার বেশি। এগুলো কেন বাড়ছে এবং প্রতিকার নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান চিকিৎসকরা।

গবেষণা কার্যক্রমটি এখনও সম্পন্ন হয়নি। আগামীতে যাতে এ ধরনের কার্যক্রম বিএসএমএমইউ ছাড়াও আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে যাতে হয়, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

আগামী এক মাসের মধ্যে ক্যান্সার হাসপাতালে দু’টি রেডিওলজি মেশিন দেয়া হবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের আট বিভাগে নির্মাণাধীন ক্যান্সার হাসপাতালে প্রজেক্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ওয়েব-ভিত্তিক জাতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রতিটি পরিবারের সশরীরে সাক্ষাতকার নেয়া হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে একই পরিবারের ফলো-আপ শুরু হয়।

গবেষণার প্রধান বিএসএমএমইউ-এর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমডি খালেকুজ্জামান ফলাফল উপস্থাপন করেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি লাখে ১০৬ জনের মধ্যে (পুরুষদের জন্য লাখে ১১৮ জন এবং নারীদের জন্য লাখে ৯৬ জন) ক্যানসারে প্রাদুর্ভাব ছিল। গবেষণায় ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লাখ ১ হাজার ৬৬৮ জন অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমকি ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৮ ধরনের ক্যানসার চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যানসার রোগী ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ছিলেন। ২ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী ১৮ বছরের নিচে এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ রোগী ৭৫ বছরের ওপরে ছিলেন।

গবেষণা অনুযায়ী, শীর্ষ ৫টি ক্যানসারে ছিল– স্তন ক্যানসার (১৬.৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যানসার (৮.৪ শতাংশ), পাকস্থলীর ক্যানসার (৭ শতাংশ), কণ্ঠনালীর ক্যানসার (৭ শতাংশ) এবং জরায়ু ক্যানসার (৫.১ শতাংশ)।

নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রজনন অঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত (জরায়ু ক্যানসার ১১ শতাংশ, ডিম্বাশয় ৫ শতাংশ, এবং গর্ভাশয় ৩ শতাংশ)।

ক্যানসার রোগীদের আরও কিছু রোগ ছিল– হাইপারটেনশন (১৭ শতাংশ), ডায়াবেটিস (১১ শতাংশ), হৃদরোগ (৬ শতাংশ), ক্রনিক কিডনি রোগ (৩ শতাংশ) এবং স্ট্রোক (২ শতাংশ)। ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ক্যানসার রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। ৪৬ শতাংশ ক্যানসার রোগী তামাক সেবন করেন না।

ক্যানসার রোগীদের ৬০ শতাংশ একাধিক চিকিৎসা যেমন অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী রোগ নির্ণয়ের পর কোনো চিকিৎসা পাননি।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪১১টি পরিবারের ৫৮ হাজার ৫৩৯ জন অংশগ্রহণকারীকে ফলো-আপ করা হয়েছে।

নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ ৩টি ক্যানসার ছিল– ফুসফুসের ক্যানসার (১৬.১ শতাংশ), যকৃতের ক্যানসার (১২.৯ শতাংশ) এবং কণ্ঠনালীর ক্যানসার (১২.৯ শতাংশ)। গবেষকরা বলেছেন, বর্তমান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা উচিত।