০৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ৮ বছর : প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

আসাদুর রহমান, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সমকাল সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার ৮ম বার্ষিকীতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নানা কর্মসূচী পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এ উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে ঐতিহ্যবাহী শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন সকালে ‘শিমুল হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে ; খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দিতে হবে’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এ জাফর লিটনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল সরকারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোঃ আল আমিন হোসেন, সাবেক সভাপতি বিমল কুন্ডু, সাংবাদিক আবুল কাশেম, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ, মির্জা হুমায়ুন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার ৮ বছর পূর্ণ হলেও এখনও মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন তিনি হাসপাতালে মারা যান। ওই হত্যাকাণ্ডে পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে পুলিশ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি!

সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক, মেয়ে তামান্না-ই-ফাতিমা, মামা হাজী আব্দুল মজিদ মন্ডল, মামাতো ভাই আজাদ মন্ডল বলেন, শিমুল হত্যা মামলার সকল আসামীই জামিনে বাইরে থাকায় আমরা সবসময় ভয়ে থাকি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ হত্যাকারীদের বিচার শুরু না হওয়ায় মনে আর প্রবোধ দিতে পারছি না!আমরা দ্রুত খুনীদের শাস্তি দেখতে চাই।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোঃ আল আমিন হোসেন ও সাবেক সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রকাশ্যে গুলি করে সাংবাদিক শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ আসামিপক্ষের নানা কূটকৌশলের কারণে আট বছরেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে মামলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও পরবর্তীতে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করে চার্জগঠনে বাধা সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ শিমুল হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এর পর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে এটি স্থগিত করে। এর প্রেক্ষিতে নিহত শিমুলের স্ত্রী নূরুননাহার সুপ্রীমকোর্টের আপিলেড ডিভিশনে লিফ টু আপীল করলে আপিলেড ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই থেকে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি। ফলে শিমুল হত্যা মামলা আজও পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক বটে!

এদিকে, এ পীড়াদায়ক ঘটনার অবসানে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর সমকাল সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার বিচারকার্য শেষ করতে ও খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি ও দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিমুলের স্বজনেরা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
পরে প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে প্রয়াত সাংবাদিক শিমুলের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ শামছুর রহমান শিশির, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ শাহজাদপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ও প্রয়াত শিমুলের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:৩৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৮৬ জন দেখেছেন

সাংবাদিক শিমুল হত্যার ৮ বছর : প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা

আপডেট : ০১:৩৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সমকাল সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার ৮ম বার্ষিকীতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নানা কর্মসূচী পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এ উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে ঐতিহ্যবাহী শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন সকালে ‘শিমুল হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে ; খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দিতে হবে’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এ জাফর লিটনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল সরকারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোঃ আল আমিন হোসেন, সাবেক সভাপতি বিমল কুন্ডু, সাংবাদিক আবুল কাশেম, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ, মির্জা হুমায়ুন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার ৮ বছর পূর্ণ হলেও এখনও মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন তিনি হাসপাতালে মারা যান। ওই হত্যাকাণ্ডে পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে পুলিশ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি!

সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক, মেয়ে তামান্না-ই-ফাতিমা, মামা হাজী আব্দুল মজিদ মন্ডল, মামাতো ভাই আজাদ মন্ডল বলেন, শিমুল হত্যা মামলার সকল আসামীই জামিনে বাইরে থাকায় আমরা সবসময় ভয়ে থাকি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ হত্যাকারীদের বিচার শুরু না হওয়ায় মনে আর প্রবোধ দিতে পারছি না!আমরা দ্রুত খুনীদের শাস্তি দেখতে চাই।

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোঃ আল আমিন হোসেন ও সাবেক সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রকাশ্যে গুলি করে সাংবাদিক শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ আসামিপক্ষের নানা কূটকৌশলের কারণে আট বছরেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে মামলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও পরবর্তীতে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করে চার্জগঠনে বাধা সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ শিমুল হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এর পর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে এটি স্থগিত করে। এর প্রেক্ষিতে নিহত শিমুলের স্ত্রী নূরুননাহার সুপ্রীমকোর্টের আপিলেড ডিভিশনে লিফ টু আপীল করলে আপিলেড ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই থেকে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি। ফলে শিমুল হত্যা মামলা আজও পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক বটে!

এদিকে, এ পীড়াদায়ক ঘটনার অবসানে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর সমকাল সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার বিচারকার্য শেষ করতে ও খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি ও দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিমুলের স্বজনেরা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
পরে প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে প্রয়াত সাংবাদিক শিমুলের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ শামছুর রহমান শিশির, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ শাহজাদপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ ও প্রয়াত শিমুলের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

বাখ//আর