০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪২ দিনে ছয় বিমান দুর্ঘটনা, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মাত্র ৪২ দিনে পাঁচ দেশে ভয়াবহ ছয়টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝড়লো ৩ শতাধিক আরোহীর। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দু’দিনে দুই দুর্ঘটনায় তিন আকাশযানের মোট ৭৪ আরোহীর প্রাণহানিতে নতুন করে আলোচনায় অ্যাভিয়েশন খাত। ঠিক কি কারণে এতো ঘনঘন বিমান দুর্ঘটনা ঘটছে তার আসল কারণ জানার দাবিও জোরালো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে লেগে যেতে পারে দীর্ঘসময়।

২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর। এক সপ্তাহেই ব্রাজিল, আজারবাইজান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্তত ২৩০ আরোহীর প্রাণহানির সাক্ষী হয় বিশ্ববাসী।

একমাস যেতে না যেতেই ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ সুদানে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ আরোহীর। এই ঘটনার একদিনের মাথায় ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে যাত্রীবাহী বিমান ও সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ৬৭ আরোহীর কেউই আর বেঁচে ফেরেননি। এই শোকের মধ্যেই দুইদিনের মাথায় দেশটির পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্তে শিশুসহ ৭ জনের সবাই মারা যান।

এ নিয়ে মাত্র ৪২ দিনে পাঁচটি দেশে ভয়াবহ ৬টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৩২০ জনের বেশি আরোহীর। সাম্প্রতিক সময়ে এতগুলো বিমান দুর্ঘটনা এর আগে আর কখনোই দেখেনি কেউ। এতে করে আকাশপথে যাত্রার নিরাপত্তা নিয়েও আতঙ্কে যাত্রীরা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কি দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে আকাশ পথ, নাকি ত্রুটির পাল্লা ভারী হচ্ছে বিমান পরিবহণ সেবায়।

যাত্রীদের একজন বলেন, ‘দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে ঘন ঘন ঘটেনি। উড়ে যাওয়া সত্যিই নিরাপদ। তবে যখন কোনো ভুলের কারণে মানুষ মারা যায় তখন তা ভয়াবহ।’

আরেকজন বলেন, ‘আপনি বিমানের ক্রুদের চেনেন না, পাইলটদেরও চেনেন না। কেউ কখনই জানেন না কী ঘটতে পারে। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সম্প্রতি এতো বেশি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দুশ্চিন্তারই কারণ।’

সম্প্রতি বিমান দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কি কারণে এতবেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে আকাশযান? এর জন্য কি আবহাওয়া, নাকি অন্য কিছু দায়ী?

জনমনে যখন এসব প্রশ্ন জমা হচ্ছে, তখনও সামনে আসেনি কোনটির আসল কারণ। তবে গত ২৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৯ যাত্রীর মৃত্যুর পেছনে, বার্ডস স্ট্রাইক বা পাখির আঘাতকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হয়। বলা হয়, বিধ্বস্ত বিমানটির ইঞ্জিনের ভেতরও নাকি পাখির পালক ও রক্ত পাওয়া গেছে। যদিও দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে ২৫ ডিসেম্বর বাকু থেকে রাশিয়াতে যাওয়ার পথে কাজাখস্তানের আকতাউয়ে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৯ আরোহীর প্রাণহানির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে আজারবাইজান। ইউক্রেনের ড্রোন ভেবে রাশিয়া গুলি চালালে যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে দাবি করা হয়। এ ঘটনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমা চাইলেও সরাসরি দায় স্বীকার করেননি।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে দু’দিনের ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনায় তিনটি আকাশযানের মোট ৭৪জন আরোহীর প্রাণহানিতে বিমান পরিবহন সেবা খাত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

এই যখন অবস্থা, তখন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো বিমান দুর্ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে আসল কারণ উদঘাটনে প্রয়োজন হয় দীর্ঘ সময়ের।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘আমরা মানুষ, যন্ত্র এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক দেখে থাকি। বলতে গেলে, এই তিনটির ওপর ভিত্তি করে আমরা দুর্ঘটনার বেশিরভাগ কারণ খুঁজে পাই। তাই শুধু সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমে দুর্ঘটনা তদন্ত করা ঠিক না। অনুমান করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা এক ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি, বৈরী আবহাওয়া এবং পাখির ধাক্কায় বেশিরভাগ বিমান বিধ্বস্ত হয় বলে মনে করা হয়। এমনকি ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনও বলছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর বিমানে পাখির আঘাতে ১৪ হাজারের বেশি ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, পাখির আঘাতে ল্যান্ডিং গিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঘটেছে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:০৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৭৩ জন দেখেছেন

৪২ দিনে ছয় বিমান দুর্ঘটনা, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

আপডেট : ০১:০৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাত্র ৪২ দিনে পাঁচ দেশে ভয়াবহ ছয়টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝড়লো ৩ শতাধিক আরোহীর। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পরপর দু’দিনে দুই দুর্ঘটনায় তিন আকাশযানের মোট ৭৪ আরোহীর প্রাণহানিতে নতুন করে আলোচনায় অ্যাভিয়েশন খাত। ঠিক কি কারণে এতো ঘনঘন বিমান দুর্ঘটনা ঘটছে তার আসল কারণ জানার দাবিও জোরালো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে লেগে যেতে পারে দীর্ঘসময়।

২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর। এক সপ্তাহেই ব্রাজিল, আজারবাইজান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্তত ২৩০ আরোহীর প্রাণহানির সাক্ষী হয় বিশ্ববাসী।

একমাস যেতে না যেতেই ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ সুদানে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ আরোহীর। এই ঘটনার একদিনের মাথায় ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে যাত্রীবাহী বিমান ও সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ৬৭ আরোহীর কেউই আর বেঁচে ফেরেননি। এই শোকের মধ্যেই দুইদিনের মাথায় দেশটির পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিধ্বস্তে শিশুসহ ৭ জনের সবাই মারা যান।

এ নিয়ে মাত্র ৪২ দিনে পাঁচটি দেশে ভয়াবহ ৬টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৩২০ জনের বেশি আরোহীর। সাম্প্রতিক সময়ে এতগুলো বিমান দুর্ঘটনা এর আগে আর কখনোই দেখেনি কেউ। এতে করে আকাশপথে যাত্রার নিরাপত্তা নিয়েও আতঙ্কে যাত্রীরা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কি দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে আকাশ পথ, নাকি ত্রুটির পাল্লা ভারী হচ্ছে বিমান পরিবহণ সেবায়।

যাত্রীদের একজন বলেন, ‘দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে ঘন ঘন ঘটেনি। উড়ে যাওয়া সত্যিই নিরাপদ। তবে যখন কোনো ভুলের কারণে মানুষ মারা যায় তখন তা ভয়াবহ।’

আরেকজন বলেন, ‘আপনি বিমানের ক্রুদের চেনেন না, পাইলটদেরও চেনেন না। কেউ কখনই জানেন না কী ঘটতে পারে। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সম্প্রতি এতো বেশি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দুশ্চিন্তারই কারণ।’

সম্প্রতি বিমান দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কি কারণে এতবেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে আকাশযান? এর জন্য কি আবহাওয়া, নাকি অন্য কিছু দায়ী?

জনমনে যখন এসব প্রশ্ন জমা হচ্ছে, তখনও সামনে আসেনি কোনটির আসল কারণ। তবে গত ২৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৯ যাত্রীর মৃত্যুর পেছনে, বার্ডস স্ট্রাইক বা পাখির আঘাতকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হয়। বলা হয়, বিধ্বস্ত বিমানটির ইঞ্জিনের ভেতরও নাকি পাখির পালক ও রক্ত পাওয়া গেছে। যদিও দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে ২৫ ডিসেম্বর বাকু থেকে রাশিয়াতে যাওয়ার পথে কাজাখস্তানের আকতাউয়ে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৯ আরোহীর প্রাণহানির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে আজারবাইজান। ইউক্রেনের ড্রোন ভেবে রাশিয়া গুলি চালালে যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে দাবি করা হয়। এ ঘটনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমা চাইলেও সরাসরি দায় স্বীকার করেননি।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে দু’দিনের ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনায় তিনটি আকাশযানের মোট ৭৪জন আরোহীর প্রাণহানিতে বিমান পরিবহন সেবা খাত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

এই যখন অবস্থা, তখন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো বিমান দুর্ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে আসল কারণ উদঘাটনে প্রয়োজন হয় দীর্ঘ সময়ের।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘আমরা মানুষ, যন্ত্র এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক দেখে থাকি। বলতে গেলে, এই তিনটির ওপর ভিত্তি করে আমরা দুর্ঘটনার বেশিরভাগ কারণ খুঁজে পাই। তাই শুধু সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমে দুর্ঘটনা তদন্ত করা ঠিক না। অনুমান করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা এক ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি, বৈরী আবহাওয়া এবং পাখির ধাক্কায় বেশিরভাগ বিমান বিধ্বস্ত হয় বলে মনে করা হয়। এমনকি ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনও বলছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর বিমানে পাখির আঘাতে ১৪ হাজারের বেশি ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, পাখির আঘাতে ল্যান্ডিং গিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঘটেছে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা।