বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ইসলামের দৃষ্টিতে কিছু কথা

কোরআন হাদিসের আলোকে যে ভালোবাসা পড়ে তাতে প্রেমিকা বা ক্রাশ বলে কেউ নেই, আছে স্ত্রী, বাবা, মা ভাই-বোনসহ আত্নীয় ও পুরো মুসলিম উম্মহ। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও সবার প্রতি ভালোবাসা। এই ভালোবাসা নির্মল এতে অশ্লীলতার ছোয়া নেই, নেই কোন অন্যায় আবদার। যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার নবী (সা.)- এর অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন। ‘ (আলে ইমরান: ৩১)।
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা : মুসলিমের জীবনের সব কিছু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনামতে হবে। তাই কারো প্রতি অন্তরের ভালোবাসা থাকলে তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ওই দিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন জালিম ব্যক্তি সেই দিন নিজের উভয় হাত কামড় দিয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সত্পথ অবলম্বন করতাম!’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)
ভালবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা। ভালোবাসার সংজ্ঞা বিতর্ক, অনুমান, এবং অর্ন্তদর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই ভালোবাসার মত একটি সর্বজনীন ধারণাকে আবেগপ্রবণ ভালোবাসা, কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা কিংবা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ভালোবাসা এসব ভাগে ভাগ করার পক্ষপাতী নন। তবে এসব ভালোবাসাকে শারীরিক আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা যেতে পারে। সাধারণ মতে, ভালোবাসাকে একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটা একজন মানুষ অপর আরেকজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতিক্ষেত্রে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত। অধিকাংশ প্রচলিত ধারণায় ভালোবাসা, নিঃস্বার্থতা, স্বার্থপরতা, বন্ধুত্ব মিলন, পরিবার এবং পারিবারিক বন্ধনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।
ভালোবাসার সাধারণ এবং বিপরীত ধারণার তুলনা করে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসাকে জটিলভাবে বিচার করা যায়। ধনাত্মক অনুভূতির কথা বিবেচনা করে ভালোবাসাকে ঘৃণার বিপরীতে স্থান দেওয়া যায়। ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত গৌণ বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটাই বেশি গুরুত্ব বহন করে। কল্পনাবিলাসিতার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হচ্ছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা সাধারণত কেবল বন্ধুত্ব নয়। যদিও কিছু সম্পর্ককে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব বলেও অভিহিত করা যায়।
আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস `সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে`। তরুণ-তরুণী শুধু নয়, নানা নানি বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি। `কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন?` এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণের ছোট জবাব, `ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।`তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ রাজধানী।
এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে পল্লবিত। অনেকের মতে, ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেয়া হয়।নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু`ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ।অন্যদিকে আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেয়া-নেয়া।
কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস শেষ হলো নতুন তরুনীদের বেহায়াপনা, ফুল দিয়ে জড়াজড়ি করে, কিস দেয়া কপত কপতিগণ কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকা আরও কত কিছু নিজেকে লিখতে লজ্জা লাগছে। উদ্যানে, লেকপাড়ে, পার্কে, নদীর পাড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে ভালবাসা বিলাতে, অথচ তাদের নিজেদের ঘর-সংসারে ভালবাসা নেই!
ভালোবাসা দিবস মানুষকে নৈতিক অবক্ষয়, অশ্লীল ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করছে। অভিভাবকগণ সঠিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিলে হয়তো বা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না। মানুষ যখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাব ছিল না। আজ পৃথিবীতে ভালোবাসার বড় অভাব। আর হবেই না কেন? অপবিত্রতা, নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালোবাসা বলে কিছু থাকতে পারে না।
দিনটিতে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা তো সম্পূর্ণ বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। উঠতি মেয়েরা রূপান্তরিত হয়ে জৈবিক কামনা ও যৌনতার খোরাকে রূপ নেয়। অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাতব্যাপী চলে নীরবে-নিভৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কর্মসূচি! একে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি কিছুটা হলেও যথার্থ হবে।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর, কোমল মানবিক অনুভূতি। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের জন্যও ভালোবাসা। নিজের ঘরকে অরক্ষিত রেখে নারীরা বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত সন্তান বড় হচ্ছে নৈতিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষাহীনভাবে। ছেলে-মেয়েদের আচরণ নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময়ই হয় না। এ অবস্থার ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়ে আমাদের সন্তানরা একপর্যায়ে বখাটে, নেশাখোর, সর্বশেষ সন্ত্রাসী হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করছে। অনেক মা-বাবাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজেদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে ব্যস্ত থাকেন এবং সন্তানদের আদর-ভালোবাসা ও সঙ্গ দিতে না পারায় সন্তানরাও বাবা-মার শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একদিন অনাচারের খপ্পরে পড়বে সেটি আর বিচিত্র কী! এ কারনে জন্ম হচ্ছে খন্দকার মুশতাক ওরফে কিং মুশতাক ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা, হাজারও বাবা মার প্রাণ কাঁদছে হাইহুতাস করেছে। গোটা দেশ দেখছে।
আমাদের বাংলাদেশী ভ্যালেন্টাইনরা যাদের অনুকরণে এ দিবস পালন করে, তাদের ভালবাসা জীবনজ্বালা আর জীবন জটিলতার নাম; মা-বাবা, ভাইবোন হারাবার নাম; নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত হওয়ার নাম। তাদের ভালবাসার পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা-ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী। বর্তমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে স্যাটেলাইটের কল্যাণে মুসলিম সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণ করছে। নিজেদের স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র্যকে ভুলে গিয়ে, ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে তারা আজকে প্রগতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে তাদের কর্মকান্ডে মুসলিম জাতির উঁচু শির নত হচ্ছে।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে বেশ পরিচিত একটি নাম “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” বা “ভ্যালেন্টাইনস ডে” একজন সচেতন মানুষ কোন কাজ করার আগেই সে কাজটি সম্পর্কে অন্ততঃপক্ষে সেটা জানার চেষ্টা করবেন “ভ্যালেন্টাইনস ডে” সম্পর্কে এখন বোধহয় পরিস্কার ধারনা থাকা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। “ভ্যালেন্টাইনস ডে” কি? এর পেছনের লুকানো ইতিহাস? কোথায় এর উৎপত্তি আমাদের দেশেই বা আসলো কিভাবে? এসব নিয়ে কিছু জানার চেষ্টায় নিচের তথ্য-উপত্তঃ
‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নিয়ে লেখালাখি কম হয় নাই। ব্যাপারটা এখন অনেকটাই পরিবর্তীত ইতিহাস বা রূপকথা। শুরুটা হয়েছিল প্রায় সতের শত সাঁইত্রিশ বছর আগে ইটালীর রোমে, এই বিষয়ে সবাই একমত হলেও এর শুরুহবার কাহিনী নিয়ে রয়েছে মতের ভিন্নতা এর উৎপত্তি রহস্য ঘুচানো হয়ত সম্ভব না, তবুও কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা মাত্র- ইতিহাস পর্যালোচনার শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ধারনা- খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দের কথা।
সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট দ্বিতীয়-ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিণীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। তার ধারণা ছিল, বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সম্রাট তখন নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন’ রাজার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তাকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়। ভ্যালেন্টাইন রাজাকে জানালেন, খিষ্টধর্মে বিশ্বাসের কারণে তিনি কাউকে বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হতে বারণ করতে পারেন না। রাজা তখন তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন।
কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন। উল্লেখ্য, রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে এ ধর্মের প্রাধান্য ছিল। ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অনুগত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত।
জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের অন্ধ মেয়ে ‘সেন্ট মারিয়াস’ও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।
আরেকটি খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো।
এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
অন্য আরেকটি মতে, ফেব্রুয়ারী মাসে প্রাচীন রোমে বসন্ত শুরু হত। তারা এই মাসটিকে পবিত্রতা ও শুদ্ধতার মাস মনে করত। ঐ সময়ে তারা ধর্মীয়ভাবে তাদের বাড়ি ঘর পরিষ্কার করত। প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী ‘জুনো’র সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা ‘লুপারকেলিয়া’ নামে একটি ভোজের আয়োজন করত যা তাদের কৃষি দেবতা ‘ফাউনাস’ এবং রোম প্রতিষ্ঠাতা “রমিওলাস” ও “রেমাস” এর নামে উতসর্গ করা হত।
এই ভোজ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন ছিল একটি লটারি। এই লটারির মাধ্যমে পরবর্তি বছরের জন্য রোমান যুবকরা তাদের নারীসঙ্গী পেত। পরবর্তিতে পোপ গেলাসিয়াস এই লটারি প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন এবং এই দিবস কে খ্রীষ্টিয় ফ্লেভার দিতে ভ্যালেন্টাইন ডে নামের মোড়ক দিয়ে আবৃত করেন। মজার কথা হল এই ১৪ শতকের আগেও ভ্যালেন্টাইন দিবসের সাথে ভালবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না।
বাংলাদেশে কিভাবে এই ভ্যালেন্টাইনস ডে আসল-১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘঠে। ‘যায় যায় দিন’ পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি প্রথম যায় যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়। এতক্ষনে আমরা মনে হয় এটুকু বুঝতে পেরেছি যে আজকের ভালবাসা দিবসের উৎপত্তি ভালবাসা দিবস হিসেবে হয় নি। বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।এইবার ভাবুন, এই দিবস পালন করে তাঁরা কোন ধর্মের, কোন সংস্কৃতি উদ্ধার করছেন। এদের মানসিক চিকিৎসা দরকার।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো। এ দিবস পালনের ক্ষতি
ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন। তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’
সূরা আল মায়িদাহঃ ৬৪
নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে। নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’
সূরা আন-নূরঃ ১৯
শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইজ্জত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়।
ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’ [সূরা আল-বাকারা:১৯৫]। ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’ [সূরা আল-বাকারা:২২২]।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
ভালবাসা এক দিনের জন্য নয় সারা জীবনের জন্য। এ কামনা করি।
[এই বিভাগের লেখা লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত এ বিভাগের লেখার সাথে বাংলা খবর বিডির সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে]